ওয়েব ডেস্ক: গুজরাতের (Gujarat) ভাবনগর জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার। কোনও রোগী এলেই সেখানে ছুটে আসেন সাদা অ্যাপ্রন পরা, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো এক তরুণ চিকিৎসক। প্রথমবার এই ডাক্তারকে দেখলে আপনারও কপালে ভাঁজ পড়বে। কারণ, ডাক্তারবাবুর উচ্চতা স্ট্রেচারের থেকেও কম। কিন্তু দক্ষতা তাঁর কায়িক উচ্চতার থেকে অনেক বেশি উঁচু। নাম গণেশ বরইয়া (Dr. Ganesh Baraiya), বয়স ২৫, উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। শরীরে ৭২ শতাংশ অক্ষমতা থাকলেও তিনি নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রি।
গুজরাতের ভাবনগরের গোরখি গ্রামের দরিদ্র কৃষক দম্পতির অষ্টম সন্তান গণেশ জন্ম থেকেই বামনত্বে আক্রান্ত। গ্রোথ হরমোনের সমস্যার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মাত্র ১০ বছর বয়সে এক সার্কাসদল তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকায় কিনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু গণেশের বাবা সার্কাস নয়, ছেলের জন্য এক সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই শৈশবকাল থেকেই গণেশকে অক্ষমতা নিয়ে লড়াই করে বড় হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক বস্তা প্লাস্টিক দিলেই মিলবে ভরপেট খাবার!
বাবা-মায়ের ভালোবাসা আর দিদিদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া থেকেই শুরু গণেশের শিক্ষাজীবন। স্কুলে পড়াকালীন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই মতো শুরু হয় প্রস্তুতি ও গভীর অধ্যাবসায়। ২০১৮ সালে প্রতিবন্ধী কোটায় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হন গণেশ। কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করলেও ডাক্তারি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তাঁকে লড়তে হয়েছে কঠিন আইনি লড়াই।
মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া জানায়, গণেশ বরইয়ার শরীর ডাক্তারি পড়ার জন্য উপযুক্ত নয়। সেই থেকে শুরু হয় লড়াই। ডাক্তারি পড়ার জেদ নিয়ে আদালতে যান গণেশ এবং তাঁর পরিবার। কিন্তু গুজরাত হাই কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধেই রায় দেয়। স্বপ্নভঙ্গের ব্যথা নিয়ে গণেশ বিএসসি-তে ভর্তি হয়ে যান। ঠিক সেই সময় তাঁর জীবনে ফের আশার আলো জ্বলে ওঠে যখন তাঁর স্কুলের ডিরেক্টর ও চিকিৎসক ডাঃ দলপৎ কাটারিয়ার তাঁকে না জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। এক বছর পর শীর্ষ আদালতের রায়ে গণেশ ডাক্তারি পড়ার অধিকার পান।
ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির পর আরও বিপদের মুখে পড়েন গণেশ। প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় শারীরিক অক্ষমতার কারণে সময়মতো লিখতে না পারায় ফেল করেন তিনি। পরের পরীক্ষায় কলেজের তরফে তাঁকে রাইটার ও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়, যা এমবিবিএস ইতিহাসে বিরল। তারপর থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় পাশ করেন গণেশ।
২৬ নভেম্বর, ‘বন্ডেড মেডিক্যাল অফিসার ক্লাস-২’ হিসেবে ভাবনগর জেনারেল হাসপাতালে যোগ দেন গণেশ বরইয়া। তাই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে তিনি সিঁড়িকে ভোলেননি। তাঁর কথায়, “আমি জানি, আমার চলার পথে অনেকের কাঁধ দরকার হবে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে পারার শক্তিটুকু আমারই। মানুষ পাশে না থাকলে আজ আমি এখানে পৌঁছতেই পারতাম না।”
দেখুন আরও খবর:







