Friday, October 31, 2025
HomeScrollAajke | রবি ঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গাইলে আপনি দেশদ্রোহী
Aajke

Aajke | রবি ঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গাইলে আপনি দেশদ্রোহী

হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, বাংলা বললেই বোঝা যায় তাঁরা বাংলাদেশি

হ্যাঁ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, কিছু দেশদ্রোহী অসমে বসে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন, তাঁরা দেশদ্রোহী, তাঁদের জেলে ঢোকানো হবে। কেবল যে উনিই বলেছেন তাও নয়, রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতারা, অসমের গোদি মিডিয়ার প্রত্যেকটা চ্যানেল বা সংবাদমাধ্যমে, এ কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! দেশের মধ্যেই বসে দেশ বিরোধিতা করা হচ্ছে, দেশদ্রোহী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই কাজ করছে, এই ধরণের একটা প্রচার গতকাল থেকে শুরু করেছে। হ্যাঁ, অসমে ফতোয়া জারি, আমাদের ঠাকুরের লেখা গান, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটা গাওয়া যাবে না। আসলে প্রতিটা পদক্ষেপে বিজেপির এই অসম্ভব বাংলা, বাঙালি বিরোধিতাটা বেরিয়ে আসে। ক’দিন আগেই এই হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, বলবো? না, ইচ্ছে করছে না। এই হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, বাংলা বললেই বোঝা যায় তাঁরা বাংলাদেশি। তারপরে সারা অসমে এক অলিখিত নির্দেশ জারি হয়েছে, সিলেটি ডায়ালেক্টে কেউ কথা বললেই সে বাংলাদেশি। এখন নতুন ফতোয়া, ওনারা দেশদ্রোহী বাছার সবথেকে সোজা উপায়টা বের করে ফেলেছেন – কেউ যদি রবি ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটা গায়, তাহলে সে দেশদ্রোহী। এবং এক শেয়াল ডাকলে যেমন হাজারটা শেয়াল ডাক ছাড়ে, তেমনই সরকারের এটোঁকাটা উচ্ছৃষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা গণমাধ্যমেরও একই সুর, গত কাল থেকে তারাও দেশদ্রোহীদের চিহ্নিত করার কাজ করছে। আমাদের কেউ কেউ টিটকিরি দিয়ে বাংলাদেশিদের বলত, তোদের দেশের জাতীয় সঙ্গীতটাও আমাদের দেশের রবি ঠাকুরের লেখা। এখন সেই বাংলাদেশিরা হ্যা হ্যা করে হাঁসছে, গা না…গা। জেলে পুরে দেবে তোদের দেশের পুলিশ। হ্যাঁ, সেটাই বিষয় আজকে। রবি ঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গাইলে আপনি দেশদ্রোহী।

বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ জেলায় কংগ্রেস দফতরে সেবাদলের এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের এক প্রবীণ কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে সামান্য কিছু বলতে গিয়ে কবিগুরুর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটা খালি গলায় পরিবেশন করেন, মানে সেই গান গাওয়ার কোনও প্রস্তুতিও ছিল না। আর তাঁদের এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত ও অনুষ্ঠানের শেষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েই অনুষ্ঠান শেষ করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি’র আইটি সেল ঐ সভাতে গাওয়া ‘সোনার বাংলা’ গানটা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে বলে, কংগ্রেসের সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছে। বিজেপি’র প্রচার এতটাই তুঙ্গে তুলে যে, গুয়াহাটির বড় অংশের অসমিয়া সংবাদমাধ্যম বিজেপি’র সুরে সুর মিলিয়ে করিমগঞ্জ কংগ্রেসের সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছে বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বলেছে, “শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেসের এক সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ভারতের রাষ্ট্রীয় সংগীতের মতো সম্মান প্রদর্শন করে পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত অসমে পরিবেশন করা আমরা কোনও অবস্থায় মেনে নেব না। সেজন্য শ্রীভূমি জেলার, মানে আগের করিমগঞ্জ জেলার কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দায়ের করতে আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করে নির্দিষ্ট ধারা বসিয়ে গ্রেফতার করা হবে ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: Aajke | SIR লাগু হতেই আত্মহত্যা শুরু বাংলায়, এর শেষ কোথায়?

ভাবা যায়! জরুরি অবস্থায় রবি ঠাকুরের ‘চিনি গো চিনি তোমারে’ গান গাওয়া বন্ধ করা হয়েছিল। কোনও এক আহাম্মক আমলার মনে হয়েছিল, এর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আছে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এখানে রবি ঠাকুরের গান গাইলে কেবল গ্রেফতার নয়, দেশদ্রোহীতার অভিযোগ আনছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বুধবার সন্ধ্যেতে করিমগঞ্জে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল বলেছেন, কংগ্রেস নেতা কর্মীরা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে দেশবিরোধী কাজ করেছেন। তিনিও কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রচার তুঙ্গে তোলা হয়। সকালে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগু বলেন, অসমকে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই ষড়যন্ত্রে শামিল রয়েছে কংগ্রেস। তাই তাদের সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছে। এই অসমের বরাকে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলাভাষী মানুষ। এই অসমকে বাংলার থেকে আলাদা করে দেখতেন না রবি ঠাকুর। খেয়াল করে দেখুন, অসমের নাম আলাদা করে নেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে। সেই অসমে আজ রাবি ঠাকুরের গান গাইলে দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে আর আমাদের রাজ্যে সাড়ে তিনখানা শক্তি চাটুজ্যের কবিতা পড়া রাজ্য বিজেপি সভাপতি বাংলা দখলের কথা বলছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, রবি ঠাকুরের গান গাইলে সে দেশদ্রোহী, অসমে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া যাবে না, এই ফতোয়া দিয়েছে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি কি আসলে ভীষণ বাংলা আর বাঙালি বিরোধী?

এর আগে বহুবার বলেছি, আরএসএস–বিজেপির ডিএনএ-তে বাংলা, বাঙালি বিরোধিতা আছে। তাদের কোনও নেতা বাংলার প্রতিটা মুসলমান মানুষজনকে রোহিঙ্গা ভাবে। তাদের কোনও নেতা কাউকে বসে চিঁড়ে খেতে দেখলে বুঝে যায় যে, তাঁরা বাংলাদেশি। তাদের কোনও নেতা বাংলা থেকে উঁইপোকার মত বাংলাদেশিদের বেছে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলেন। আর সেই কথা শুনেই আমাদের সহনাগরিক সোনালিকে কাঁটাতারের ওপারে পাঠিয়েছে এই বিজেপির লোকজনেরা, যে সোনালি বিবির বাবা মায়ের নাম আছে ২০০২ এর ভোটার লিস্টেও। এই মুহুর্তে রাজ্যের প্রত্যেক বাঙালির প্রথম কাজ হল, এই অন্যায়ের তীব্র নিন্দে করা, প্রতিবাদ করা, আর হাতের কাছে কোনও বিজেপি নেতাকে পেলে এই গান গাইতে বাধ্য করা।

Read More

Latest News