ওয়েব ডেস্ক: শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের (International Mother Language Day) সকাল। একের পর এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গাড়ি রাজারহাট রোডে এসে থামছে। মা-বাবা কচি মুখগুলোকে বাসে তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। সদ্য ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে বাসে উঠছে প্রাক প্রাথমিকস্তরের ছাত্রছাত্রীরা। আটঘরায় একটি সরকার পোষিত স্কুলে উদযাপনের (Celebration) জন্য নতুন পোশাকে সেজে বিদ্যালয় চত্বরে ঘুরতে দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। রাজারহাট থেকে মধ্য কলকাতায় বাসে আসার পথে দোকানের সাইনবোর্ডে চোখ খুঁজছিল বাংলা লেখা। ইংরেজির ভিড়ে দৈন্যদশা! তারপরই অফিস ঢোকার মুখে টিভিতে খবরে দেখাচ্ছিল কলকাতা হাইকোর্টে এক বিচারপতির এজলাসে বাংলাতে হয়েছে শুনানি।
বাংলাদেশ ভবনের পরিবর্তে বিশ্বভারতীতে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে অংশ নেন বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরাও (Students)। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকায় শহিদমিনারে বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus) শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে টালবাহানা চলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। শেষমেষ তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের পাঁচিশ বছরে যে জৌলুস হতে পারত এদিন, তা দেখা যায়নি বাংলাদেশে। ঢাকায় ভাষা দিবসে শহিদ বরকতের গ্রাম মুর্শিদাবাদের বাবলাগ্রাম সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হল গানে, কবিতায়। দেশপ্রিয় পার্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যিক সুবোধ সরকার, কবি জয় গোস্বামী। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতেও এই দিনটি পালিত হয়েছে সমারোহে।
আরও পড়ুন: ২১শে ফেব্রুয়ারি ও কয়েকটি তাজা প্রাণের বলিদান
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে সরকারি মর্যাদার দাবিতে ঢাকার রাজপথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। পাকিস্তান সরকারের গুলিতে প্রাণ হারান অনেকে। বলা হয় পরবর্তীতে বাংলাদেশ গড়ে ওঠার সূত্রপাত ছিল ওটাই। পাঁচজন শহিদের মর্যাদা পায়। পরে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর ওই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেয় রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তার উদযাপন হচ্ছে। এখন ২৮ কোটি বিশ্ববাসী এই ভাষায় কথা বলেন। এবছর গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের সক্রিয়তা বেড়েছে বাংলাদেশে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী মহাসমারোহে পালিত হয়েছে ঢাকায়। বাংলা নামে যে দেশে ২৫-এ পা দেওয়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের যে আবেগঘন ছবি দেখা যেতে পারত, এবার সেই দৃশ্য দানা বাঁধেনি।
দেখুন অন্য খবর: