এমন নয় যে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতাদের উল্লাস হয়নি গাজা স্ট্রিপে ইজরায়েলিদের বোমাবর্ষণ দেখে, এমন নয় যে তাঁরা সেই জঘন্য গণহত্যার কোনও স্পষ্ট প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু ভারতের দীর্ঘদিনের প্যালেস্টাইনের সমর্থনের ইতিহাসকে এক ঝটকায় আবর্জনাস্তুপে ফেলাটা তো সহজ ছিল না, কাজেই সেসব কোট আনকোট মুসলমান মানুষজনের গণহত্যা দেখে উল্লসিত হলেও আজ অবদি কোনও বিজেপি নেতা প্রকাশ্যে গাজা স্ট্রিপের ঐ নৃশংস গণহত্যাকে সমর্থন করেন নি। আকাশ থেকে বোমা ফেলে নিরন্ন মানুষ যাঁরা রিলিফ ক্যাম্পে খাবার নিতে এসেছে তাঁদেরকে মারা হল, ইজরায়েলের এই কাজকে সরাসরি সমর্থন করার সাহস কিন্তু আমেরিকাও দেখাতে পারেন নি। কিন্তু সেই কবে আলেকজান্ডার পোপ এর কবিতাতে তিনি বলেছিলেন, ফুলস রাশ ইন হোয়ার আঞ্জেলস ফিয়ার ট ট্রেড। বোকারা অনায়াসে সেই কাজ করে ফেলে যা বুদ্ধিমানেরা করতে ভয় পায়। হ্যাঁ শুভেন্দু অধিকারীকে বুদ্ধিমান বলে এমন লোকজনের সঙ্গে আমার অন্তত পরিচয় নেই, সেই শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) কেবল গাজার নৃশংসতাকে সমর্থনই করেন নি, তিনি বলে দিয়েছেন “বাংলাদেশকে (Bangladesh) গাজা স্ট্রিপ করে দেওয়া হবে। গোদা বাংলাতে যা বুঝলাম তা হল, গাজা স্ট্রিপে ইজরায়েল যা করেছে তা এক মহান কাজ, এবার সেই একই কাজ বাংলাদেশে করতে হবে। সেটাই বিষয় আজকে , বাংলাদেশকে গাজা পট্টি বানিয়ে দেবো। শুভেন্দু অধিকারী কী ভেবে এই কথা বললেন?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার, যেমন OCHA, UNICEF, WHO ইত্যাদির রিপোর্ট বলছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৭,০০০ থেকে ৭০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা দ্য ল্যানসেট) জানিয়েছে যে, পরোক্ষ কারণ, অসুখ, অনাহারের ফলে এই সংখ্যা ১ লাখের বেশি হতে পারে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩০% থেকে ৩৫% শিশু। সেই হিসেবে আনুমানিক ২০,০০০ থেকে ২৪,০০০-এর বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। মোট নিহতের প্রায় ৭০% ই নারী এবং শিশু। আহতের সংখ্যা ১,৭০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজায় এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্গহানি হওয়া (Amputated) শিশু রয়েছে। গাজার মোট স্কুলের প্রায় ৮৭% থেকে ৯০% বোমাতে আংশিক বা পুরোপুরিই ধ্বংস হয়ে গেছে। সব কটা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয়েছে। ১০,০০০-এর বেশি ছাত্র, ৪০০-এর বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী মারা গেছেন। গাজার ৩৬টা বড় হাসপাতালের মধ্যে এখন মাত্র অর্ধেক বা তার কম কোনোমতে চলছে। বাকিগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা বা জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। ৮৪% স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (ক্লিনিক ও হাসপাতাল) ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। গাজার প্রায় ৬০% থেকে ৭০% বাড়িঘর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৮১৫টির বেশি মসজিদ এবং বেশ কিছু অনেক পুরনো গির্জা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর অনেক মরদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। হ্যাঁ ইজরায়েলের ক্রমাগত আক্রমণে গাজা স্ট্রিপের ক্ষতির খতিয়ানটা এইরকম। শুভেন্দু কী চাইছেন? বাংলাদেশ কে গাজা স্ট্রিপ করে তুলবেন? আসলে চিরকালের ভিখিরিকে রাজার পার্ট দিলে কৌটো হাতেই স্টেজে ঢুকে পড়ে, ঠিক সেরকম মমতা রাজত্বের তাঁর ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এক নাবালককে হঠাৎ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বানিয়ে দিলে যা হবার তাই হচ্ছে। তো উনি কেন বাংলাদেশকে গাজা স্ট্রিপ বানাতে চান? কারণ সে দেশে সংখ্যলঘুদের ওপরে অত্যাচার চলছে।
আরও পড়ুন: Aajke | ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মুখ্যমন্ত্রীর ১ ঘন্টার বক্তৃতায় মোদ্দা কথাটা কী?
এদিকে এই শান্তিকুঞ্জের মেজখোকা মুর্শিদাবাদের বাঙালি জুয়েল রানা কে বিজেপি শাসিত উড়িষাতে পিটিয়ে মারা নিয়ে একটা কথাও বলেন নি, বলেন নি একটাও কথা যখন ভারতীয় নাগরিক, যাঁর নিজের নাম, বাবা মায়ের নাম আছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাতে সেই বাঙালি সোনালি বিবিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে, একটা কথাও শুনেছেন আমাদের বিরোধী দলনেতার মুখ থেকে? ১০০০ জনের বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের পুলিশ আর বজরং দলের কর্মীরা মিলে উড়িষ্যা থেকে পাঠিয়ে দিল বাংলায়, শুভেন্দুবাবু একটা কথাও বলেছেন। কিন্তু সেই মেজ খোকার শা হল বাংলাদেশকে গাজা স্ট্রিপ বানিয়ে দেবার, যে কথা মোদি বলেন নি, অমিত শাহ বলেন নি, উনি বলে ফেললেন। কদিন আগে ওনাকে খোকা বলায় উনি রেগে বলেছিলেন আমাকে দেখে কি খোকা মনে হচ্ছে? হ্যাঁ শুভেন্দু বাবু আপনাকে দেখ নয়, আপনার কথা শুনে আপনাকে এক অপরিণত মস্তিষ্কের খোকা বলেই মনে হচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম, দেশজুড়ে বাংলা কথা বলা পশ্চিম বঙ্গের নাগরিকদের বাঙলাদেশী বলে, পেটানো হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে, বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি একটা কথাও বলছেন না, কিন্তু এখন তিনি বাংলাদেশকে বোমা মেরে গাজা স্ট্রিপ বানিয়ে দিতে চান। আপনাদের মতামত জানান।
আসলে অর্বাচীন তো গাছে ফলে না, আমাদের সমাজে দেশে রাজ্যেই থাকে, আর স্বাভাবিকভাবেই অর্বাচীনদের কাছ থেকে যুক্তিবোধ আশাও করা যায় না। শুভেন্দু অধিকারীর জানাই নেই যে ওনার বিরোধী দলনেতার পদটা হল সাংবিধানিক, উনি যাখুশি তাই করতে পারেন না, যা খুশি তাই বলতে পারেন না। কিন্তু বললেন, এক চুড়ান্ত মানবতা বিরোধী পৈশাচিক গণহত্যার সমর্থনে দাঁরালেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।







