‘২০২৫’ সুখে দুঃখে একটা বছর পার। এবার ২০২৬। গোটা বিশ্বের কাছেই নতুন বছর শুভেচ্ছা, ভালোবাসা, আশীর্বাদ নিয়ে আসবে সেই ইচ্ছে নিয়ে আবার একটা নতুন বছরের হাত ধরে চলার পালা। ২০২৫-এ আমরা বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললাম। ঝড়ে গেল তাঁরা। যাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি ভারতের মুখ সমৃদ্ধ করেছে, এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্ব আজ না ফেরার দেশে। তাঁদের শ্রদ্ধাঞ্জলী।

ধর্মেন্দ্র- (১৯৩৫-২০২৫) Dharmendra- বলি জগতের সবচেয়ে হার্ট ব্রেকিং খবর অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণ। ২৪ নভেম্বর প্রয়াত হলেন এই কিংবদন্তী অভিনেতা। যাঁর অভিনয় শৈলী বলার অপেক্ষা রাখে রাখে না। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি, ৮৯ বছর বয়সে জীবনাবসান। বলিউডের অন্যতম সেরা সুপারস্টার, যাঁর কর্মজীবন কয়েক দশক ধরে রোমান্স, অ্যাকশন, কমেডি এবং ড্রামা—সব ধারাতেই বিস্তৃত ছিল। সিনেমার পরিবর্তনশীল যুগগুলোতেও তিনি প্রাসঙ্গিক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি জীবন্ত আর্কাইভের সমাপ্তি ঘটল।

আসরানি- (১৯৪১-২০২৫) Asrani- দুর্দান্ত অভিনয়, বলি জহতের অন্যতম কমেডিয়ান। শোলে সিনেমায় তাঁর অসাধারণ অভিনয় আজও দর্শকদের মধ্যে দাগ কাটে। ২০ অক্টোবর ৮৪ দুনিয়াকে বিদায় জানান তিনি। খুব কম কৌতুক অভিনেতাই হাসির এমন দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। শোলে সিনেমায় আসরানি গলায় সেই বিখ্যাত ডায়ালগ ‘হাম আংরেজ কি জামানে কা জেলারে হায়’ চিরকাল মানুষের হৃদয় থাকবে।

মনোজ কুমার- (১৯৩৭-২০২৫) (Monoj Kumar)- আমরা হারিয়ে ফেললাম বলিউডের অন্যতম সাদা-কালো সময়ের স্টার আইকন মনোজ কুমারকে। ৮৭ বছর বয়সে ৪ এপ্রিল প্রয়াত হন তিনি। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ দশকের দেশাত্মবোধক সিনেমাগুলিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের কাছে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চিত্র পরিচালক থেকে তারকা, মনোজ কুমারের প্রয়াণ বলিউড জগতের অপূরণীয় ক্ষতি।

দেব মুখার্জি- ( ১৯৪১-২০২৫) (Dev Mukherjee)- গত ১৪ মার্চ চলে যান বর্ষীয়ান অভিনেতা দেব মুখার্জি। বয়স হয়েছিল ৮৩। তিনি এমন একটি প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা খ্যাতির চেয়ে শিল্পকে বেশি মূল্য দিত। যদিও তিনি কখনও শীর্ষ তারকা ছিলেন না, কিন্তু তার উপস্থিতি ছিল চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের ভারে পূর্ণ। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা অয়ন মুখার্জির বাবা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

শেফালি জরিয়ালা- (১৯৪২-২০২৫) (Shefali Jariwala)- ২০২৫ এর অন্যতম হার্ট ব্রেকিং খবর, মডেল, তারকা শেফালির চলে যাওয়া। তাঁর ‘কাঁটা লাগা’ গানের সঙ্গে নৃত্য শৈলী সেই সময়ের নতুন প্রজন্মের মধ্যে হিল্লোল তুলেছিল। ২০০০- দশকের শুরুর দিকে পপ সংস্কৃতির এক প্রতীকে পরিণত হন। গত ২৭ জুন মাত্র ৪২ বছর বয়সেই এই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন তিনি। টেলিভিশনের তাঁর রিয়েলিটি শো এবং জনসমক্ষে উপস্থিতির মাধ্যমে নিজেকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার আকস্মিক মৃত্যু বিনোদন জগতকে নাড়িয়ে দেয়।

পঙ্কজ ধীর- (১৯৫৬-২০২৫) (Pankaj Dheer)- এক কথায় সবাই তাঁকে চেনে মহাভারতের ‘কর্ণ’ হিসেবে। তাঁর অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ করেছিলেন তিনি, মানুষের কাছে পঙ্কজ ধীর চিরকাল ‘কর্ণ’ হয়েই বেঁচে থাকবেন। ১৫ অক্টোবর ৬৮ বছর বয়সেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দেন।

ধীরাজ কুমার- (১৯৪৪-২০২৫)- ( Dheeraj Kumar)- ১৫ জুলায় না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বলি জগতের তারকা, প্রযোজক ধীরাজ কুমার। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। পৌরাণিক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ধ্রুপদী বলিউড এবং ভারতের টেলিভিশন বিপ্লবের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেছিলেন। তাঁর কর্মজীবন গল্প বলার একাধিক যুগ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান’ চলচ্চিত্রের জন্য এবং ‘ওম নমঃ শিবায়’ ও ‘আদালত’-এর মতো টেলিভিশন শো প্রযোজনা করার জন্য পরিচিত ছিলেন।

সতীশ শাহ- (১৯৫১-২০২৫)- (Satish shah)- ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন সতীশ শাহ। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে, বিশেষ করে ‘সারাবাই ভার্সেস সারাবাই’-এর জন্য তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন এবং তিনি সূক্ষ্ম কমেডিতে পারদর্শী ছিলেন। তার অভিনয় প্রমাণ করেছে যে সংযমও অতিরঞ্জনের মতোই শক্তিশালী হতে পারে। তিনি কখনো কণ্ঠস্বর উঁচু না করেও দৃশ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন।

পীয়ুষ পান্ডে- (১৯৫৫-২০২৫) (Piyush Pandey)- বিজ্ঞাপন জগতের স্টার আইন ছিলেন তিনি। গত ২৪ অক্টোবর ৭০ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় প্রচারণার মাধ্যমে ভারতের বিজ্ঞাপন শিল্পকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। সৃজনশীল গল্প বলার ক্ষমতা এবং নেতৃত্বের জন্য শিল্প জগৎ আজও তাকে স্মরণ করে।

প্রীতিশ নন্দী- (১৯৫১-২০২৫) (Pritish Nandy) বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন প্রীতিশ নন্দী। একদিকে কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরদিকে প্রখ্যাত সাংবাদিক। ৮ জানুয়ারি প্রয়াত হন তিনি। তিনি সুর, হাজারোঁ খোয়াইশেঁ অ্যায়সি এবং পেয়ার কে সাইড এফেক্টসের মতো চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বহুমুখী কর্মজীবন তাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল।

শিবরাজ পাটিল- (১৯৩৫-২০২৫) (Shivraj Patil)- একজন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২৬/১১ হামলা সময় সময় দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একাধিক দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। একটা সময় ছিলেন লোকসভার স্পিকার। বার্ধক্যজনিত অসুস্থায় ভুগছিলেন তিনি। ৯ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের লাতুরে নিজ বাসভবনে ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পঞ্জাবের রাজ্যপাল ও চণ্ডীগড়ের প্রশাসকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন।

শিবু সোরেন- (১৯৪৪-২০২৫) (Shibu Soren)- ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা। গত ৪ অগাস্ট দিল্লিতে প্রয়াত হন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮১। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী উপজাতি নেতা, যিনি পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং তিন মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য কৃতিত্বের অধিকারী।

বিজয় রূপানি (১৯৫৬-২০২৫)- (Vijay Rupani) আহমেদাবাদের অভিশপ্ত বিমান দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নেয় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির। গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ১৭১ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৬৮। তিনি লন্ডনগামী বিমানটিতে ছিলেন, যা ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয় এবং বিমানে থাকা একজন ছাড়া বাকি সবাই নিহত হন। গুজরাট শোক পালন করে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

কমরেড ভিএস অচ্যুতানন্দন (১৯২৩-২০২৫)-Comrade V.S. Achuthanandan)- প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা এবং কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ১০১ বছর বয়সে ২১ জুলাই মারা যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি তিরুবনন্তপুরমের পাত্তম এসইউটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে অচ্যুতানন্দননের দীর্ঘ কর্মজীবনে ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে একাধিক মেয়াদে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভেস পেজ- (১৯৪৫-২০২৫)- (Vece Paes) ক্রীড়া জগতের কিংবদন্তী। ভারতের প্রাক্তন অলিম্পিক ফিল্ড হকি মিডফিল্ডার এবং ক্রীড়া চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ভেস পেজ। দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। ১৪ আগস্ট কলকাতায় ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে একটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন এবং পরে একজন ক্রীড়া চিকিৎসক হয়েছিলেন। তিনি টেনিস কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজের বাবা ছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিস-(১৯৩৬-২০২৫) ( (Pope Francis-)- ২০২৫ সালের অন্যতম শোকের মুহূর্ত পোপ ফ্রান্সিস-এর চলে যাওয়া। ৮৮ বছর বয়সে ২১ এপ্রিল জীবনাবসান হয় তাঁর। মস্তিষ্কের স্ট্রোকের পর ভ্যাটিকানে তাঁর বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম লাতিন আমেরিকান এবং জেসুইট পোপ। দরিদ্রদের প্রতি তাঁর মনোযোগ এবং চার্চ সংস্কারের প্রচেষ্টার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য একটি পোপীয় সভা আহ্বান করা হয় এবং তিন দিন পর পোপ লিও চতুর্দশ নির্বাচিত হন।

খালেদা জিয়া (১৯৪৫-২০২৫) (Khaleda Zia)- প্রয়াত খালেদা জিয়া। বছর শেষেই চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগভোগ ছাড়াও একাধিক সমস্যা বাসা বেঁধেছিল তাঁর শরীরে। শেষে কয়েকটা দিন চিকিৎসায় সেভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকার (Dhaka) একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন বিএনপি নেত্রী। চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।






