Monday, September 29, 2025
spot_img
HomeBig newsবৃষ্টিহীন সপ্তমী, জনজোয়ারে ভাসছে কল্লোলিনী তিলোত্তমা
Durga Puja 2025

বৃষ্টিহীন সপ্তমী, জনজোয়ারে ভাসছে কল্লোলিনী তিলোত্তমা

চেতলা-লেবুতলা, সপ্তমীর সকাল থেকেই মানুষের ঢল মণ্ডপে মণ্ডপে, যানজটে ভোগান্তি মহাত্মা গান্ধী রোডে

কলকাতা: সপ্তমীর সন্ধ্যায় জনজোয়ারে ভাসছে কলকাতা। আজ মহাসপ্তমী (Durga Puja 2025, Maha Saptami)। সপ্তমীর সকাল-দুপুর রোদ্দুরে ঝলমল। বৃষ্টিহীন আশ্বিনে যেমনটা হয়ে থাকে, এ-ও ঠিক তা-ই। সপ্তমীতে রীতি মেনে উমার আরাধনা। কলকাতা থেকে জেলা, বারোয়ারি, বনেদি বাড়ি থেকে আবাসন। শারদোৎসবে মাতোয়ারা। ঢাকের বোলে নাচ। প্যান্ডেল হপিং। খটখটে রোদ মাথায় করে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে আট থেকে আশি। কলকাতার নানা প্রান্তে ঠাকুর দেখার ঢল নজরে পড়ছে। সকাল থেকে উপচে পড়তে থাকে শহরের বিখ্যাত পুজো মণ্ডপগুলোয় (Crowds Increasing Durga Puja Mandap)। এ বছরও মহাসপ্তমীক সন্ধেয় ভিড় বাড়ছে শ্রীভূমি, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, আহিরীটোলা যুবকবৃন্দ, হাতিবাগান সর্বজনীন, ত্রিধারা থেকে শুরু করে সুরুচি সঙ্ঘে। সক্কলের একটাই টার্গেট, বৃষ্টি পুজোর আনন্দ মাটি করার আগে যতগুলো সম্ভব মণ্ডপে পৌঁছে ঠাকুর দেখে নেওয়া।

 

ষষ্ঠীর মতো সপ্তমীর সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। শহরের বড় পুজোগুলি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন আট থেকে আশি। ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। দুপুর থেকেই ভিড় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যায় ত্রিধারায় ঠাকুর দেখার জন্য পড়েছে লম্বা লাইন!ভিড় সামলাতে বসল ব্যারিকেড। ভিড়ের চাপে তিলধারণের জায়গা নেই। বালিগঞ্জ কালচারাল থেকে ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোয় যেতে গেলে দেশপ্রিয় পার্ক হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। প্রথমে দড়ি দিয়ে রাস্তা বন্ধ ছিল। রাত বাড়তেই ভিড় মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রতি বছরের মতো থিমে শ্রীভূমি একাধিক মণ্ডপকে টেক্কা দিচ্ছে। এ বার সেখানে হয়েছে নিউ জার্সির অক্ষরধাম। উত্তর কলকাতার পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু টালা প্রত্যয়। অভিনব এই মণ্ডপসজ্জা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। আট থেকে আশি মা দুর্গার দর্শনে বেরিয়ে পড়েছেন। কলকাতায় এ বছরের দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। পুজো শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেখানকার থিম ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। সেখানকার ভিড় চোখে পড়ার মতো। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে কিন্তু ভিড় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

 

শততম বর্ষে উত্তর কলকাতার সিমলা ব্যায়াম সমিতির ভাবনা ‘স্বদেশীয়ানার বিপ্লবতীর্থ’। শিল্পী শুভদীপ মজুমদার। মণ্ডপের দেওয়ালে ফুটে উঠেছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। সেই মণ্ডপ দর্শনে ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষ। হাতিবাগান নবীন পল্লীর এ বারের পুজোর ভাবনা ‘আমাদের দেশ,আমাদের দুর্গা’। বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছিল প্যান্ডেলের একাংশ। যে হেতু মঞ্চটা একটু উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিল, তাই প্রতিমার ক্ষতি হয়নি। সে সব সামলে উঠে চেনা ছন্দে ফিরেছে উত্তর কলকাতার এই পুজো। দুপুরে টালা প্রত্যয়ের পুজো দেখতে গেলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

ভিড়ের নিরিখে পিছিয়ে নেই উত্তর কলকাতাও। কাশী বোস লেনের পুজোয় ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ বছরের থিম ‘পাকদণ্ডী’। ম্যাডক্স স্কোয়্যারের পুজোর এ বার ৯০তম বর্ষ। ওড়িশার মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। ডাকের সাবেকি সাজে সেজেছে প্রতিমা। প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনারপ্থিদের ভিড় জমেছে মণ্ডপে। দুপুর থেকেই জনস্রোত দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সংঘে। রাত বাড়লেও মানুষের উৎসাহে এতটুকু ঘাটতি নেই। বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিড়। চেতলা অগ্রণীর এবারের পুজোর থিম ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’, যা প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ বসুর জন্মশতবর্ষে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য। মণ্ডপসজ্জাতেও তাক লাগিয়েছে তারা। সকাল থেকেই ভিড় উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে। এ বছরের থিম ‘পাকদণ্ডী’। ষষ্ঠীতেও ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল উদ্যোক্তাদের। একই চিত্র দেখা গেল সপ্তমীতেও।

আরও পড়ুন: শহরজুড়ে জনজোয়ার, সাদার্ন অ্যাভেনিউতে দুর্গাপুজো দেখতে হাজির রাজ্যপাল

অন্যদিকে দক্ষিণের অন্যতম জনপ্রিয় দুর্গাপুজো হাজরা পার্কের পুজো। এ বার এই পুজো ৮৩ বছরে পদার্পণ করল। এ বছরের থিম ‘দৃষ্টিকোণ’। তবে এ বারের চমক হল, এই মণ্ডপের প্রতিমা ৩০ ফিট লম্বা! এই প্রতিমা দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন হাজরা পার্কে। দক্ষিণ কলকাতার বড়িশা ক্লাবের এ বারের পুজোর থিম ‘শূন্য পৃথিবী’। প্রতিমা দর্শনের ফাঁকে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে তা দেখে নিচ্ছেন সকলে। এ বার তিন কোটি রুদ্রাক্ষ দিয়ে সাজানো হয়েছে চেতলা অগ্রণীর পুজোমণ্ডপ। একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো পা রেখেছে ৮৩তম বর্ষে। শিবমন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। শয়ে শয়ে দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন মণ্ডপে। সিংহী পার্কের পুজোর এ বার ৮৪তম বর্ষ। থিম ‘নব চেতনায় অকালবোধন’। এই পুজো দেখতে মণ্ডপে ভিড় চোখে পড়ার মতো।

আবহাওয়া দফতর বলছে, সপ্তমীতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে আজ চুটিয়ে ঠাকুর দেখা চলতেই পারে। হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় ছাতা নিয়ে বেরোনো ভাল। উত্তর-দক্ষিণে রাত যত বাড়ছে ভিড়ও তত বাড়ছে। কলকাতায় যেমন ভিড় দেখা যাচ্ছে, তেমনই জেলার পুজোতেও ভিড় চোখে পড়ার মতো। রাত যত বাড়বে, কলকাতার মতোই জেলার পুজোগুলিতেও ভিড় আরও অনেকটাই বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

অন্য খবর দেখুন

Read More

Latest News