পূর্ব বর্ধমান: আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day)। আজকের এই বিশেষ দিনে আপনাদের সামনে তুলে ধরব এমন এক নারীর জীবনের গল্প (Motivational Story), যিনি জীবনযুদ্ধে কখনও হার মানতে শেখেননি। এই গল্পটা পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার জামালপুর থানার অন্তর্গত জৌগ্রাম এলাকার নমিতা ধারার।
স্বামীকে নিয়ে বেশ সুখেরই সংসার করছিলেন নমিতা দেবী। এর মাঝেই তাঁর গর্ভে আসে সন্তান। তবে ৯ মাস গর্ভবতী থাকাকালীন শুরু হয় অশান্তি। সন্তানসম্ভবা অবস্থাতেই তাঁর স্বামী তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। বাপের বাড়ির অবস্থাও ছিল বেশ শোচনীয়। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবার। তাই বাপের বাড়িও বেশি দিন আশ্রয় পাননি নমিতা দেবী। তারপর থেকে শুরু হয় তাঁর বেচে থাকার লড়াই।
আরও পড়ুন: দক্ষিণবঙ্গে শীত যেন স্লগ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং
তখন নমিতা দেবী এক মেয়ের মা। মেয়েকে মানুষ করতে ও দুবেলা দুমুঠো খেতে ট্রেনের কামরায় হকারি শুরু করেন তিনি। হকারি করে দিন কেটে যেত। আচমকা তাঁর এই ক্ষুদ্র সুখেও পড়ল দুর্ভাগ্যের কুনজর। হঠাৎ একদিন ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ হাত কাটা যায়। অভাগার ভাগ্যের আকাশ ঢেকে যায় অনিশ্চয়তার কালো ছায়ায়। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেননি নমিতা দেবী। এক হাত নেই তো কি হয়েছে, অন্য হাত দিয়ে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।
এখন এক হাতেই ট্রেনে ট্রেনে হকারি করে তা থেকে উপার্জিত অর্থে মেয়ের পড়াশোনা, নিজেদের আহারের ব্যবস্থা সবকিছুই করে চলেছেন জীবন যুদ্ধে হার না মানা নমিতা ধারা। নেই থাকার মতো কোনও নিজস্ব আশ্রয়। কিন্তু তিনি যেখানে থাকেন, সকাল হলে সেই ঘরের ভাঙা চাল দিয়ে রোদ উঁকি মেরে যেনে ডেকে দেয় তাঁকে। আর সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথেই প্রতিদিনের মতো শুরু হয় জীবনে চলার এক নতুন সংগ্রাম।
বাড়ির সমস্ত কাজ রান্না করা, সবজি কাটা, ঘর মোছা, মেয়ের দেখভাল করা, ট্রেনে কি বিক্রি করবেন সেই জিনিস সাইকেলে করে নিয়ে আসা, তারপর ট্রেনে হকারি করতে যাওয়া- সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক হাত দিয়ে সব কাজ করেন পূর্ব বর্ধমানের দশভুজা।
দেখুন আরও খবর: