Saturday, December 6, 2025
HomeScrollAajke | ব্রাত্য বাবু, একটু শিখুন মমতা ব্যানার্জীর কাছ থেকে
Aajke

Aajke | ব্রাত্য বাবু, একটু শিখুন মমতা ব্যানার্জীর কাছ থেকে

বিজেপি ঠিক যতটা ‘অবাঙালি’, তৃণমূল ঠিক ততটাই ‘বাঙালি’ হয়ে উঠতে চায়

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘ওসব বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করুন, ওই নাটক-ফাটক উনিই বোঝেন ভালো’। মমতার সেই ঔদার্য নেই, থাকার কথাও নয়। কারণ সাংস্কৃতিক জগতে বা বলয়ে তিনিও এই বাংলার একজন জ্যোতিষ্ক তো বটেই। তবুও ওনার ক্লোজ প্রক্সিমিটিতে, ক্যাবিনেটে একজনই আছেন, যিনি নাটক নিয়ে কথা বলতে পারেন। একজন অথরিটি হিসেবেও দাবি করলে তা বাড়াবাড়ি হবে না, কিন্তু ওনাকে ডজন খানেক গোল দিয়ে দিলেন দিদিমণি। উনি যখন স্টেজে প্রসেনিয়ামের মধ্যে এদিক ওদিক খানিক ভাঙা গড়ার মধ্যেই নিজের এক্সপেরিমেন্টকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন, তখন মমতা চলে গেলেন বাংলার আদি অকৃত্তিম ফর্মে, পাঁচালি নিয়ে। যে ‘লক্ষ্মীর পাঁচালি’ বাংলার ঘরে ঘরে, সেই ‘লক্ষ্মীর পাঁচালি’ই আজ ভোটের বাজারে বাংলার মেয়ের অস্ত্র হয়ে উঠল। এই মূহুর্তে ব্রাত্য বাবুকে মুখের উপরেই বলা যায়, ‘ভাবুন ভাবুন, ভাবা প্রাকটিস করুন’। বাংলার আদত সাংস্কৃতিক কাঠামোগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, আর একমাত্র তা করতে পারলেই একাডেমির ৫৬৭ জন আদত নাট্যপ্রেমীর বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় নিজের বক্তব্যকে, এলিট সমাজের দেওয়াল ভেঙে ছড়িয়ে পড়া যায় বাংলার সর্বত্র। ষাটের দশকে বামপন্থীদের এক অত্যন্ত প্রতিভাবান অংশ এ নিয়ে কিছু ভেবেছিলেন, লোক সংস্কৃতি, লোক আঙ্গিককে কাজে লাগানোর। তারপরে তাঁরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ‘টুম্পা সোনা’ হয়ে উঠলেন আর ব্রাত্য বাবুরা থেকে গেলেন একাডেমির ফিস ফ্রাই, ইনটেলেকচোয়াল জাবর কাটার জন্য। আজ এতদিন পরে সেই লক্ষ্মীর পাঁচালী মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হল। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, ব্রাত্য বাবু, একটু শিখুন মমতা ব্যানার্জীর কাছ থেকে।

উন্নয়ন এক শব্দ মাত্র, কেবল ‘উন্নয়ন’ কথাটা কোনও অর্থই বহন করে না। কাদের জন্য উন্নয়ন? কোন দিশায় উন্নয়ন? খেয়াল করে দেখুন গত এক বছরে এই বাংলাতে ফরেন ট্যুরিস্ট বেড়েছে ১৫ শতাংশ। হ্যাঁ, কেরালা আর গোয়ার সংখ্যা মেলালে সেটা হবে। তার প্রথম কারণ হল দুর্গাপুজো, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি, কার্নিভাল ইত্যাদি। ওদিকে দেখুন, উৎসবে নেই বলে যাঁরা শব সাধনায় বসেছিলেন, তাঁরা মানুষের সমর্থন হারাচ্ছেন। তাকিয়ে দেখুন রুরাল কনজামশন বাংলাতে বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ, সারা দেশের তালিকাতে দ্বিতীয়। কেন? ওই যে, সরাসরি মহিলাদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া, বিভিন্ন স্কিমে গ্রামীণ মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সাড়ে তিন শতাংশ মানুষের ডিএ-র দাবিতে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে ধুঁয়াধার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বামপন্থীরা। ফলাফল হাতে নাতে, মমতার সমর্থন, বামাদের শূন্য। মমতা খুব ভালো করে বুঝে গিয়েছেন, রাজ্যের ৭০ শতাংশ গরীব, নিম্নবিত্ত মানুষের সমর্থন তাঁর দরকার, রাজ্যের ২৮ থেকে ২৯ শতাংশ মুসলমান ভোটের সিংহভাগ তাঁর দরকার, রাজ্যের হিন্দুদের কাছে এক সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে তাঁদেরকেও বিজেপির মেরুকরণের হাত থেকে নিজেদের দিকে ধরে রাখাটা দরকার। আর তার জন্য যা যা করার, তিনি করে চলেছেন।

আরও পড়ুন: Aajke | পেনসিল হাতে বিজেপির লক্ষ্য এখন বেচারা জ্ঞানেশ কুমার

না, তিনি ডিএ দিচ্ছেন না, কিন্তু চপ শিল্পের কথা জেনে বুঝেই বলছেন। যাঁদের কাছে মেসেজ দেওয়ার, তাঁদের কাছে রোজগারের নতুন পথের কথা কেবল নয়, তার জন্য সাহায্যের কথা বলছেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের ভেতর দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কনজামশন বাড়ানোটা কম কথা নয়! কনজামশন বাড়লে ডিমান্ড বাড়বে, ডিমান্ড বাড়লে শিল্প বাড়বে, শিল্প বাড়লে স্কিলড তো বটেই আনস্কিলড লেবার লাগবে। হ্যাঁ, যোগান দেওয়ার জন্য তৈরি দিদিমণির ভাইয়েরা। হ্যাঁ, বছরে কস্ট-টু-কোম্পানি এক কোটি, তেমন চাকরি সম্ভবত একটাও নেই, কিন্তু বছরে ৮০ হাজার ১ লাখের রোজগার মিলছে, যাদের ভোটে উপচে পড়ে দিদিমণির ভান্ডার। এবং তিনি ভালো করেই জানেন বিজেপির বিরুদ্ধে রক-সলিড প্রতিরোধ গড়ে তুললে সঙ্গে থাকবেই সংখ্যালঘু মানুষজন। কিন্তু একটা ব্যাপার তো থেকেই যায়, যা করেছেন, যে প্রকল্প হয়েছে, যাতে ওই গরীব মানুষজনেরা সাহায্য পাচ্ছেন, সেগুলোকে তো মানুষের কাছে বলতে হবে। হ্যাঁ, মমতা বেছে নিলেন সহজতম উপায়। এবার পাঁচালীই হিট হবে গ্রাম বাংলায়, নাড়ি টিপে অসুখ বুঝে দাওয়াই আনলেন মমতা। এখনও রাজ্যের ১৬ শতাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখেন, মাত্র ৭ শতাংশ দারুণ অ্যাকটিভ, সেই বাজারে কেবল আইটি সেলের উপরে নয়, বাংলার লোক সংস্কৃতিকেই হাতিয়ার করল বাংলার মেয়ে। হ্যাঁ, ব্রাত্য বাবু কিছু তো শিখুন, উটের গ্রীবার মতো অন্ধকারের এলিট বিবরণের পাশে এই পাঁচালীকে রাখলেই বুঝতে পারবেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, উন্নয়নের পাঁচালী শুনেছেন? কেমন লাগল?

বিজেপি ঠিক যতটা অবাঙালি, বা বলা ভালো যতটা বাঙালি বিদ্বেষী, তৃণমূল ঠিক ততটাই বাঙালি হয়ে উঠতে চায়। বিজেপির সমস্যা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে নিয়ে, তৃণমূল রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে আঁকড়ে ধরতে চায়। বিজেপির প্রচারে ভোজপুরি গান বাজে, তৃণমূলের প্রচারে লক্ষ্মীর পাঁচালী। হ্যাঁ, কোথাও বাংলার নাড়ি নক্ষত্রের সঙ্গে দিদিমণির এক অসম্ভব সহ অবস্থানই এই বাংলাতে তৃণমূলকে বিজেপির থেকে অনেক অনেক এগিয়ে রেখেছে।

দেখুন ভিডিও: 

Read More

Latest News