Friday, August 22, 2025
HomeScrollAajke | মমতা যা বললেন, বিজেপি সেটা মেনেই মাঠে নামল

Aajke | মমতা যা বললেন, বিজেপি সেটা মেনেই মাঠে নামল

ছোটবেলায়, মানে সেই ছোট্টবেলায় আমাদের একটা কমন বিহেভিয়ার প্যাটার্ন ছিল। আমাদের কোনও বন্ধু যদি আমাকে বেড়াল বলত, আমি তাকে হনুমান বলতাম, সে যদি বলত আমি আপেল খাব, আমিও বলতাম আমিও আপেলই খাই, কেউ যদি বলত কাল আমাদের ঘরে মাংসের ঘুগনি হবে, আমিও বলতাম আমাদেরও হবে। এটা কেবল আমিই বলতাম না, এটা সাধারণভাবে প্রত্যেক শিশুই করে থাকে, এ এক ধরনের অনুকরণ প্রবণতা। বয়স হতে থাকে, তখন এগুলো আর থাকে না, অন্য কথা আর শব্দের জোগান আসে, তাকে ম্যাচিওরিটি বলে। কিন্তু অনেকে বয়স হলেও ম্যাচিওর হয় না, তাদের শরীর বাড়ে, মন থাকে শিশুর মতো। অনুকরণ প্রবণতা পিছু ছাড়ে না। তো আমাদের বঙ্গ বিজেপির হাল এক্কেবারে সেই রকম। অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি বেড়ে উঠেছে এক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে, ধারাবাহিক কাজ, বুথ লেভেলে খাটাখাটনি, এবং সেই রাজ্যগুলোর সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামোও তাদের সাহায্য করেছে বইকী। কিন্তু আমাদের রাজ্যে দল ভাঙিয়ে দু’ চার পিস নেতা পেয়েছে বিজেপি, কিন্তু না আছে তাদের সংগঠন, না আছে কো অর্ডিনেশন। না আছে এই বাংলার মাটিতে সেই উর্বরতা বা বলা ভালো সেই পাঁক যেখানে পদ্মফুল ফোটানো যাবে। কাজেই সেই অনুকরণ করা ছাড়া তাঁদের উপায় নেই। কাজেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মী সম্মেলনে কর্মীদের বলেছেন ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হচ্ছে, কাল থেকেই মাঠে নামুন, এই ভুয়ো ভোটার দিয়েই মহারাষ্ট্র হরিয়ানা দিল্লি জিতেছে ওরা, আমরা সেটা হতে দেব না। এই তিনটে বড় হারের কথা সামনে রেখে তিনি কী করতে চেয়েছেন তা নিয়ে পরে আলোচনা করব, কিন্তু শোনা মাত্র শুভেন্দু অধিকারী, এমনিতেই তাঁর নাম কাঁথির খোকাবাবু, তো তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন, ভোটার লিস্ট দিয়ে আমাদের হারানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেই বাচ্চাদের অনুকরণ প্রবণতা, আর সেটাই আজ আমাদের বিষয় আজকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬-কে মাথায় রেখে তাঁর পুরো দলকে মাঠে নামাতে চেয়েছেন। সেই তাঁরা যাঁরা এই সরকারের সমর্থক, এই সরকার চলে গেলে যাঁদের অস্তিত্বে টান পড়বে, অনেকে বিপদেও পড়বেন। সেই তাঁদের সামনে তিনি তুলে ধরলেন তিনটে রাজ্যের সাংঘাতিক হার, যেখানে অনেকেই ভেবেছিলেন যে বিরোধীরা এগিয়ে আছে। নির্বাচনের পরে বিভিন্ন ইস্যু পর্যালোচনা করতে গিয়ে বোঝা গেছে ওই এগিয়ে থাকার অ্যাসেসমেন্টটা ভুল ছিল, বহু গলদ ছিল।

আরও পড়ুন: Aajke | এই মুহূর্তে ভোট হলে ৩০-এর উপরে উঠবে না বিজেপি

দিল্লির ৭০ শতাংশ মানুষ কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের রিনোভেশনকে এক ধরনের দ্বিচারিতা বলেই মনে করেছেন, অনেকের কাছেই এক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অন্য রাজনীতি করতে আসা আপকে বহু দুর্নীতির দায়ে জেলে ঢুকতে দেখে বিরাট সংখ্যক মানুষ হতাশ হয়েছিলেন। হরিয়ানাতে হুডা আর শৈলজার লড়াই না থাকলে ফলাফল অন্য হত, পরে সেটা বোঝা গেছে। মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি জোট কাজই করেনি, তাঁরা একে অন্যকে টেক্কা মারার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষমেশ একটা কনভিনিয়েন্ট অজুহাত এসেছে যে ভোটার লিস্টে বিশাল গড়বড়। তো সেটাকেই সামনে রাখলেন মমতা, বিজেপি এইভাবে আমাদের হারানোর চেষ্টা করছে, র‍্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলের মস্তিষ্কে বিশাল ধাক্কা আর আলোড়ন, তাঁরা নেমে পড়েছেন কাজে, এটাই চাইছিলেন মমতা, পারপাস সার্ভড। কিন্তু কাঁথির খোকাবাবু? তিনিও দেখি হঠাৎ নেমে পড়েছেন যে আমাদের ভোটার লিস্টে গড়বড় করে হারানো হচ্ছে, চেষ্টা চলছে। ভোটার লিস্টের দায়িত্ব কার? কোন সন্টামন্টার? কে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্তিকরণের জন্য নির্লজ্জভাবে সেই প্যানেল থেকে নিরপেক্ষ প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে নিজের মন্ত্রীকে বসিয়েছেন? কার নির্দেশে পুতুল কমিশনার বসানো হচ্ছে? সব্বাই জানে। কিন্তু শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু জানেন না উনি সেমসাইড গোল করতে নেমে পড়েছেন, আমাদের ভোটার লিস্ট দিয়ে হারানো হচ্ছে। আরে বাবা অমিত শাহকে গিয়ে বলুন, কোথায় গড়বড় আছে বলুন, তা নয়, যেই মমতা বলেছেন, উনিও আমারও বার্বি ডল চাই বলে ভ্যাঁ করে কাঁদতে বসেছেন। সিপিএম এই দাবি করলে তবু বোঝা যেত, আসলে ওই অনুকরণ প্রবণতা। হাতে গরম ইস্যু ছিল আরজি কর, বিরোধী দল হিসেবে মানুষকে নামাতে পারতেন রাস্তায়, তখন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের অনুকরণে ছাত্রসমাজ বলে এক অদ্ভুতুড়ে কথা বাজারে ছাড়লেন, সেই যে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন, এখনও এই ইস্যুতে আর যেই হোক বিজেপি মাঠে নেই। ওদিকে বুথে কর্মী নেই, অন্য কারও কথা বাদই দিলাম, লোকসভা ভোটের সময় দিলীপ ঘোষের বর্ধমান দুর্গাপুর আসনে বর্ধমানে ৮০ শতাংশ বুথে এজেন্টই ছিল না। তাঁরা নাকি ভোটার লিস্ট সংশোধন করবেন! আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম বিজেপির হাতেই ইলেকশন কমিশন, নির্লজ্জের মতো বার বার আমরা দেখেছি ইলেকশন কমিশন পরোক্ষে বিজেপিকেই সাহায্য করেছেন, কিন্তু আজ হঠাৎ মমতার সুরে সুর মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপি ভোটার লিস্টে ভুয়ো ভোটার আছে বলে মাঠে নেমে কী বোঝাতে চাইছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

বাংলার বুথে কদাচিৎ কখনও এক আধটা ভুয়ো ভোটার ভোট দিয়েছে বা দিতে পারে, আগে যা হত তা হল মাস্তানি, ভোট দিতেই দেব না, এমনকী তা গতবারের আগের পঞ্চায়েতের ভোটেও হয়েছিল, শাসক তৃণমূল দলকে তার খেসারতও দিতে হয়েছে। কিন্তু তবুও কোথাও কোথাও প্রায় বুথ ক্যাপচার করে ভোট কি হয় না? হয়, কিন্তু তা শতাংশের হিসেবেও আসে না। আর ভুয়ো ভোটার তো নয়। খলিলুর রহমানের জায়গায় অমৃত প্যাটেল বা জাহানারা খাতুনের জায়গাতে নিশা রমনিক ভোট দিতে এলে একটা থাপ্পড়ও নীচে পড়বে না কারণ রাজ্যের নাম বাংলা, এখানে ভোট পড়ে ৮৪-৮৬ শতাংশ, এখানে ভোটের দিন সারা পাড়া নজরে রাখে একে অন্যকে, এখানে দরকার সংগঠন, এখানে দরকার বুথের কর্মী, এখানে দরকার পোলিং এজেন্ট, তার ব্যবস্থা করতেই মমতা ব্যানার্জি মাঠে কর্মীদের নামিয়েছেন, টাচ মি নট খোকাবাবু শুভেন্দু ভোটার লিস্ট নিয়ে কথা বলে হাসির পাত্র হয়ে উঠলেন, আর কিছুই নয়।

Read More

Latest News