Aajke । প্রকাশ্যে বিজেপির মিথ্যাচার মতুয়া গড়ে, মমতার প্রবল চাপে বিজেপি? ২৬- এ কে করবে বাজিমাত?

মতুয়া ভোট কি ঘুরে যাবে মমতার দিকেই?

0
32

ভয় আর মৃত্যু ছড়িয়ে SIR-এর পথচলা শুরু হয়েছে এই বাংলায়। বঙ্গ-বিজেপির নেতারা এই নিয়ে কিছু কম হইচই করেনি। শুভেন্দু-সুকান্ত তো লাইনেই ছিলেন। এমনকি ইন্টেলেকচুয়াল, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা পড়া শমীকও শেষবেলায় ক্ষেপে গিয়ে রণহুংকার ছেড়েছেন, এক কোটি নাম বাদ যাবে বলে। কিন্তু এরকমটা না বলাই বোধহয় ভালো ছিল। মুশকিল হল, শুভ-সুকু-শমী, বঙ্গ-বিজেপির এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স গদি দখল করার জন্য যতটা লাফালাফি করেন, রাজনীতির খেলাটা বোধহয় তত মন দিয়ে খেলেন না। নাহলে বুঝতে পারতেন, ভোটের আগে অন্তত এলোপাথাড়ি বকতে নেই। জনতা হয়তো সবই ভুলে যায়, কিন্তু তার জন্যও একটা মিনিমাম সময় লাগে। পাঁচ বছর আগে কোন নেতা কী বকেছিলেন, তা হয়তো মানুষের মনে থাকে না। কিন্ত পাঁচ মাস আগের ফালতু কথার জবাব ভোটবাক্সে মিলতেও পারে। কথা হচ্ছে, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। বঙ্গ-বিজেপির নেতারাও এখন বুঝছেন। শেক্সপীয়র বলেছিলেন, ‘মাঝরাতে বালিশে যার দীর্ঘশ্বাস পড়ে না, সে প্রেমিকই নয়।’ শেক্সপীয়রকে ধার করে আমরাও বলতে পারি, ‘মাঝরাতে যে কী করলাম বলে লাফিয়ে ওঠে না, সে বঙ্গ-বিজেপির নেতাই নয়।

হ্যাঁ, শুভেন্দু, সুকান্ত, শমীকবাবুরা হয়তো এখন বুঝতে পারছেন, এক কোটি নাম বাদ যাবার কথাটা না বললেই হত। এই যে, বাংলায় SIR- এর হাওয়ায় এত আত্মহত্যা হচ্ছে, আত্মহত্যার চেষ্টা হচ্ছে, এর পিছনে বিজেপি নেতাদের এক কোটি দাগিয়ে দেবার একটা বড় ভূমিকা আছে। এক কোটি সংখ্যাটা নেহাত খুব ছোট নয়। এর ভিতরে কে যে ঢুকে যাবে, মানুষ বুঝতে পারেনি। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা ঠিক কী রকম? রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এ আপাতত মৃত ব্যক্তি, স্থানান্তরিত ভোটার, ডুপ্লিকেট ভোটার, অনুপস্থিত ভোটার এরকম আনুমানিক ১৪ লক্ষ ভোটারকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া নাগরিকত্বের সঙ্গে ভোটার তালিকার কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সিইও। প্রায় ৭০ শতাংশ তথ্য এখনো পর্যন্ত ডিজিটালাইজড হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, প্রতি দিনই নতুন তথ্য আসছে। আপাতত বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব মিলেছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছেন। সব এনুমারেশন ফর্ম জমা হওয়ার পরে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়ার সংখ্যা যে অনেক বেশি হবে, তা এক রকম নিশ্চিত।

আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দুর কান্নাকাটি, ইলেকশন কমিশনের থাপ্পড়, মাথায় হাত মতুয়াদের

হ্যাঁ, বাদ পড়ার সংখ্যাটা এক কোটি না হোক, অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু বাদ পড়বে কারা? এখানেই খেলাটা উল্টো বুঝলি রাম হতে চলেছে। বাদ পড়বে একটা বিরাট অংশের হিন্দু শরণার্থীরা। মুসলিম যারা বাদ পড়েছেন, তাদের নাহয় বাংলাদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগ আছে। কিন্তু যেসব হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে এদেশে এসেছেন, তারা কোথায় যাবেন? মায়ানমার বা থাইল্যান্ডে তো যেতে পারবেন না। তাহলে কোথায় যাবেন এই হিন্দুরা? হিন্দুহৃদয়সম্রাট শুভেন্দু অধিকারীর কাছে এর কী উত্তর আছে। যে মতুয়া আর নমঃশূদ্রদের আপনারা বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বলে বুক চাপড়েছিলেন, তাদেরই তো বাদ যাবার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে। যখন এক কোটি বাতিল হবে বলে গলা ফাটাচ্ছিলেন, তখন মতুয়াদের কথা একবারের জন্যও মনে পড়েনি? পড়েছে। কিন্তু ততক্ষণে মুখের কথা আর হাতের তির দুটোই ছুটে গেছে। SIR- এর খেলা ব্যুমেরাং-এর ঠেলা হয়ে দেখা দিয়েছে বঙ্গ-বিজেপির রাজনীতিতে। আর তাই, নতুন মিথ্যে। যার নাম CAA. খোলা হল CAA শিবির। বলা হল, কোনো চিন্তা নেই। শরণার্থীরা আসুন, CAA ফর্ম ভর্তি করুন, নাগরিক হয়ে যান। আরে, চিনেবাদামের খোসা ছাড়াতেও খানিকটা সময় লাগে। আর একটা দেশের নাগরিক হতে কোনো সময়ই লাগবে না? ফর্ম ভরলেই কেল্লা ফতে?

 

তা যে নয়, সেতো ইলেকশন কমিশনই বুঝিয়ে দিয়েছে। কমিশন সাফ জানিয়েছে, CAA ফর্ম ফিলাপ করলেই কেউ নাগরিক হয়ে যাবে না, তাই SIR- এ তাদের নাম ওঠার কোনোই কারণ নেই। আবেদনকারী শরণার্থীকে প্রমাণ করতে হবে তিনি অন্য দেশের নাগরিক ছিলেন এবং ধর্মীয় কারণে তিনি সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। CAA ফর্ম ভর্তি করলাম আর ১০-১২দিনের মধ্যে দেশের নাগরিক হয়ে গেলাম, এরকমটা হয় না। ছেলের হাতের মোয়া নাকি? একথাটা মতুয়ারাও কিন্তু বুঝতে পেরেছেন। আর তাই বিজেপির উপর থেকে তাদের ভরসা চটছে। মতুয়াদের গেরুয়া নেতারা ইতিনধ্যেই বলেছেন, একটা নাম বাদ গেলেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে ছাড়া হবে না। তার মাঝেই অভিযোগ উঠেছে, CAA শিবির খুলে টাকা তুলছেন বিজেপি নেতারা। সব মিলিয়ে বিজেপির জন্য হাওয়া গরম হয়ে উঠেছে। এখন কথা হল, বঙ্গ-বিজেপির তো হাতে রইল পেনসিল। কিন্তু মতুয়াদের পাশে থাকলেন কে? কে আবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন কর্মসূচী নিয়ে বনগাঁয় ছুটেছেন তিনি।

হ্যাঁ, আবার রাস্তায় নেমেছেন মমতা। নাম না নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করে বলেছেন, ‘ভোট এল না, তার আগেই সংঘাত? আমার সঙ্গে খেলতে আসবেন না! রাস্তাই রাস্তা দেখায়।’ এছাড়া সরাসরি বলেছেন, ‘মতুয়াকার্ড নিয়ে রাজনীতি চলছে। এসব হল টাকা নিয়ে বিজেপির ভাঁওতাবাজি। মতুয়াকার্ডে লেখাই থাকছে সেই ব্যক্তি বাংলাদেশি। নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় মতুয়া কার্ড।’ মমতা আরও বলেন–‘ ভোটের আগে ধর্মের নামে ফর্ম বিলি চলছে। নিবিড় সমীক্ষা করতে তিন বছর সময় লাগে। জোর করে দুমাসে কেন কাজ করা হচ্ছে? কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে এটাই প্রত্যাশা। জোর করে বাংলা দখলের ষড়যন্ত্র চলছে।’  এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন– ‘বিধানসভা ভোটের পর দেশটা একটু চষে বেড়াব। বোঝাই যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে রাজ্যে প্রচারে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন মমতা।’

মমতার কাজ মমতা করছেন আর শুভেন্দুর কাজ শুভেন্দু। এসআইআর সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ নিয়ে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীর সঙ্গে দেখা করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অধিকারীমশাই। পশ্চিমবঙ্গে ‘কীভাবে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে ভোটার লিস্টে নাম তোলা হয়েছে’, সেইসব অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। তিনি আরো বলেছেন, জনবিন্যাসের একটা ম্যাপ তৈরি করেছি ৷ সেখান থেকেই বোঝা যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রশাসন কীভাবে দেশের সর্বনাশ করেছেন। আমরা সাফ জানিয়েছি, এঁদের নাম বাদ দিতে হবে। এছাড়াও হিন্দু শরণার্থীদের নাম তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। আরে, ভারী মুশকিল তো! কমিশন তো আগেই বলে দিয়েছে, প্রপার প্রসিডিওর ছাড়া শরণার্থীদের নাম তারা SIR-এ তুলতে পারবে না। তাহলে শুভেন্দু এসব বলছেন কেন? কেন আবার মিথ্যের খেলা? সত্যিটা তাহলে কী এই যে, বিজেপিও বুঝতে পেরেছে, যাদের তারা ভোটব্যাঙ্ক বলতো, সেই মতুয়ারা আর বিজেপির উপর ভরসা রাখতে পারছে না। কী হবে তাহলে? মতুয়া ভোট কি ঘুরে যাবে মমতার দিকেই? আসুন দেখে নিই, মানুষ কী বলছে।

ভোটের কথা ভোটই বলবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, বিশেষ করে গরীব মানুষ নিশ্চই একথা বলবেন, যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের পাশে ছিলেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী বা শরণার্থী সমস্যা– মমতাকে মানুষের পাশেই দেখা গেছে বারবার। তারপর? তার পরের গল্প লুকিয়ে আছে ২০২৬-এর ভোটে। আর সেই গল্প লিখবে এই বাংলার মানুষ।