মালদা: শারদোৎসবের (Sharadutsav) আবহে ফের বিতর্ক। দুর্গাপুজোয় (Durga Puja) নীলকণ্ঠ পাখি ধরার ঐতিহ্যের আড়ালে চলছে বন্যপ্রাণ শিকার, এমনই অভিযোগ উঠল মালদা (Malda) জেলায়। অভিযোগের ভিত্তিতে বন দফতর অভিযান চালিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা প্রায় দেড়শো ব্যাধকে ফেরত পাঠিয়েছে। বাংলার বহু জায়গায় দশমীর দিন আকাশে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো এক প্রাচীন প্রথা। বিশ্বাস, মা দুর্গার বিদায়বেলায় নীলকণ্ঠ দর্শন শুভ লক্ষণ। আর সেই কারণেই প্রতিবছর পুজোর সময় বিভিন্ন জায়গায় ফাঁদ পেতে পাখি ধরার চেষ্টা চলে। কিন্তু এই পাখি ধরার ছলেই নাকি চলছে বন্যপ্রাণ হত্যা। অভিযোগ, এবার মালদার বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার ১৭ মাইল গ্রামের কাছে প্রায় ১০ একর জঙ্গলে শিকারিদের হাতে প্রাণ গিয়েছে বুনো খরগোশ, বেজি, বনমুরগি, বুনো শূকর, সোনালি শিয়াল ও খ্যাঁকশিয়ালের মতো একাধিক প্রাণীর (District News)।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলা সম্পাদক মনোরঞ্জন দাস জানান, “ইন্ডিয়ান রোলার বা নীলকণ্ঠ বিপন্ন তালিকাভুক্ত প্রজাতি। এই ব্যাধের দল প্রতিবছর ঝাড়খণ্ড থেকে এসে নীলকণ্ঠ পাখি ধরে বিক্রি করত। কিন্তু এবার তারা পাখি ধরার নামে নির্বিচারে বন্যপ্রাণ হত্যা করছে। আমাদের হাতে তাদের শিকারের ছবিও আছে।”
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে বন্যায় বিপর্যস্তদের পাশে সৌরভ গাঙ্গুলির ফাউন্ডেশন ও ইসকন
বিজ্ঞান মঞ্চ ও স্থানীয়রা থানায় এবং বন দফতরে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেই বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে শিকারিদের আটক করে। জেলা বনাধিকারিক জিজু জেকব বলেন, “ব্যাধের দলটি ঝাড়খণ্ডের। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তবে হেফাজত থেকে কোনও পশু-পাখি উদ্ধার না পাওয়ায়, সতর্কবার্তা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
তবে স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল মণ্ডল সহ অনেকে দাবি করেছেন, “আমাদের চোখের সামনেই তারা পশুপাখি মেরেছে। বাড়ি ফেরার সময় শিকার করা প্রাণী ঝুলিয়েই নিয়ে গেছে। বন দফতর তা অস্বীকার করলেও বাস্তব অন্যরকম।”
আইনজীবী কৃষ্ণগোপাল দাস জানান, “বন্যপ্রাণ হত্যা ১৯৭২ সালের Wildlife Protection Act অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দোষী প্রমাণিত হলে প্রথমে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাত মাসের কারাদণ্ড বা জরিমানাসহ শাস্তি হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ডিয়ান রোলার বা নীলকণ্ঠ ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূরের সমতুল্য সাংস্কৃতিক মূল্য বহন করে। অথচ কুসংস্কারের বলি হয়ে এই প্রজাতি আজ বিপন্ন তালিকায়। প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে যাতে পুজোর আনন্দের আড়ালে আর কোনও প্রাণহানি না ঘটে।
দেখুন আরও খবর: