Tuesday, November 25, 2025
HomeScrollAajke | শুভেন্দুর কান্নাকাটি, ইলেকশন কমিশনের থাপ্পড়, মাথায় হাত মতুয়াদের
Aajke

Aajke | শুভেন্দুর কান্নাকাটি, ইলেকশন কমিশনের থাপ্পড়, মাথায় হাত মতুয়াদের

হিন্দু উচ্চবর্ণের লোকজন ঠিক কোন চোখে দেখে?

ওয়েব ডেস্ক: নমঃশূদ্রদের (Schedule Caste) হিন্দু উচ্চবর্ণের লোকজন ঠিক কোন চোখে দেখে? এর উত্তর ছড়িয়ে আছে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ধুলো-ওড়া গাঁও আর খেতখামারে, আছে রাজস্থানের (Rajasthan) রুক্ষ-শুষ্ক বালিয়াড়িতে। যেখানে উচ্চবর্ণের কুয়ো থেকে পিপাসার জল তুলতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ গুলি করে মারা হয়েছে এই নমঃশূদ্রদের। উচ্চবর্ণের সামনে দিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাওয়ার অধিকারও ছিল না তাঁদের। নমঃশূদ্রের ছোঁয়া লাগলে স্নান করতে হয়—তারা অচ্ছুত, কিন্তু তাদের মেয়েরা নয়। দিনের আলোয় পর্যন্ত তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই মেয়েদের। এখনো কি হয় এসব? না-হওয়া কিছুই আশ্চর্যের নয়। উত্তরপ্রদেশ আর রাজস্থান—যেখানে এখন বিজেপির শাসন—সেখানে তো এই ট্র্যাডিশনই সমানে চলার কথা।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারটা আলাদা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ এখনো পড়াশোনাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। জাতপাত নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না। বাংলার উচ্চবর্ণেরা—অর্থাৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি আদি কুলীনেরা—রবিবারে সাপটিয়ে পাঁঠার ঝোলে ভাত মেখে মাসাহার করেন। এদের দিয়ে কীভাবে বিজেপির কাজ মিটতে পারে?

আরও পড়ুন:  Fourth Pillar | যৌথ প্রেস কনফারেন্সে ‘ট্রাম্প ফ্যাসিস্ট’ বললেন মামদানি, ভারতে মোদি-রাহুল একসাথে প্রেস কনফারেন্সে, ভাবা যায়?

আর তাই, বিজেপির ভরসা ছিল মতুয়ারা। যারা পূর্ব পাকিস্তান, অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। হ্যাঁ, মতুয়াদের আসল তীর্থক্ষেত্র ওড়াকান্দি, বাংলাদেশেই।

সে যাই হোক, এই মতুয়া ও নমঃশূদ্রদেরই বিজেপি নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক মনে করত। নাগরিকত্ব দেওয়ার মুলো নাকের ডগায় দুলিয়ে দিয়ে গরিব মানুষকে গাধার মতো ছোটাতে চাইত। কিন্তু সত্যিটা হল—২০০৩ সালে তৎকালীন বিজেপি সরকারের একটি আইন থেকেই কিন্তু গোলমালের শুরু। সেই আইনে বলা হয়েছিল, হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ—যারা বৈধ নথি ছাড়া বা বৈধ নথি নিয়েও সময়সীমার পরে ভারতে থেকে গেছেন—তাঁরা সবাই ‘অনুপ্রবেশকারী’। আর তাই অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

মতুয়ারা কিন্তু এর বিরুদ্ধেই, বিজেপির বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করেছিল। কিন্তু মজা দেখুন—সেই মতুয়ারাই পরবর্তী সময়ে ভেঙে দু-শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন, তাঁদের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই চলে গেলেন বিজেপিতে।

এত অবধি তবু ঠিকই ছিল। কিন্তু এখন বিজেপি যাকে বলে ‘ফাটা বাঁশে’ আটকে গেছে। বিজেপির ‘হিন্দুহৃদয়সম্রাট’ নেতারা এতদিন মতুয়াদের বলে এসেছেন—নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, আমরা CAA এনেছি। নাগরিকত্বের আবেদন করুন, আর ঝটপট ভারতের নাগরিক হয়ে যান।

কিন্তু সেই গুড়ে ট্রাকভর্তি বালি ঢেলে দিল বিজেপিরই নির্বাচন কমিশন। কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে—নাগরিকত্বের আবেদন করা মানেই নাগরিক হয়ে যাওয়া নয়। আর তাই SIR-এও তাঁদের নাম থাকবে না।

এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। যা খুশি বলছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি এও বলছেন—নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগসাজশ রয়েছে! দেখুন…

এ তো গেল এক দিকের কথা। এর পাশাপাশি আরেকটা অভিযোগও উঠেছে। তা হল—গত কয়েক মাস ধরে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরসহ কয়েকজন নেতা যে CAA সহায়তা শিবির চালাচ্ছেন, সেখানে নাকি টাকা নেওয়া হচ্ছে। মানে রীতিমতো ‘রেট চার্ট’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন—
• মতুয়া পরিচয়পত্র ৩০ টাকা
• ফর্ম ফিল-আপ ৫০ টাকা
• আর ৮০০ টাকায় হলফনামার ব্যবস্থা—যা নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে বলে দাবি করা হচ্ছে সেই বিজেপি শিবিরে।

ভাবুন একবার—জন প্রতি মোটামুটি হাজার টাকা! একেই তো বলে—বিজেপির পৌষমাস, গরিবের সর্বনাশ। নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন বিজেপি নেতারা, সেই মানুষদের থেকেই এখন টাকা তোলা হচ্ছে। কিন্তু এই ছিনিমিনি খেলা নিয়ে মানুষ কী বলছেন? আসুন, দেখে নেওয়া যাক।

CAA শিবির খুলে টাকা তোলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল। এ ব্যাপারে কমিশন ও বিজেপির যোগসাজশের কথাও উঠছে। মতুয়ারাও চুপ করে নেই। টাকা নিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার এই খেলায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যেই। তারা বলছেন,“মতুয়াদের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলন করেছেন, আজকের মতুয়া নেতারা সেই ইতিহাস মনেও রাখেন না। তারা শুধু রাজনীতি করছেন আর টাকা কামাচ্ছেন!” ক্ষমতায় আসেনি—তাতেই এই। ভোটে জিতলে এই বিজেপি তো আগুন লাগিয়ে দেবে।

দেখুন আরও খবর:

Read More

Latest News