কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষকে হেনস্থার বিরুদ্ধে আনা সরকারি প্রস্তাব ঘিরে মঙ্গলবার তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হল। শাসক–বিরোধী উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদের জেরে অধিবেশন উত্তাল হয়ে ওঠে। এরপরই ৪ঠা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিরোধী দলনেতাকে (Subhendu Adhikari) সাসপেন্ড করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Bandyapadhay)। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিরোধী দলনেতকে সাসপেন্ড করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আলোচনায় অভিযোগ করেন, ‘‘ওরা এক দেশ, এক ভাষা, এক ধর্ম চাপাতে চাইছে। বাংলা ভাষাকে ভয় পায়। মুখ্যমন্ত্রীর নাম শুনলেই ওরা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। কারণ তিনি ১২ কোটি বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করেন।’’ তিনি দাবি করেন, আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে ১২ লক্ষ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ লক্ষ বাঙালি এবং ৫ লক্ষ মুসলিম। ব্রাত্যের অভিযোগ, বাংলার গরিমাকে ছোট করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা আমাদের গর্ব, বাংলা আমাদের অস্তিত্ব। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলে অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত।’’ একইসঙ্গে সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূলের ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ সেনা ভেঙে দেওয়ার ঘটনাকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দেন এবং মন্তব্য করেন, ‘‘মনে পড়ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় পাক সেনার হত্যালীলার কথা।’’
আরও পড়ুন: বিধানসভা ভাঙচুরে দোষী সাব্যস্ত হয়েও শাস্তি এড়ালেন বিজেপি বিধায়করা
ব্রাত্যের এই বক্তব্য ঘিরেই শুরু হয় প্রবল হট্টগোল। বিজেপি বিধায়কেরা অভিযোগ তোলেন, শিক্ষামন্ত্রী ভারতীয় সেনাকে অপমান করেছেন। তাঁদের নেতৃত্বে স্লোগান দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ব্রাত্য আরএসএসের প্রাক্তন প্রধান এমএল গোলওয়ালকারকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছেন। শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ, ব্রাত্যকে প্রমাণসহ নথি বিধানসভার সচিবালয়ে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে, নিন্দা প্রস্তাবের আলোচনায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বাংলা বললেই আমরা বাংলাদেশি? আমরা রোহিঙ্গা? আমরা ভারতীয় বাঙালি। বিজেপি ঘৃণার রাজনীতি করছে। ডবল ইঞ্জিন সরকার আসতেই বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছে।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও সুরে সুর মিলিয়ে দাবি করেন, ‘‘দেশজুড়ে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ চলছে। বিজেপি শাসিত সরকারগুলি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পরিকল্পিতভাবে এই নিপীড়ন চালাচ্ছে।’’
শুভেন্দুর নেতৃত্বে চলতে থাকা বিক্ষোভে অধিবেশন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিধানসভার শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শেষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ৪ঠা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাসপেন্ড করেন। পাল্টা বিরোধী মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এতদিন ধর্মের নামে বিভাজন ঘটিয়েছে। এখন রাজনৈতিক স্বার্থে প্রাদেশিকতা নিয়ে আবেগ তৈরির চেষ্টা করছে।’’
দেখুন খবর: