কলকাতা : স্পেশাল ফেয়ার ট্রেন (Special Fare Train) নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সাধারণ ট্রেনের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হলেও পরিষেবার মানে কোনো উন্নতি নেই। নির্ধারিত সময়ের অনেক পর ট্রেন পৌঁছাচ্ছে, ফলে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ স্টেশনে অপেক্ষা করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় পৌঁছানোর কথা থাকলে ট্রেন আসছে ভোরে, আবার সকালে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ছে দুপুর বা বিকেলে। এতে যাত্রীদের যাত্রা পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ভেস্তে যাচ্ছে, যা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।
মঙ্গলবার কোয়েম্বাটোর–ধানবাদ স্পেশাল ফেয়ার ট্রেন ধরতে গিয়ে তীব্র সমস্যার মুখে পড়েন আসানসোলের বাসিন্দা তাপস চক্রবর্তী। ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, কিন্তু সেটি ছাড়ে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে। তিনি জানান, আগের দিন ধানবাদ থেকে ট্রেনটি আট ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছিল, যার ফলে বিপরীত দিকেও একই বিলম্ব হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, কারণ নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী, সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি, তছনছ হতে চলেছে জেলাগুলি
একই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা জয়ন্ত সরকারের আত্মীয়, যিনি বেশি ভাড়া দিয়ে কলকাতা–কানপুর সেন্ট্রাল স্পেশাল ফেয়ার সুপারফাস্ট হোলি স্পেশাল ট্রেনে টিকিট কেটেছিলেন। মঙ্গলবার আসানসোলে ট্রেনটি আসার কথা ছিল দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে, কিন্তু সেটি আসে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, এত দেরি হলেও রেলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। স্টেশনে পৌঁছানোর পরেই তাঁরা জানতে পারছেন ট্রেনের বিলম্বের খবর, যা আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে।
শুধু এই দুটি ট্রেন নয়, অন্যান্য স্পেশাল ট্রেনগুলিও একইভাবে বিলম্বিত। সোমবার বিশাখাপত্তনম–পাটনা, পুরী–গোয়ালিয়র স্পেশাল ট্রেন প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে চলে। রক্সৌল-হায়দরাবাদ স্পেশাল ট্রেন ধানবাদে পৌঁছায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা দেরিতে। এছাড়া আসানসোল-পুরী, পাটনা-পুরী স্পেশাল এবং হাওড়া থেকে বিহারগামী স্পেশাল ট্রেনগুলিও নিয়মিত বিলম্বিত হচ্ছে। পুরী থেকে আসানসোলে ফেরার পথে প্রচণ্ড দেরির মুখে পড়েন দুর্গাশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, পুরী স্টেশনে ট্রেনের বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে রেলকর্মীরা ব্যঙ্গাত্মক উত্তর দেন— “স্পেশাল ট্রেন, তাই সময়ে চলে না!”
এই পরিষেবার বেহাল দশার কারণ জানতে চাইলে পূর্ব রেলের সিপিআরও ইনচার্জ দীপ্তিমান দত্ত জানান, বিভিন্ন ডিভিশনে রেললাইন সংস্কার, ফ্রেট করিডর ও ডবল লাইনের মতো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রেলকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক (Block) নিতে হচ্ছে। এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেন ধীরগতিতে চলছে বা দেরি হচ্ছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, উন্নয়নমূলক কাজ চললেও ট্রেনের বিলম্বের সঠিক তথ্য আগে থেকে জানানো উচিত, যাতে তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
দেখুন আরও খবর: