মহারাষ্ট্র: মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেবের (Mughal ruler Aurangzeb) প্রশংসা করে বিপাকে পড়তে হল সপার বিধায়ক আবু আজমিকে (MLA Abu Azmi) । মহারাষ্ট্র বিধানসভার (Maharashtra Assemble) এই বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আবু আজমি চারবারের বিধায়ক।
ভিকি কৌশল (Vicky Kaushal) অভিনীত ছাবা সিনেমায় (Chaba Cinema) ঔরঙ্গজেবের চরিত্রকে ছবিতে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তার সমালোচনা করে ঔরঙ্গজেবের সুখ্যাতি করেছিলেন তিন। এর পরেই বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাটিল বিধানসভায় একটি বরখাস্তের প্রস্তাব আনেন আর সেটি গৃহীত হয়।
আবু আজমিকে চলতি বাজেট অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদিকে আবু আজমির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Aditynath)। তিনি তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, শিবাজির মতো মহাত্মাকে যারা অপমান করে তাদের ধিক্কার জানাই। ওঁকে উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়ে দিন, চিকিৎসা করে দেব।”
আরও পড়ুন: রাশিয়া সফরে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি, একাধিক ইস্যুতে আলোচনার সম্ভাবনা
সাসপেননশনের বিষয়ে আজমি বলেন, আবু আজমি বলে তার সঙ্গে ঠিক কাজ করা হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আজমির কথায়, এই সাসপেনশন শুধু আমার প্রতি অবিচার নয়, আমাকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি করেছেন যাঁরা, তাঁদের কাছেও অপমান। আমি জানতে চাই, রাজ্যে কি দুধরনের আইন আছে? একটি আইন আবু আজমির জন্য ও আরেকটি আইন প্রশান্ত কোরাটকর ও রাহুল শোলাপুরকরের জন্য। বিরোধীরা তো অভিনেতা রাহুল শোলাপুরকর ও প্রাক্তন সাংবাদিক প্রশান্ত কোরাটকরের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এই দুজনও তো ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেছিলেন, দাবি আবু আজমির।
এদিকে আবু আজমি ‘ঔরঙ্গজেবের প্রশংসা’ করা নিয়ে মহারাষ্ট্রে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শিবসেনা এই ঘটনায় বিরাট আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অন্যদিকে, ঠানেতে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আবু আজমির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। যদিও ঠানেতে লোকসভা সদস্য নরেশ এম হাসকের ওই অভিযোগকে মুম্বই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কারণ মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভ থানায় আরও একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এত কিছুর মধ্যেও বিধায়ক আজমি বলেছেন, আমি যা বলেছি, তা ঐতিহাসিকরাই বলে থাকেন।
আবু আজমির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপি নেত্রী নবনীত রানা, বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী প্রমুখ।
বিজেপি নেত্রী নবনীত রানা মঙ্গলবার বলেন, যে রাজ্যের বিধানসভায় বসার জন্য আপনি পাঁচবছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই রাজ্য একসময় শাসন করেছেন ছত্রপতি শিবাজি ও সম্ভাজি মহারাজ। আপনার মতো লোকের উচিত ছাবা সিনেমাটি দেখা। তাহলেই বুঝতে পারতেন ঔরঙ্গজেব কী ধরনের সম্রাট ছিলেন। মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, যেভাবে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদল করে সম্ভাজি নগর করা হয়েছে, এবার ঔরঙ্গজেবের সমাধিকেও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হোক। ঔরঙ্গজেবকে ভালবাসেন, তারা তাদের বাড়িতে ঔরঙ্গজেবের সমাধি সাজিয়ে রাখুন। অপরদিকে বিজেপির এমপি সুধাংশু ত্রিবেদী ঔরঙ্গজেব তার সব ভাইকে খুন করে বাবাকে বন্দি করে রেখেছিলেন। ১৬৬৯ সালের ৬ এপ্রিল যে ব্যক্তি হিন্দু মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁকে কীভাবে তাঁর প্রশংসা করছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার মহারাষ্ট্র সমাজবাদী পার্টির সভাপতি আবু আজমি বলেছিলেন, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মোটেই নিষ্ঠুর প্রশাসক ছিলেন না। তিনি অনেক মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। অথচ, সেই ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে আজমির নিন্দা করে বলেন, তিনি যা বলেছেন তা অসত্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।
আজমি তাঁর মন্তব্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েও বলেন, তিনি যা বলেছেন তা ঐতিহাসিকদের বক্তব্য। শিবাজি কিংবা সম্ভাজি মহারাজকে খাটো অসম্মান করে বলতে চাইনি। তার কথাকে ঘুরিয়ে পেশ করা হচ্ছে। তার কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকে, তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
দেখুন অন্য খবর: