Tuesday, November 11, 2025
Homeপুজোশুধু বাঙালিরা নয় স্থানীয় ব্রিটিশরাও 'প্রয়াস' এর পুজোতে মেতে ওঠেন!
Prayas

শুধু বাঙালিরা নয় স্থানীয় ব্রিটিশরাও ‘প্রয়াস’ এর পুজোতে মেতে ওঠেন!

পুরোহিত প্রতিটি মন্ত্র ইংরেজিতে বোঝান, যাতে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত শিশু ও অতিথিরা সকলে অংশ নিতে পারে

লন্ডন: দেশ থেকে দূরে থেকেও দুর্গাপুজোর আবহ তৈরি হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, আর এই আনন্দে শামিল হবে ব্রিটিশ সমাজের নানা রঙ। এই স্বপ্নের নামই হলো ‘প্রয়াস’ ।  শরতের আকাশে মেঘভরা বিকেল, বছরটা ২০১৬। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কয়েকটি বাঙালি পরিবার একত্রিত হয়েছিলেন এক স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিবছর এখানকার পুজোতেও ব্রিটিশ নাগরিকরা এবং অন্যান্য বিদেশীরা পূজোতে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন:লন্ডনে বাঙালি চিকিৎসকদের দুর্গাপুজো যেন এক টুকরো কলকাতা আর বন্ধুত্বের ছায়া

শুরুর পথ মোটেও সহজ ছিল না। বাজেট নেই, সম্পদ নেই, শুধু একরাশ ইচ্ছে আর ভালোবাসা। তখনই এল অভিনব ধারণা পাঁচ দিনের পূজোকে এক দিনে মেলে ধরা। প্রতিমা আনা হলো কুমোরটুলি থেকে, কেবিন ব্যাগেজে করে। ভাড়া করা হলো বেডফোর্ডের কেম্পস্টন হলে এক ছোট্ট পরিসর, আর সেখানেই শুরু হলো প্রথম প্রয়াস দুর্গোৎসব। বিস্ময়করভাবে সেদিনই দেখা গেল—শুধু বাঙালি নন, স্থানীয় ব্রিটিশসহ বহু মানুষ মেতে উঠেছেন পুজোর আনন্দে।

আজ, সেই ছোট্ট শুরু থেকে প্রয়াস পা দিল দশম বর্ষে। এ পুজো ভৌগোলিক সীমানায় বাঁধা নয় কখনও বেডফোর্ডশায়ার, কখনও হার্টফোর্ডশায়ার, ঘুরে ঘুরে হয়েছে প্রতিবার। এবারের আয়োজন স্ট্রিলি ভিলেজ হলে, চিল্টার্ন হিলসের সবুজ পটভূমিতে। ভোরে প্রতিমা আনা থেকে শুরু হয় দিন। ঘট স্থাপন, কলাবউ স্নান, চক্ষুদান, ষষ্ঠী থেকে নবমীর অঞ্জলি আর দশমীর সিন্দুরখেলা, বিসর্জন ও ধুনুচি নাচ—সবই হয় নিয়মমাফিক। আর এক বিশেষ দিক হলো, পুরোহিত প্রতিটি মন্ত্র ইংরেজিতে বোঝান, যাতে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত শিশু ও অতিথিরা সকলে অংশ নিতে পারে।

ভোগে থাকে খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি, সঙ্গে কলকাতার রাস্তার স্বাদ ফিশ ফ্রাই, মোচার চপ, পাতিসাপটা। স্টলে জায়গা পায় ছোট ব্যবসা ও চ্যারিটি সংস্থা প্রতিবছরই থাকে যেখানে কলকাতার দুঃস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে।

শিশুরাও সমানভাবে যুক্ত থাকে মালাগাঁথা, দুর্বা সংগ্রহ, আঁকাআঁকি প্রতিযোগিতা, এমনকি STEM টেবিলে বিজ্ঞানের খেলা। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব—মহালয়ার গান, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক, তারপর জনপ্রিয় প্রয়াস ফ্যাশন ওয়ার্ক আর শেষে বলিউড-টলিউডের সুরে সবার উন্মুক্ত নাচগান। প্রতি বছরই নতুন থিম—কখনও পরিবেশ, কখনও প্লাস্টিকমুক্তি, এ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

ছোট দল, সীমিত বাজেট, ভিন্ন শহরে ভিন্ন আয়োজন—সবই চ্যালেঞ্জিং। তবু মা দুর্গার আশীর্বাদে প্রয়াস প্রতিবার জয় করে নিয়েছে সবার হৃদয়। আমাদের বিশ্বাস—কলকাতার পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবকে একদিনে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের সার্থকতা। আর তাই, সুর ভেসে আসে—“আসছে বছর আবার হবে।”

Read More

Latest News