শুরু করছি শুধু একটা প্রশ্ন দিয়ে। একটাই প্রশ্ন কিন্তু, মন দিয়ে শুনবেন। কারণ প্রশ্নটা একটু ধাঁধার মতন। আর সেটা হল – বিজেপি ছেড়ে কেন একজন তৃণমূলে যোগদান করেন? পদ্মের বদলে কেন হাতে তুলে নেন ঘাসফুলের নিশান? কেন এই ফুল বদল? এর সোজা কয়েকটা উত্তর আছে। যেমন ধরুন, ‘বিজেপিতে থেকে কাজ করতে পারছিলাম না’, বা ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে’ – এরকম আরকি।
সত্যি কথা। কাজ না থাকলে কাজের মানুষের চলে কি করে? বিজেপির নেতারা যে কর্মবীর, কাজ কত ভালবাসেন, সে তো আমরা জানি। শুধু ওই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিন্দামন্দ করতে গিয়ে সময় পান না, এই যা। আর অনুপ্রেরণা? এও আমরা খুব ভালো করেই জানি, ভোটের টিকিটই হল বিজেপি নেতাদের আসল অনুপ্রেরণা। তাই বলে তৃণমূল? তৃণমূল যে টিকিট দেবে তার নিশ্চয়তা আছে? না, তবে আশা আছে। বিজেপিতে তো সেটুকুও নেই।
আর তৃণমূল? তারাই বা এদের নিচ্ছে কেন? এই দল ছাড়া বিজেপিদের? এর উত্তর তো চাণক্য নীতিতেই আছে – ‘সাম দান দন্ড ভেদ’ বা ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’। কিন্তু আসল কথা এসব নয়। অন্য সময় দল ছাড়লে যদিও বা তেমন কিছু চোখে পড়ে না, ভোটের সময় দল ছাড়লে কিন্তু মানুষের চোখে পড়বেই। জাগবে সন্দেহ, তাহলে কি টিকিট পেল না বলে বিজেপি ছেড়ে গেল? আপনার হয়তো মনে হচ্ছে এটাই আসল কথা – ছাড়ব না ধরব? ভোটবাজারে উভয় সংকটে বিজেপি নেতা। কথা নয়, না স্যার, না ম্যাডাম, এটাও কিন্তু নয়। আসল কথা হল সুনীল বনশল। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এটুকু বললে কিছুই বলা হল না।
আরও পড়ুন: Aajke | ব্রাত্য বাবু, একটু শিখুন মমতা ব্যানার্জীর কাছ থেকে
টানা ৮ বছর উত্তরপ্রদেশে সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছেন বনসল। ঈর্ষনীয় সাফল্য তাঁর। উত্তরপ্রদেশ যোগী-রাজ কায়েমের আসল কারিগর তিনি। সেই সুনীল বনসলকেই এবার পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তেলঙ্গানা ও ওড়িশার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও সুনীল বনসলকে সঁপেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সূত্রের খবর, একটানা উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সংগঠন সামলে সুনীলও চাইছিলেন, তাঁকে অন্য রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হোক। আর তাই হল। বিজেপির সবচেয়ে দক্ষ স্ট্র্যাটেজিস্টকে দেশের সেই সব রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হল, যেখানে বিজেপির সংগঠন সবচেয়ে দুর্বল, বাংলা, ওড়িশা ও তেলঙ্গানা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ কথাটা মেনেই নিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সংগঠন দুর্বল। কিন্তু সুনীল বনশল যা বলছেন, তাতে কি এখানে বিজেপির শক্তি বাড়বে? বনসল বলছেন, ‘এক ব্যক্তি এক পদ’। আর সেখানেই গন্ডগোল। কারণ বিজেপির নেতৃত্ব চাইছে, যারা সংগঠনের পদে থাকবেন তারা সংগঠন সামলাবেন, ভোটের টিকিট পাবেন না। অন্যদিকে যারা ভোটের টিকিট পাবেন, তারা সংগঠনিক পদ পাবেন না। আর এখানেই গোলমাল বেঁধেছে। ‘টিকিট না দিলে খেলব না,’ এরকমই মনোভাব বঙ্গ-বিজেপির বহু নেতার। উলটো উদাহরণও আছে। অগ্নিমিত্রা পাল বা দীপক বর্মণ। এরা সাংগঠনিক দায়িত্বেও আছেন আবার বিধায়কও। তাই যদি হয় তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না কেন? এই নিয়েই গন্ডগোল বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে।
বাকি থাকল কী? ওই যে, বিজেপির সংগঠন। নির্বাচন দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে, এখনও বিজেপির রাজ্য কমিটি ঘোষণা হল না। দিল্লি চলে গেলেন শমীক, তাও হল না। শোনা যাচ্ছে, পুরানো রাজ্য কমিটি থেকে ৬৫ শতাংশ কমিটি মেম্বার নেওয়া হবে, আর বাকি ৩৫ শতাংশ নেওয়া হবে কাজ দেখে। যাদের মধ্যে ‘আদি বিজেপি’রা অগ্রাধিকার পাবেন। সব ঠিক আছে। কিন্তু আসল কথা হল, নভেম্বর মাস পেরিয়ে যেতে চলল, রাজ্য কমিটি আর কবে ঠিক হবে? এই নড়বড় সংগঠন নিয়ে ভোটে জিততে পারবে বিজেপি? আসুন দেখি মানুষ কি বলছেন।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না’। বঙ্গ বিজেপির তাই হয়েছে। শুভেন্দু স্বপ্ন দেখছেন, সুকান্ত স্বপ্ন দেখার ভান করছেন, কেন না তিনি শুভেন্দু নন, ভালো করেই জানেন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে আসছে না। বাকি থাকলেন শমীক। তিনি বোধহয় এর মধ্যেই আবার কবিতা পড়তে শুরু করেছেন। তাহলে বঙ্গ বিজেপির হাতে থাকল কী? কেন সুনীল বনশল? কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। উত্তরপ্রদেশে ভোট করানোর বিপুল অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলায় এসেছেন তিনি। মুশকিল একটাই – বাংলা ‘গো-বলয়’ নয়। তাহলে কি বনসলই বানচাল করবেন বাংলায় বিজেপির ভোট? সত্যিটা হল, ভোটের টিকিট নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করাটাই বনশলের কাল হল বোধ হয়।
দেখুন ভিডিও:







