ওয়েবডেস্ক- বহুল আলোচিত ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার (Primary teacher recruitment case) শুনানি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগে (32,000 Teachers Recruited) কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বলেন (State Advocate General (AG) Kishore Dutta) , রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ৩২০০০ নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। শুধুমাত্র ৩৬০টি নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।’’ রাজ্যের তরফে জানানো হয়, মেধা তালিকা প্রকাশে কোনও অনিয়ম হয়নি। ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আইন মেনেই হয়েছিল। সেই আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করে পর্ষদ। এর পর জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিল পর্ষদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী জেলার ভিত্তিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
,রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বোর্ডের অবস্থান স্পষ্ট করেন। বিচারক মূলত দুটি মূল বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এস. বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির ভূমিকা এবং বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের দাখিল করা চার্জশিটের প্রতিক্রিয়া। অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানান যে, ৪ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখের বোর্ড রেজুলেশনের মাধ্যমে এস. বসু রে অ্যান্ড কোম্পানিকে কিছু প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয় ছিল এবং এতে প্রায় ১.২৫ লক্ষ প্রার্থীর আবেদনপত্র বাছাই, জেলাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করা এবং সাক্ষাৎকারের তালিকা এবং উপস্থিতি পত্র তৈরির মতো কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এজি জোর দিয়ে বলেন যে এই কোম্পানিকে প্রার্থী মূল্যায়ন বা মূল্যায়নের জন্য কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ প্রশাসনিক এবং সহায়ক। সিবিআই চার্জশিটের জবাবে, এজি বলেছেন যে এস. বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে শুধুমাত্র মুদ্রণ এবং বিন্যাসের কাজের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। শুনানির সময় বিচারক যখন নিয়ম ৭ উত্থাপন করেন, তখন এজি, যদিও প্রথমে কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলেন, পরে প্রমাণ জমা দেন যে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিআই, এসআই এবং এআই অফিসারদের সমন্বয়ে উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এস. বসু রে অ্যান্ড কোম্পানি এর জন্য দায়ী ছিল না।
এই তথ্যের ভিত্তিতে, বিচারক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে কোম্পানিটি কেবল প্রস্তুতিমূলক কাজে জড়িত ছিল, মূল্যায়নে নয়। বালুরঘাটের একটি উদাহরণ তুলে ধরে, এজি ব্যাখ্যা করেন যে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াটি এই উপ-কমিটিগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং ডিএম/ডিআই-কে নোটিশ জারি করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে এস. বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি মূল্যায়নের সাথে জড়িত ছিল না।
সুবীর স্যানাল, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আইনজীবী বলেন, একজন নির্দিষ্ট প্রার্থী নির্দিষ্ট জেলার আবেদন করল। সে যে কোনও একটি জেলা নির্বাচিত করল সেই ভিত্তিতে আবেদন করল। লাস্ট এমপ্যানেল ক্যান্ডিডেটদের নম্বর আলাদা হবে।
বর্ষীয়ান আইনজীবী মীনাক্ষী অররা বলেন, ১৯৫১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকতে হয়। একক বেঞ্চ প্রসিকিউটরের কাজ করেছিল। কারণ কোনও তথ্য ছিল না। কোনও নমুনা উপাদানের ওপর ভিত্তি করা হয়েছিল। ০. ৩ শতাংশর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনুমান করে নেওয়া হয়েছে। তিনি একজন ইনভেস্টিগেটর, প্রসিকিউটরের কাজ করতে পারে না। তাই এতজনের চাকরি এভাবে বাতিল করার গ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সকলে কোয়ালিফায়েড। কাউকে গ্রেস মার্ক দিতে হয়নি। ৯৪ জনের ক্ষেত্রে আলাদা। এরা কোয়ালিফায়েড না কিন্তু প্রশিক্ষিত। এই মামলায় ওএমআর শিটে ম্যানিপুলেশন এর বিষয়ই নেই। তদন্তের ক্ষেত্রে এই প্রার্থীদের নিয়ে কিছু উঠে আসেনি। একক বেঞ্চ তাঁর পর্যবেক্ষনে সংবাদপত্রের কথা উল্লেখ করেছিল। এটা সর্বদা ভিত্তিযোগ্য উপাদান নাও হতে পারে।
আরও পড়ুন- নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কখন দেওয়া হবে ১০ নম্বর? প্রশ্ন বিচারপতি সিনহার
আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রিলাকসেশন অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর পর। দুর্নীতি এখন একটা স্পইসি ওয়ার্ড হয়ে গিয়েছে। বাংলায় কথা আছে চাটনি। দুর্নীতি প্রমাণ করতে হয়। সিবিআই সিরিয়াস হলে মামলা ৪-৫ বছর ধরে পড়ে থাকতো না। ট্রায়াল হয়নি। আদালতকে দেখতে হবে দুর্নীতি হয়েছিল কিনা। দুর্নীতি হতে পারে তার জন্য প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল কিনা সেটা দেখা জরুরি। সকলের সুযোগ হয়না আদালত আসার। কিন্তু রাজ্য প্রতিনিধিত্ব করলে মানুষ আশা রাখে। একক বেঞ্চ আইনানুযায়ী পদক্ষেপ করেছিল কি? এটাই তো প্রশ্নের। ১, ৬০ বা ৭০ হাজার জনের জীবন নির্ভর করছে।
প্রবীণ আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, ৪২৯৪৯ মোট শূন্যপদ। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১০ শতাংশ প্যারা টিচার ২৭৭০ নিয়োগ। আমাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও বক্তব্য রাখেনি। এদের টিচিং এক্সপেরিয়েন্স হলেই চলে। ফ্রাকশন সরিয়ে দিলেও আমাদের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না। এক্ষেত্রে ম্যানিপুলেশণের প্রশ্নই আসেনা। মুড়ি মুড়কি যেমন এক করা যায় না তেমন এদের সঙ্গে এক গোত্রে প্যারাটিচারদের ফেলা যায়না।
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্য বলেন, রাজ্যের থেকে এস বসু রায় কোম্পানির নিয়োগের আগে অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
দেখুন আরও খবর-







