বসিরহাট: উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার টাকি (Taki) শহর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ইছামতির পারে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য ঠিকানা। এখানকার জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে দুই বাংলার সেতুবন্ধনের গল্প। টাকির পুবের বাড়ির (Puber Jamidar Bari Durga Puja) এই পুজো ৩০৩ বছরেরও বেশি পুরনো। মহালয়া থেকে প্রতিপদ, প্রতিমা গড়া থেকে পঞ্চমীর আনুষ্ঠানিক পুজো, সবকিছুতেই মৃন্ময়ী রূপের মহিমা। টাকিতে যে জমিদার বাড়িগুলি ছিল, তার মধ্যে একমাত্র পুবের বাড়িতে দুর্গাপুজো এখনও হয়। স্থানীয় মানুষের কাছে এবং পর্যটকদের কাছে ও জমিদার বাড়ির পুজো হিসাবে পুবের বাড়ি আকর্ষণীয়। এই আবেগকেই পর্যটন ব্যবসার কাজে লাগাতে চাইছেন ঘোষ ব্যবসায়ীরা।
প্রাচীন লোককথা আর জমিদারি সংস্কৃতি মিশে রয়েছে প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠানে। রথের দিন কাঁচাম পুজোর মধ্য দিয়ে মায়ের আগমনী বার্তা শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকে প্রতিপদে পুজো শুরু হয় পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত এই পুজোর দালানকোঠায় বীর্যমান। পুজোর রীতির এখন কিছু বদল হয়েছে। যেমন, আগে ১০৮টি পাঁঠা ও ১টি মহিষ বলি হত। তা কমে আসে পরে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটি করে পাঁঠা বলি হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন হাঁড়িকাঠ, খাঁড়া এখনও আছে। তবে ২০১৮ সাল থেকে পশুবলি প্রথা বন্ধ করা হয়েছে। এখন অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো বলি হয় ওই হাঁড়িকাঠে। একচালা প্রতিমা হয়।
আরও পড়ুন: কেমন চলছে বাগনান বাঙালপুরের ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি?
ভিন রাজ্য, ভিন দেশ থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এই জমিদার বাড়িতে। এই পুজোর বিশেষ তাৎপর্য হল বিসর্জন পর্ব। বিজয়া দশমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দুই বাংলার মিলনমেলা। যতক্ষণ না টাকির পুবের বাড়ির প্রতিমা ইছামতিতে নিরঞ্জন হয়, ততক্ষণ নদীর ঘাটে অন্য জমিদার বাড়ি বিশেষ করে, রায়চৌধুরী, মুখোপাধ্যায়, চক্রবর্তী, ঘোষ বাড়ি সহ একাধিক বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের অনুমতি মেলে না। অবিভক্ত বাংলার এই রীতি আজও অটুট। পূর্বপুরুষদের নিয়ম মেনে দশমীর দিন মায়ের কাছে নিবেদন করা হয়, পান্তা ভাত কচু শাক চালতার চাটনি। এরপর শুরু বিসর্জনের শোভাযাত্রা। বাংলাদেশ থেকে বহু দর্শনার্থীরা এখানে আসেন প্রতিমা দর্শনে। দুই পাড়ের মানুষের একসঙ্গে বিজয়ার সাক্ষী থাকে ইছামতি নদী। আজও জারি রয়েছে দুই বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতি।
টাকি পূর্বের বাড়ি নতুন প্রজন্মের সদস্য শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন আমরা এখনো প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতি মেনে চলি বিশেষ করে ভিসার জন্য দিন মা পান্তা ভাত কচু শাক চালতার চাটনি বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে যান ২৪ বেহারার কাধে চড়ে তিন কিলোমিটার শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে টাকির রাজবাড়ি ঘাট মা তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে নিয়ম তিথি মেনে ইছামতি নদীতে প্রথম বিসর্জনায় তারপর একে একে জমিদার বাড়ি বারোয়ারী পুজোর ক্লাবের প্রতিমা গুলো নিরাঞ্জন হয়।
অন্য খবর দেখুন