Tuesday, November 4, 2025
HomeScrollAajke | বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর বুকে পাথর
Aajke

Aajke | বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর বুকে পাথর

শমীক ভট্টাচার্যের আহ্বান শুনে বিজেপি-কে ভোট দেবে বাম নেতা, কর্মী, সমর্থকরা?

‘‘সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের কাছে আবেদন করব, বুকে পাথর চেপে হলেও পদ্মফুলে এবার বাঁ’হাতে বোতামটা টিপুন। রাজ্যটাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান।’’ হ্যাঁ, একেই বলে মরিয়া, কাতর আবেদন। কেন? পিছনের গল্প হল এক পুরানো স্টাটিস্টিকস। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, তৃণমূল দল পেয়েছিল ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট, ভারতীয় জনতা পার্টি ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, ইতিহাসে প্রথমবার এই ভোট বিজেপি পেয়েছিল। হিসেব করলে মাত্র ৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেলেই কেল্লা নড়ে যেত। এদিকে বামেরা পেয়েছিল ৬.৩৩ শতাংশ ভোট। কাজেই বুকে পাথর রেখে যদি আর ৩ শতাংশ ভোট বিজেপির খাতায় জমা পড়ে, তাহলে পরিবর্তনের পরিবর্তন হবে। এই হিসেব কষেছেন আমাদের ইনটেলেকচুয়াল বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। কিন্তু তিনি সেই রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতোই এই হিসেবটা সেই সময় ধরেই কষেছেন। এদিকে তারপরে দু’দুটো বড় নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, ওনার কাছে সম্ভবত সেসব তথ্য নেই। এমনিতে বুকে পাথর চেপে নয়, বামেরা তৃণমূল ক্যাডার আর পুলিশ প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে কিছু না হলেও ২০ শতাংশ গিয়ে জুটেছেন বিজেপির সঙ্গে। অন্তত ভোট তো দিচ্ছেনই। কিন্তু বুকে পাথর নিয়েও তারপরেও যে অংশ বিজেপির দিকে গেলেন না, হাজার চাপ নিয়েও যাঁরা ‘আগে রাম, পরে বাম’ থিওরিকে না মেনেই ফেসবুকে হলেও নিজেদের দলটাকে ধরে রাখলেন, এবারে তাঁদের দিকে নজর পড়েছে শমীক ভট্টাচার্যের। কাতর আবেদন করেছেন, “বুকে পাথর রেখেও এবারে পদ্মফুলে ছাপ দিন।” সেটাই আজ বিষয় আজকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর বুকে পাথর।

হ্যাঁ, ২০১৯-এ হঠাৎই ঐ ‘আগে রাম, পরে বাম’ স্লোগান মাথায় রেখেই বুকে পাথর দিয়েই বহু বাম কর্মী, কিছু নেতারাও বিজেপিকেই ভোট দিয়েছিলেন। ভাবনাটা ছিল, ‘মমতা যাক, তারপর বুঝে নেব’। নেহাৎই বালখিল্য ভাবনা, কিন্তু সেটা ছিল, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, যাকে বলেছিলেন, ‘তপ্ত কড়াই থেকে চুলোর আগুনে’। কিন্তু সেই হঠাৎ উল্লম্ফন দেখে বিজেপির মনে হয়েছিল, তাঁরা তো বিজয়ের দোরগোড়ায়। বিজেপির একজন কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের নেতা ভাবলেন না যে, ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ হল কী করে? তাও আবার পশ্চিম বাংলাতে, এবং খেয়াল করলেন না যে, ঠিক সেই ভোটটাই কমেছে, যে শতাংশ বিজেপির বেড়েছে। তো শমীকবাবু না হয় রিপ ভ্যান উইঙ্কল, পরের ভোটগুলোর সময়ে ঘুমোচ্ছিলেন, আমরা তো নই, আসুন না সেই ভোটগুলোর হিসেবটা দেখি।

আরও পড়ুন: Aajke | আরজি কর ধর্ষণ খুন নিয়ে সিনেমা? কে করছেন? কাদের ইশারায়?

এর পরের, মানে ১৯-এর পরের ভোট ২১-এ, মুকুল অলরেডি বিজেপিতে, শুভেন্দু থেকে রাজীব বিজেপিতে গিয়েছেন, টলিপাড়া থেকে রুদ্রনীল সমেত আরও বেশকিছু কুচুবুলুরাও বিজেপিতে। মঞ্চে মঞ্চে যোগদান ইত্যাদির পরে তৃণমূলের ভোট প্রায় ৪৭.৯৪ শতাংশ, ভারতীয় জনতা পার্টি প্রায় ৩৮.১৩ শতাংশ, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর জোট প্রায় ৮.৬ শতাংশ, বামফ্রন্টের একক ভোট ৪.৭৩ শতাংশ, কংগ্রেসের প্রায় ২.৯৩ শতাংশ। মানে ২০১৯-এর গ্যাপ বেড়ে হল প্রায় ১০ শতাংশ। সংসদীয় হিসেবে বিরাট ব্যবধান। ২০২৪-এর হিসেব কী বলছে? লোকসভা, যেখানে নরেন্দ্র মোদির নামে ভোট হয়, আর তাতে বিজেপি প্রত্যেকটা রাজ্যে ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেশি ভোট পায়, সেখানে তৃণমূল প্রায় ৪৫.৭৬ শতাংশ, ২০১৯ সালের তুলনায় ২.৪৬ শতাংশ ভোট বেশি। ভারতীয় জনতা পার্টি প্রায় ৩৮.৭৩ শতাংশ, ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৯৭ শতাংশ ভোট কম। কংগ্রেস প্রায় ৪.৭২ শতাংশ, সিপিএম প্রায় ৫.৭৩ শতাংশ। মানে এমনকি লোকসভাতে যে ভোটের ব্যবধান ছিল ৩ শতাংশ, সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াল ৭ শতাংশ। এবারে আবার বিধানসভা, যে নির্বাচনে সিপিএম-এর কর্মীদের বুকে পাথর বেঁধে পদ্মফুলে ভোট দিতে বলেছেন শমীক ভট্টাচার্য। সমস্যা হল, হিসেব বলছে, এবারে ঐ ভোটের ব্যবধান কম সম করে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ হবে, এবং সিপিএম-এর ভোট কম করেও দু থেকে আড়াই শতাংশ বাড়বে। আসন কত পাবে জানি না, কিন্তু ভোট বাড়বে, কমবে না। তাহলে বিজেপির ভোট হবে ৩২ থেকে ৩৩ শতাংশ, ফারাক ১৩ থেকে ১৪ শতাংশের। হ্যাঁ, মিলিয়ে নেবেন এটাই হিসেব থাকবে। কাজেই বুকে পাথর বেঁধে বিমান বসু সমেত সবাই ভোট দিলেও শমীকবাবুর ইচ্ছে পূরণ হবে না। আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম যে, এক বিরাট সংখ্যার বাম কর্মী ভোটারেরা বিজেপিকে ভোট দেওয়া শুরু করেছে সেই কবেই, যার ফলে বিজেপির আজ এই বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট বাম কর্মী ভোটারদের ভোট কি আরও কমতে পারে? সেই অবশিষ্ট কর্মী নেতাদেরও এক অংশ কি সামনের নির্বাচনে শমীক ভট্টাচার্যের আহ্বান শুনে বিজেপিকে ভোট দিতে পারে?

একটু তলায় কান পাতলে শমীকবাবু জানতে পারতেন, বাম কর্মী নেতাদের এক অংশ মনে করেন বিজেপির ছত্রছায়ায় থেকে তাঁদের কোনও লাভ হয়নি, বরং সেই সময়ে তৃণমূলের যে নেতারা বিভিন্ন জেলাতে সিপিএম-এর উপর নেমে আসা সন্ত্রাসের মুখ ছিলেন, তারাই এখন বিজেপি। আবার বেশ কিছু সিপিএম নেতা কর্মী মনে করেন, এই মুহুর্তে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বরং তৃণমূলেই যোগ দেওয়া উচিত। সিপিএম দলের মধ্যের এক বড় অংশ মনে করেন, অন্ধ মমতা বিরোধিতার চেয়েও বিজেপি বিরোধিতাতে মন দিলে কিছুটা হলেও জমি উদ্ধার করতে পারবে। সব মিলিয়ে বিজেপি এই বঙ্গে এই নির্বাচনের পর থেকে এক অনিবার্য ক্ষয়ের মুখে পড়বে, যা রুখে দেবার ক্ষমতা আপাতত বিজেপির নেই।

Read More

Latest News