পূর্ব বর্ধমান: একসময় নান্দুর গ্রামে পা রাখলেই কানে ভেসে আসত তাঁত বোনার ছন্দময় ঘটাং ঘটাং শব্দ। সেই কারণেই গ্রামটির পরিচিতি ছিল ‘তাঁতীপাড়া’ নামে। কিন্তু সময়ের স্রোতে আজ সেই পরিচয় প্রায় হারিয়ে গেছে। পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার বর্ধমান-২ ব্লকের বড়শুল এলাকার বৈকুণ্ঠপুর দু’নম্বর পঞ্চায়েতের অধীন নান্দুর গ্রামে এখন কার্যত বিলুপ্তির পথে প্রাচীন তাঁত শিল্প (District news)।
এই গ্রামে একসময় একাধিক পরিবার তাঁত বুননের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মাত্র একটি গুই পরিবার এখনও কোনওভাবে এই ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে আছে। তবে তারাও আর পুরোপুরি ঐতিহ্যবাহী তাঁত বুননের কাজে যুক্ত নন। লাভের অভাব ও কাঁচামালের সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে তাঁরা এখন খাদির জামা তৈরির দিকে ঝুঁকেছেন।
আরও পড়ুন : বাংলায় কাজ, উপযুক্ত পারিশ্রমিক—সবুজ সাথী সাইকেল গড়ছেন বিহারীরা
স্থানীয় তাঁতিদের অভিযোগ, তাঁত শিল্পে টিকে থাকতে গেলে সুতোসহ বিভিন্ন কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন জোগান প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে সেই জোগান যেমন অনিশ্চিত, তেমনই উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্থিক অনটন। ফলে একে একে গ্রাম ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁতিরা।
নান্দুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা আক্ষেপের সুরে বলছেন, “যে গ্রামে ঢুকলেই তাঁতের শব্দ শোনা যেত, আজ সেখানে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।” একসময়ের ব্যস্ত তাঁতীপাড়া আজ যেন স্মৃতির পাতায় বন্দি এক ইতিহাস।
স্থানীয়দের মতে, সরকারি সহায়তা ও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে এই গ্রামেই নয়, গোটা জেলাতেই ধুঁকছে তাঁত শিল্প। দ্রুত উদ্যোগ না নেওয়া হলে নান্দুর গ্রামের শেষ তাঁতি পরিবারটিও হয়তো একদিন এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে—আর সঙ্গে হারিয়ে যাবে বাংলার এক মূল্যবান ঐতিহ্য।
দেখুন আরও খবর:







