Sunday, September 21, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollঝাড়গ্রামে যুদ্ধজয়ী রাজার সামনে সুন্দরী রমণী, কাছে যেতেই
Jhargram Savitri Puja

ঝাড়গ্রামে যুদ্ধজয়ী রাজার সামনে সুন্দরী রমণী, কাছে যেতেই

ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির প্রায় ৫০০ বছরের ও বেশি পুরনো

ঝাড়গ্রাম, অরূপ ঘোষ: ঝাড়গ্রামে (Jhargram) যুদ্ধজয়ী রাজার সামনে সুন্দরী রমণী, কাছে যেতেই পাতালপ্রবেশ, ঝাড়গ্রামের সাবিত্রীপুজোর (Savitri Puja) সঙ্গে জড়িয়ে লোককথা। মূর্তি ছাড়া ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দিরের পুজো ৫০০ বছরের ও বেশি প্রাচীন।

ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির হল একটি ঐতিহাসিক গম্বুজাকৃতি মন্দির, যা মল্লদেব (Malladeva) রাজবংশের কুলদেবী দেবী সাবিত্রীর উদ্দেশ্যে নির্মিত এবং দেবী দুর্গার রূপে পূজিত হন। বিশাল সরোবরের পাশে অবস্থিত এই মন্দিরটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এবং এখানে দেবীর কোনো মূর্তি নেই, বরং একটি পাথরকে দেবী হিসেবে পুজো  করা হয়। এই মন্দিরটি ঝাড়গ্রামের একটি পবিত্র ও জাগ্রত স্থান হিসেবে পরিচিত।

ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির প্রায় ৫০০ বছরের ও বেশি পুরনো । এই মন্দির ঘিরে একাধিক লোকোকথা রয়েছে। আর পাঁচটা পুজোর থেকে মা দুর্গার পুজো এখানে অনেকটাই আলাদা।

সাক্ত মতে পুজো হয় এখানে। বলির প্রচলন ও আছে। আজ থেকে প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো বছর আগে ঘন জঙ্গল ছিল এসমস্ত এলাকা। রাজস্থান থেকে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে রাজা মান সিং (Raja Man Singh) এখানে এসে পড়েন। ঘন জঙ্গলে হঠাৎ ই তিনি এক অপূর্ব সন্দরী রমনীকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখেন। তার রুপে মুগ্ধ রাজ সাত পাঁচ না ভেবেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজার কথা শুনে দেবী শর্ত রাখেন রাজা সামনে পথ দেখিয়ে তাকে নিয়ে যাবেন। পেছনে সে যাবে।

তবে কোনও অবস্থাতেই পেছন ঘুরে তাকানো চলবে না। তাহলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যাবেন। শর্ত মেনে রাজা তার রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেশ কিছু পথ চলার পর হঠাৎ করেই রাজার মনে হয়। দেবী তাকে ঠকায় নি তো। পেছনে তো কোনও আওয়াজ নেই। তাহলে কি তাকে ছেড়ে পালালো দেবী। কিন্ত পেছনে তাকালে সত্যি দেবী যদি হারিয়ে যান এসব ভাবতে ভাবতে পেছন ফিরে তাকিয়ে ফেলেন রাজা মান সিং। সাথে সাথেই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা।

তিনি দেখেন সুন্দরী রমনী আস্তে আস্তে প্রবেশ করছেন মাটির নিচে। তা দেখে রাজা ছুটে আসেন। কথা রাখতে না পারার জন্য করন পরিনতি হয়। সেসময় রাজা ওই রমনীর মাথার চুল ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হন তিনি। তার হাতের মুঠোয়র ওই রমনীর এক গাছা চুল থেকে যায়। সেই দিন রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান মা সাবিত্রী ঐ স্থানে ই মন্দির গড়ে তার পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে মা সাবিত্রীর চুল কে পুজা করা হয় এখানে। মায়ের তাই এখানে শুধু মুখের অংশ টুকুই দেখা যায়। সাবিত্রী দেবীর নিত্য পুজা হয় এখানে।

আরও পড়ুন- পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মা সাবিত্রী র ই আরেক রূপ যেহেতু দেবী দুর্গা তাই দুর্গা পুজার দিন গুলো এখানে ধুমধাম করে পুজা হয়। তবে সেটাও বৈচিত্র্য পূর্ণ। পটে পুজো হয় এখানে। একমাত্র জেলায় বর্তমানে সম্ভবত এখানেই পটে পুজো হয়। তাই অনেকেই এই পুজোকে পটেশ্বরীর পুজো বলে। পুজোর প্রায় ১৫ দিন আগে জিতাষ্টমীর দিন থেকে শুরু হয় এখান কার দুর্গাপুজো। পুরাতন পঞ্জিকার নিয়ম মেনেই নিষ্ঠা সহকারে মায়ের পুজো করা হয়। প্রতিদিন যজ্ঞ ,হোম ও চণ্ডীপাঠ করা হয়। শুধু ঝাড়গ্রাম নয় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড ও উড়িষ্যা থেকে বহু মানুষ রাজবাড়ির পুজা  দেখতে আসেন। সাবিত্রী মন্দিরে প্রতিদিন নিত্য পূজা হয়। প্রতিদিন বহু মানুষ ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন এবং ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন।

পুজো দিতে আসা অঞ্জনা শীট বলেন সাবিত্রী মা খুব জাগ্রত ।তাই প্রতিবছর সাবিত্রী মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য আসি। মায়ের সম্পর্কে অনেক লোকও শ্রুতি রয়েছে। যাআজও এলাকার মানুষ সকলেই বিশ্বাস করেন । মা জাগ্রত ও করুণাময়ী বলে তিনি জানান। পুজোতে বলি দেওয়ার রেওয়াজ আজও রয়েছে। সেই সঙ্গে সন্ধিপূজাতে ও বলি দেওয়া হয় এখানে। করোনা পরিস্থিতির জন্য এবছর প্রশাসনের নিয়ম নির্দেশ মেনে দূর্গা পুজোর সমস্ত কিছুর আয়োজন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

দেখুন আর ও খবর-

Read More

Latest News