নয়াদিল্লি: কাশ্মীর (Kashmir) ইস্যুতে আবার সরব হলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (External Affairs Minister S. Jaishankar) । নয়াদিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়লগ’ (Raisina Dialogue) সভায় জয়শঙ্কর বলেছেন, কাশ্মীরে ঘটেছিল আক্রমণের ঘটনা, রাষ্ট্রপুঞ্জ (Commonwealth of Nations) সেটাকে একটি বিতর্কের রূপ দিয়েছিল। বিদেশমন্ত্রী বলেন, যখন পশ্চিমারা অন্যান্য দেশে প্রবেশ করে, “এটি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অনুসরণ” আর যখন অন্যান্য দেশ পশ্চিমে প্রবেশ করে, তখন এটিকে “অপমানজনক” বলে মনে করা হয়। আমার প্রশ্ন কেন?
মঙ্গলবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কাশ্মীর ইস্যুতে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন যে, মূলত যা ছিল “আক্রমণ”, তা আবারও বিতর্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জয়শঙ্কর, একটি “শক্তিশালী এবং ন্যায্য ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের’ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, আমরা রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়েছিলাম। আক্রমণ কী ছিল তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আক্রমণকারী এবং শিকারকে সমানে দাঁড় করানো হয়েছিল। দোষী পক্ষ কারা ছিল? যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তাহলে ক্ষমা করবেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের খোঁচা, লোকসভায় মহাকুম্ভের জয়গান গাইলেন মোদি
জয়শঙ্কর প্রশ্ন তোলেন, আজ আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা বলি। পশ্চিমারা যখন অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ করে, তখন তা গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অনুসারী হয়। আর যখন অন্যান্য দেশ পশ্চিমে আসে, তখন মনে হয় তাদের উদ্দেশ্য খুবই খারাপ? যদি আমাদের শৃঙ্খলার প্রয়োজন হয়, তাহলে ন্যায়বিচার থাকতে হবে, আমাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রয়োজন। কিন্তু একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রপুঞ্জের জন্য একটি ন্যায্য রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রয়োজন।
একটি শক্তিশালী বিশ্বব্যবস্থার অবশ্যই কিছু মৌলিক মানদণ্ডের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। আমরা সবাই সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার কথা বলি। বিশ্বের বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে যা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অন্য কোনও দেশের এলাকায় সবথেকে দীর্ঘ অবৈধ উপস্থিতির সাক্ষী রয়েছে ভারতের কাশ্মীর।’
জয়শঙ্কর ফের অসন্তোষের সুরে বলেন, আমাদের পূর্ব মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেগুলো একেবারেই না, না। পশ্চিমা বিশ্বে আরও বেশি করে সামরিক অভ্যুত্থান হয়, যেখানে মনে হচ্ছে তারা ঠিক আছে?
জয়শঙ্কর তালিবানের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরে বলেন, “আফগানিস্তানকে ধরুন, তাহলে, একই আফগানিস্তান, একই তালিবান যারা দোহা প্রক্রিয়ায় একটি বহিরাগত ছিল, তাদের অসলোতে স্বাগত জানানো হয়েছিল, স্পষ্টতই, সেই সময়ে মানুষ এতে রাজি ছিল। আজ আবার আমরা আবার বলছি, তালিবানরা এই সব ভালো কাজ করছে না। তারা যদি ঠিক ছিল না , তাহলে অসলো এবং দোহায় কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল?
জয়শঙ্কর বলেন, শক্তিশালী গ্লোবাল অর্ডারে কিছু বেসিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে হবে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা যেমন দরকার, তেমন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলারও প্রয়োজন
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পরে জম্মু-কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ ভারতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখনই পাকিস্তানের মদতে সশস্ত্র হানাদর বাহিনী কাশ্মীরে আক্রমণ চালায়। ভারতের সেনাবাহিনী উপস্থিত হবার আগেই কাশ্মীরের বড় এলাকা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির সময়ে যেখানে দুই দেশের সেনা মুখোমুখি দাঁড়ায়, সেটাই Line of Control, আর পাকিস্তানের দখলে থাকা অংশটিকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর বলা হয়।
পরবর্তীকালে এই বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জে গেলে আন্তর্জাতিক বিতর্কের জন্ম হয়। এই ইতিহাসটিই স্মরণ করিয়ে দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ক’দিন আগে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি কাশ্মীরের চুরি করা অংশ ফেরত দেয়, তবেই কাশ্মীর সমস্যার পুরো সমাধান হবে।
দেখুন অন্য খবর: