আমি আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় এক চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিলাম,সঞ্জয় রায়ের সেই দিনটার চিত্রনাট্য, সারা দিন কোথায় ছিল, তার আগের ক’দিন কোথায় ছিল, তার পরের দিন কখন কীভাবে তাকে পুলিশ ধরল ইত্যাদি। সেদিন যা যা বলেছিলাম এবং আরজি কর মামলার ১৭২ পাতার রায়ে সঞ্জয়ের সেদিনের মুভমেন্ট যা রায়ের মধ্যে আছে তা হুবহু এক। আমরা বানিয়ে বলছিলাম না, আমরা তথ্য নিয়ে, জেনে বলছিলাম, সেটাই সাংবাদিকের কাজ। এবং আমাদের এই আরজি কর বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে খুব কম করে হলে বার কুড়ি পঁচিশ বলা হয়েছে যে ,হ্যাঁ এই কাজ সঞ্জয় একাই করেছে, সে-ই একমাত্র অভিযুক্ত, কিন্তু এক বিরাট গাফিলতি তো ছিলই, প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি। আবারও বলব, বিচারক ঠিক সেটাই তাঁর রায়ে খোলসা করেছেন। কী করে এক মাতাল লম্পট সিভিক ভলান্টিয়ার হয়? কী করে এক মাতাল লম্পট অনায়াসে ঢুকে পড়ে হাসপাতালে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না রাজ্যকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে? এ প্রশ্ন তোলার পরে এটাও আমরা বলেছি যে এই গাফিলতিতে সঞ্জয় রায়ের দোষ ঢাকা পড়ে না এবং সে যে একলাই এই কাজ করেছে তারও কোনও ব্যত্যয় ঘটে না। এবং মিলিয়ে নিন বিচারক ঠিক ওইভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে, পুলিশকে দুষেছেন, পোস্টমর্টেমের সময় অব্যবস্থাকেও দুষেছেন কিন্তু তার সঙ্গে এটাও বলেছেন যে এসবে ফলে কোথাও এই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করতে কোনও অসুবিধে হয়নি। এই যে পুলিশের কিছু টেকনিক্যাল গাফিলতির কথা উনি বলেছেন, আসুন সেটা একটু বোঝার চেষ্টা করি।
উনি টালা থানার একজন এএসআই দেবীপ্রসাদ দাস সম্পর্কে বলেছেন যে , It was his admission that GD no. 452 dated 09.08.2024 was in his own handwriting and he had noted the same after coming back from the scene of crime by mentioning the time as 10.10 am, when he was not physically present at Tala PS. এবং কেন এটা হল তা জিজ্ঞেস করতে ওই এএসআই জানিয়েছেন যে এটাই নাকি প্রচলিত রীতি। বিচারকে বক্তব্য হল, এ অত্যন্ত অন্যায়, কিন্তু শেষে তিনি এটাও বলেছেন যে এর ফলে অবশ্যই অপরাধীকে চিহ্নিতকরণ বা তাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু আসুন এই প্রচলিত রীতিটি কী? থানায় লোক কম এবং থানায় কোনও পুলিশের কাজের কোনও সময়সীমা নেই, অমুক নেতা ডেকেছেন তো এক পায়ে রাত ১১টায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন কী বলবেন সেই নেতা, না হলে পোস্টিং ক্যানিংয়ে, জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। বা ধরুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসছেন, হাত কপালে ঠেকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তায়, কখন তিনি এ পথ দিয়ে যাবেন, বা মন্ত্রীর ভাইপোর অন্নপ্রাশন, তাহলে তো হয়েই গেল, আরও ৩০ জন মন্ত্রী, তেমন হলে মুখ্যমন্ত্রী, ক্যাটারিংয়ের ছেলেরা আর পুলিশ একসঙ্গে ঘরে ফেরে। দায়িত্ব নিয়েই বলছি ছোট মেজ সেজ বড় সমস্ত বাবুদেরই এটাই রুটিন, সর্বক্ষণ টেনশন, গায়ে আঠার মতো লেগে থাকে অম্বল, গলা জ্বালা, বুকে চিন চিন। এ জমানা, সে জমানা, এ রাজ্য, সে রাজ্য, এ নৈরাজ্য সর্বত্র। তো সেই হেন মেজ বা সেজবাবুর সকালে অফিসিয়ালি ডিউটি সাড়ে ১০টায়, তখন পৃথিবী নিদ্রামগ্ন, উনিও, কিন্তু থানার খাতায় সেই জায়গা ছেড়ে রাখা হয়েছে, মেজবাবুর ডিউটি অফিসিয়ালি চালু, উনি এসে ডায়রি ভরে দেবেন। জাজ সাহেব ধমক লাগাতে পারেন বইকী, কিন্তু ধমক দেওয়ার আগে একবার খতিয়ে দেখুন, সমস্যা অনেক অনেক গভীরে। এবং বেশ কিছু টেকনিক্যাল গড়বড়ের কথা বিচারক বলেছেন, তার জন্য পুলিশ দায়ী, তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী কিন্তু তাতে করে সঞ্জয় রায় যে এই হত্যা আর ধর্ষণে একমাত্র অভিযুক্ত, তা প্রমাণ করতে কোনও কসুর ছাড়েননি বিচারক।
তিনি জানাচ্ছেন কেন সঞ্জয় রায় অনায়াসে আরজি করে ঢুকতে পারতেন, From the evidence of ASI Anup Dutta & Ex-Civic Volunteer Sourav Bhattacharyya and from the statement of the accused u/s 351 BNSS, it came out that the said accused used to stay at the Barrack of Kolkata Police 4th Battalion at Salt Lake and that he was entrusted the duty to look after the police personnel and their family members at various Govt Hospitals. মানে বুঝতে পারছেন? সঞ্জয় আরজি কর হাসপাতালে পুলিশের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানোর লাইসেন্স নিয়েই ঘুরতেন। দেখে নিন বিচারকের রায়েই আছে – From the certificates, it appears that the said accused was the runners up in a boxing championship and the same was also admitted by the accused during his examination u/s 351 BNSS. মানে সে একজন বক্সার ছিল। কাজেই সেদিন সে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই সাধারণ মেয়েটিকে অনায়াসে কব্জা করতে পেরেছিল, খুব বিরাট শক্তি প্রয়োগেরও দরকার হয়নি। পোস্ট মর্টেম কেন আরজি করেই হয়েছিল, ওই দিনেই হয়েছিল, তা আমরা আগেই জানিয়েছি, তবুও মনে করিয়ে দিই, জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের তরফে লিখিত দাবি জানানো হয় আরজি করেই পোস্ট মর্টেম করতে হবে, ওই দিনেই মানে সন্ধেতেই করতে হবে।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিজেপির আদর্শ নেতাজি ঘৃণা করতেন
বিচারক জানাচ্ছেন, The dead body was sent for post mortem and the Post Mortem was conducted by three docotrs’ board in presence of the PGTs and the representative of the father of the victim and videography of the entire procedure was done. মানে কেবল পোস্টমর্টেমই হয়নি, তার সম্পূর্ণ ভিডিওগ্রাফিও হয়েছে, কাজেই সেখানে ভুল থাকলে এক্সপার্ট ফরেনসিক টিম তা অনায়াসে ধরে ফেলত। বিচারক বলছেন যে, In this case, there were no injuries over the back side of the body of the victim and the same proves that the said victim was attacked from her front side. তার মানে অন্য কোথাও বেধড়ক মারা হয়েছে, ইত্যাদি গুজবের কোনও জায়গা নেই, কাউকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আক্রমণ করলে মেরে ফেলার মতো মারধর করলে তার পিছনে কোনও আঘাত থাকবে না তা হয় না, কাজেই এটা প্রমাণিত যে মেয়েটি শুয়ে ছিল।
অটপ্সি রিপোর্ট নিয়ে বিচারক কী বলেছেন? The entire videography of the postmortem procedure was proved in this case and from the same all the signs of throttling by using the right hand from the front side of the body of the victim are found. ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস specifically pointed out the external and internal injuries found by the team at the time of autopsy of the body of the victim. The said opinion of ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস was corroborated by the Dr. Adarsh Kumar, who was the Chairman of Multi Institutional Medical Board (MIMB) formed by Director General of Health Services Government of India. The said MIMB had examined the videography of the Inquest Examination, and the postmortem examination and the Board opined that that the findings of the autopsy team was correct and that they did not find any contradiction in between the inquest report and the postmortem report. মানে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই, যাঁরা এক্সপার্ট তাঁদেরও কোনও সন্দেহ নেই। এরপরের প্রশ্ন ছিল এই ধর্ষণ আর খুন কি একজনই করেছেন, নাকি অনেকজনে মিলেই করেছেন? সেখানে বিচারক বলছেন, I have perused the opinions of the ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস আর জি কর ফরেন্সিক মেডিসিন, and the ডঃ আদর্শ কুমার ফরেন্সিক মেডিসিন এআইআইএমএস দিল্লি and also perused the still photographs of the post-mortem examination. I have also considered the nature of the injuries over the facial areas of the victim and that the said injuries were resistance injuries. I have also considered the opinion of the ডঃ অপূর্ব বিশ্বাস that the nature of the said injuries was simple. From the PM report as well as the reply of the ড অপূর্ব বিশ্বাস during the cross examination it appears that there were no fractures in the body of the victim. This evidence also suggests that the assault was done by a single person.
মানে শেষে এটাও বলে দিচ্ছেন যে গণধর্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে হাড় ভাঙা ইত্যাদির ঘটনা পাওয়া যায়, যেটা এক্ষেত্রে ছিল না যাঁরা পেলভিক বোন, কলার বোন ইত্যাদি ভাঙার কথা বলছিলেন তাঁরা ডাহা মিথ্যে বলছিলেন। আসলে যাঁরা এই গণধর্ষণের কথা বলছিলেন এবং এখনও বলে যাচ্ছেন তাঁরা আসলে এই অপরাধী সঞ্জয় রায়কে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিচারক তাঁর সমস্ত মেধা দিয়ে, সমস্ত প্রমাণ আর তথ্য সামনে রেখে তাঁর রায়ে বলছেন এই কাজ একজনের, ওই সঞ্জয় রায়ের, কিন্তু আদতে এক অন্য উদ্দেশ্যে জুনিয়র ডাক্তার, কিছু ধামাধরা সাংবাদমাধ্যম বলেই যাচ্ছে, প্রমাণ যতই দিন আমরা মানব না।