Monday, August 25, 2025
HomeScrollAajke | বিজেপি ভাঙছে রোজ, পরিযায়ী মোদি পারবেন ঠেকাতে?

Aajke | বিজেপি ভাঙছে রোজ, পরিযায়ী মোদি পারবেন ঠেকাতে?

কী ভাবছেন? কেন এসব বলছি? কারণটা আপনিও জানেন

এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা। সেই কবে লিখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। এই কথা আজও বলা যায়। শুধু, বঙ্গদেশের বদলে বঙ্গ-বিজেপি কথাটা ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, এত ভঙ্গ বঙ্গ-বিজেপি তবু রঙ্গে ভরা। আর সেই রঙ্গ এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে, তাকে গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস বললেও কম বলা হয়। অবশ্য, এ রাজ্যে বিজেপিকে কিছু বলার জন্য আমাকে দরকার নেই, তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস কাউকেই দরকার নেই। বঙ্গ-বিজেপিকে গালাগাল করার জন্য তারা নিজেরাই যথেষ্ট। ছোট নেতা গাল দিচ্ছে মেজো নেতাকে। মেজো নেতা হাতুড়ি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড় নেতার পিছনে, সুযোগ পেলেই মাথায় বসিয়ে দেবে। আর বড় নেতা কী করছেন? তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ছেন। গালাগাল প্লাস হাতুড়ি প্লাস শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এই হল বঙ্গ-বিজেপি।

কী ভাবছেন? কেন এসব বলছি? কারণটা আপনিও জানেন। খালি এই মুহূর্তে হয়তো মনে পড়ছে না। বেশ তবে মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ভেবে দেখুন সেই দিন, যখন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন নিয়ে শুভেন্দু চলছিলেন ডালে ডালে, আর সুকান্ত চলছিলেন পাতায় পাতায়। মাঝখান থেকে শিকে ছিঁড়ল শমীকের ভাগ্যে। বসে পড়লেন রাজ্য সভাপতির চেয়ারে। আর তারপরেই শুভেন্দুর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু। শুভেন্দু বললেন “কাশ্মীরে বেড়াতে যাবেন না। ওখানে মুসলমানরা থাকে।” পাল্টা শমীক কী বললেন? বললেন, “কোন প্রেক্ষিতে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এ কথা বলেছেন আমার জানা নেই। কাশ্মীরে পাথর ছোড়া বন্ধ হয়েছে।” কিন্তু কাশ্মীরে বন্ধ হলেও, বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি আর বিরোধী দলনেতার পাথর ছোড়াছুড়ি যে শুরু হয়ে গেল তাতে সন্দেহ নেই।

শমীকের কথায় পরে আবার আসব, এখন দিলীপ ঘোষের কথায় একটু আসা যাক। সত্যিটা হল, দিলীপ ঘোযের মাথায় দুটো ফুল-বেলপাতা না ফেলে বঙ্গ-বিজেপিকে নিয়ে আলোচনা শুরু করাই উচিত হয়নি। সেই কবে থেকে আবোল-তাবোল বকে তিনি মনে করিয়ে দিতেন, ভোট পাক বা না পাক, বাংলায় বিজেপি বলে একটা দল আছে। কখনও গরুর দুধ থেকে সোনা বের করতে চাইলেন, অমনি হই হই করে ‘দিলু পাতন প্রক্রিয়া’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম হয়ে গেল। আবার কখনও তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের পুতনা রাক্ষসী বললেন, মেলায় গিয়ে দা-কাটারি কিনলেন– সবকটাতেই ব্যাপক হইচই। আর আজ সেই দিলীপকেই বিজেপি যেভাবে হেনস্থা করে চলেছে, ভাবতেও খারাপ লাগে। মোদিজি বাংলায় সভা করেন, দিলুদা ডাক পান না। অমিত শাহ বাংলায় সভা করেন, দিলুদা বাতিল। রাজ্য সভাপতি কে হল? শমীক ভট্টাচার্য। আর সেই সভাপতির অভিযেকের দিন ডুগডুগি হাতে দিলীপ ঘুরলেন রাস্তায় রাস্তায়। প্রথমে ভেবেছিলাম, দিলীপ বোধহয় বিজেপির অনেক নেতারই ডুগডুগি বাজিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, দিলুদা বোধহয় বলতে চেয়েছিলেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমার রাজনৈতিক কেরিয়ারের ডুগডুগি বাজিয়ে দিল।

এরপর শুভেন্দু অধিকারী। একে নিয়ে যত বলা যাক, কথা আর ফুরোবে না। রাজনীতির রামধনু তিনি। একবার তৃণমূলের আকাশে উদয় হয়ে বিজেপিকে গালাগালি করছেন। তারপরেই আবার বিজেপির আকাশে দেখা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন। কিন্তু এতকিছু করেও শুভেন্দুর কেরিয়ারের নৌকো সেই ঘাটেই আটকে থাকল। কত আশা করেছিলেন রাজ্য সভাপতি হবেন। কোথায় কী? তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য, ষেখানে হিন্দুহৃদয়সম্রাট কথাটা শুনলেই লোকে হাসতে থাকে। এরপর যা করার তাই করছেন। সভ্যতা, ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যাকে খুশি অশ্লীল গালাগালি দিচ্ছেন। আর সুকান্ত মজুমদার? চুপচাপ জল মাপছেন তিনি। সুকান্ত জানেন, রাজনীতির চাকা যে কোনও দিন ঘুরে যেতে পারে।

রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন। আজ যখন দেশজুড়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিকে হেনস্থা করা হচ্ছে, শুধুমাত্র বাংলাভাষায় কথা বলার অপরাধে গ্রেফতার করে পেটানো হচ্ছে, এমনকী বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন শমীক ভট্টাচার্য কী করছেন? আজ যখন একশো দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা কিছুতেই রাজ্যকে দিচ্ছে না কেন্দ্র, হাইকোর্টে এই নিয়ে রাজ্যের কাছে মামলায় হেরেও আপিল করছে সুপ্রিম কোর্টে, আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন শমীক ভট্টাচার্য কী করছেন? বাঙালি যখন বিজেপি সরকারের হাতে মার খাচ্ছে, শমীক ভট্টাচার্য তখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ছেন। না, একটু ভুল বললাম। খেলার মাঠে রেফারিকে লাথি মারলে তাই নিয়ে প্রেস কনফারেন্সও করছেন। কিন্তু বাংলা আর বাঙালির হেনস্থা নিয়ে একটা শব্দও কী বলেছেন বুদ্ধিজীবী শমীক? কবিতা ভালোবাসেন তিনি, আর তাই বাঙালি কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের দুটো লাইন সামান্য একটু পাল্টে এখন বলতে ইচ্ছে করছে, “বুদ্ধিজীবীর পিছনে দুটি চোখ, বুদ্ধিজীবী বড়ই প্রতারক।” থাকুক কবিতার কথা। বরং আসুন দেখি, শমীকের এই মুখে কুলুপ আঁটা নিয়ে সাধারণ মানুষ কী বলছেন…

আর এসবের ভিতরেই পরিযায়ী পাখির মতোই উড়ে উড়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাই নয় কত কথাই বলছেন। মানুষ নাকি তৃণমূলকে আর সহ্য করতে পারছে না। বিজেপির উন্নয়ন দেখে নাকি মানুযের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা কী? একের পর এক বিজেপি নেতারা ফুলবদল করছেন। গেরুয়া পতাকা ফেলে দিয়ে হাতে তুলে নিচ্ছেন ঘাসফুলের নিশান। আর বিজেপির সাধারণ কর্মীরা? ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনী বা SIR নিয়ে ধন্দে পড়েছেন তারাও। বিজেপি হলেই যে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে এমন কোনও গ্যারান্টি তাদের কাছেও নেই। আশঙ্কায় দিন গুনছেন তারা, আর বুঝতে পারছেন, SIR নিয়ে যদি তাদের হয়ে কেউ দুটো কথা বলেন, তাহলে সে ওই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলবেন। ঘরোয়া কোন্দলে ব্যস্ত বিজেপির মানুষের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? আর এসবের ভিতরেই মোদি আসছেন, মোদি যাচ্ছেন। বঙ্গ-বিজেপিকে কী এভাবে আদৌ বাঁচাতে পারবেন তিনি? নাকি এসব নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না? মাছ ধরা জাহাজের মাস্তুলে যে পাখি বসে থাকে, মাছের ভাগ সে ঠিকই নেয়। কিন্তু জাহাজ যখন ডোবে, কোনওদিকে না তাকিয়ে সিধে উড়ে যায়। বঙ্গ-বিজেপির ভাগ্যেও তেমনটাই হবে না তো?

Read More

Latest News