Wednesday, October 22, 2025
HomeScrollAajke | হিন্দু হিন্দু করে করে ফুটেজ খেতে এসে, জনতার আদালতে গেল...
Aajke

Aajke | হিন্দু হিন্দু করে করে ফুটেজ খেতে এসে, জনতার আদালতে গেল হঠাৎ ফেঁসে?

হিন্দু অথবা মুসলিম - শুভেন্দু কিন্তু অপমান করছেন সকলকেই!

যে ছবিটা আমাদের খুব চেনা, যে ছবিটা আমরা দেখেই থাকি, তা হল – নেতা মন্ত্রীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, আর চুপ করে সসম্ভ্রমে তাকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ। হয়তো বা ফিসফিস করে বলছে, বাপরে! কী দাপট! কিন্তু মানুষ যখন আর চুপ করে থাকে না, কী হয় তখন? অনেক কিছুই হয়, হয়েছে। ফরাসী বিপ্লব হয়েছে, নভেম্বর বিপ্লব হয়েছে, স্বৈরাচারী চেসেস্কু বা গদ্দাফিকে রাস্তার ধুলোয় টেনে নামিয়েছে এই সাধারণ মানুষই। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। তুষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে জ্বলতে কখন যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, কেউ জানে না। ঠিক এই ঘটনাই কিন্তু ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে। দাপুটে বিরোধী দলনেতা বলে পরিচিত শুভেন্দু অধিকারীকে এবার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের। বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ছে শুভেন্দুর কনভয়ে। কী হয়েছে ঠিক?

সত্যিটা হল একটা দু’টো নয়। একইদিনে সাত-সাতটা জায়গায় বিরোধী দলনেতাকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনার সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গ। রবিবার কালীপুজোর উদ্ধোধনে একের পর এক বিক্ষোভের মুখে পড়েন শুভেন্দু অধিকারী। এই নিয়ে গরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। শুভেন্দু কী বলছেন? তাঁর কাছ থেকে যা আশা করা যায়, তাই। বিক্ষোভকারী, প্রতিবাদীদের দেগে দিয়েছেন অনুপ্রবেশকারী, হামলাবাজ বলে।

খোকাবাবু যায় নামাবলী গা-য়। হ্যাঁ, হিন্দুহৃদয়সম্রাট কাঁথির খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারী ধর্মের নামাবলী গায়ে চাপিয়ে যুদ্ধ জিতবেন ভেবেছিলেন। ভেবেছিলেন, চিৎকার করলেই যুদ্ধে জেতা যাবে। আর কী ভেবেছিলেন? ভাতের থেকে জাত বড়, এরকম কাঁচা সুড়সুড়ি দিলেই মানুষ ছুটে এসে বিজেপির পতাকার নীচে লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু যেটা ভাবেননি সেটা হচ্ছে, এটা উত্তরপ্রদেশ নয় পশ্চিমবঙ্গ। শুভেন্দুবাবুর হয়তো মনেই নেই, এই বাংলাতে একটা রেনেসাঁ হয়ে গিয়েছে, একটা নবজাগরণ। একের পর এক মনিষী এই বাংলায় তাঁদের সাধনার ফল ঢেলে দিয়ে গিয়েছেন। কী হয়েছে তার ফলে? বাংলার মানুষ প্রশ্ন করতে শিখেছে। কোনও নেতা, কোনও মন্ত্রী, কোনও পুরোহিত যাইই বলুক না কেন, বাংলার মানুষ কিন্তু বিনা প্রশ্নে মেনে নেয় না। আর সেই প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। গোঁসা হয়েছে তাঁর। বোঝাই যাচ্ছে, এত প্রশ্নের জবাবদিহি করতে অভ্যস্ত নন তিনি। মধ্যযুগীয় জমিদারের মানসিকতা নিয়ে ২০২৫-এর গণতান্ত্রিক ভারতে রাজনীতি করতে এলে এই অবস্থাই হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: Aajke | SIR, বিজেপির নেতিয়ে পড়া নেতাদের চাঙ্গায়নী সুধা? এনার্জি বুস্টার?

২০ অক্টোবর এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘গতকাল অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর ২০২৫, এই তারিখে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় আমার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি তথা কালীপুজো ও দীপাবলির উৎসবে যোগ দিতে যাওয়ার সময়, একাধিক স্থানে দুষ্কৃতীরা আমাকে আক্রমণ করে।’ শুভেন্দুর দাবি, কাশীনগর, কুলতলি, খুঁটিবাজার, রায়দিঘী, নবদোকান, কৃষ্ণচন্দ্রপুর – এইসব এলাকাতেই এই অতর্কিত আক্রমণ সংঘটিত করা হয়।

এখন প্রশ্ন এই, শুভেন্দু দুষ্কৃতী বলছেন কাদের? অন্য সব জায়গার কথা না হয় ছেড়েই দিচ্ছি। শুধু যদি রায়দীঘীর কথাই বলি, যে জায়গার কথা শুভেন্দু নিজেই উল্লেখ করেছেন, কী হয়েছিল সেই রায়দীঘীতে? তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। রবিবার রায়দীঘি বিধানসভার সাতঘড়া এলাকায় কালীপুজো উদ্ধোধন করতে যাওয়ার সময় তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তা অবরোধ করেন শুভেন্দুর। কী স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা? তাঁরা বলছিলেন, বাংলার শ্রমিকদের উপর অত্যাচার বন্ধ করুন, তারপর রাজনীতি করুন। বাংলার গরিব মানুষের ঘরের টাকা দিন, ১০০ দিনের কাজের টারা দিন, তারপর রাজনীতি করুন। আর শুভেন্দু কী বললেন? তিনি বললেন, “এরা বর্বর। আমাকে ধর্ম পালন করতে বাধা দিচ্ছে।” এরপর পুরানো দিনের বাংলা নাটকের ডায়ালগ বলতে ইচ্ছে করছে- চমৎকার! আবার বলি চমৎকার! মানুষ তাঁর হকের দাবি তুললে, সে বর্বর। কোন ধর্ম পালনে এরা আপনাকে বাধা দিচ্ছে শুভেন্দুবাবু? এরা আপনাকে রাজনীতি করতে বারণ করছে। এখন রাজনীতি করাই যদি আপনার ধর্ম হয়, তাহলে আমাদের প্রশ্ন – আপনি সেই ধর্ম পালন করতে পারছেন তো? রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনার জাত আছে তো? দিনের পর দিন মমতার ছায়ায় বেড়ে উঠে আজ বিজেপির হয়ে গলা ফাটিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করাই কি আপনার ধর্মপালন?

যাকগে সে কথা। আসল কথা হল, মানুষ কিন্তু বিরোধী দলনেতার রাস্তা আটকাচ্ছে। কিন্তু কেন? দিনের পর দিন উগ্র হিন্দুত্ববাদের কথা শুভেন্দু বলে এসেছেন, সে সব কথা কি উল্টো বুঝলি রাম হয়ে গেল? শুভেন্দু যাই বলুন না কেন, জাতের থেকে যে ভাত বড়, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। স্বামী বিবেকানন্দ তো কবেই বলেছেন, “খালি পেটে ধর্ম হয় না।” আর তাই, এবার দেখে নি চলুন, শুভেন্দুকে অধিকারীকে নিয়ে, তার উগ্রহিন্দুত্ববাদ নিয়ে সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন।

শুভেন্দু যথারীতি আঙুল তুলেছেন রাজ্য সরকারের দিকে। পুলিশ নাকি দুষ্কৃতীদের জমায়েত করতে সাহায্য করেছে। মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের উস্কানি দিয়ে, হামলা চালানো হয়েছে শুভেন্দুর উপর। এটা একটা নতুন অ্যাঙ্গেল। খুবই বিপজ্জনক একটা সিদ্ধান্ত। প্রশ্ন করলেই আপনার জাত তুলে কথা বলা হবে। প্রশ্ন করলেই জানতে চাওয়া হবে, আপনি কি টুপি পরেন না দাঁড়ি রাখেন? অর্থাৎ, প্রশ্ন করে সংখ্যালঘুরা, আর উচ্চবর্ণের হিন্দুরা কী করে? শুভেন্দুর হাতের পুতুল হয়ে নাচে? হিন্দু অথবা মুসলিম – শুভেন্দু কিন্তু অপমান করছেন সকলকেই। এরপর বিরেধী দলনেতাকে আর একটাই কথা বলার। না আমার নয়, রবীন্দ্রনাথের কবিতা। তার একটা শব্দ পাল্টে দিয়ে বলছি- ‘রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে। শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ পরে, ওরা প্রশ্ন করে….।’

Read More

Latest News