চিরকুমার এই শব্দটা কারও নামের সামনে আপাতত বসানোটা বন্ধই হয়ে গেছে, কে কোথায় সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার তা তো কারও জানা নেই, কাজেই সত্যিই কেউ চিরকুমার কি না তেমন গ্যারান্টি না থাকলে অবিবাহিত বলাই ভালো। তো এবারে আসল বিষয়ে আসা যাক। অবিবাহিত শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ে হেভভি চিন্তিত। আরএসএস বিজেপির চিন্তন বৈঠকে রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্য, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমলেও হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেই হারের হ্রাস অনেক বেশি। আর হিন্দু জনসংখ্যা যদি কমে যায়, মুসলমান জনসংখ্যা যদি বেড়ে যায় তাহলে বিজেপি কী করে ক্ষমতায় আসবে? তাই হাম দো হামারা চার কিংবা ছয়, কিংবা আট, এইরকম কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছেন আমাদের অবিবাহিত কাঁথির খোকাবাবু। সমস্যার সূত্রপাত অবশ্য বহু আগেই, এ রাজ্যে কমবেশি ৩৩ শতাংশ মানুষ মুসলমান ধর্মের। তো আমাদের খোকাবাবু জানিয়েই দিয়েছেন ওনাদের ভোট চাই না, এখন ওনাদের নেত্রী মাফুজা খাতুন বা তাঁর বাড়ির লোকজনেদের ভোট উনি চান কি না তাও জানা নেই। তাহলে পড়ে থাকল ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট। সেই ভোটের কমবেশি ৭৮৫ শতাংশ পেলে তবেই একমাত্র তাঁর দল এ রাজ্যে জিতে পারবে, সেই হিসেবে এখনই কম করে ৫-৬ শতাংশ ভোট ওনাদের দিকে নিয়ে যেতে হবে, ৫-৬ শতাংশ ভোট মানে? এক বিরাট ব্যাপার, তা হচ্ছে না, যত দিন যাচ্ছে ততই বাংলা তাদের হাতের থেকে দূরে আরও দূরে সরে যাচ্ছে, দৃশ্যতই হতাশ শুভেন্দু সেই জন্যেই বলেছেন যে জনসংখ্যা বাড়াতে হবে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। শুভেন্দু অধিকারী ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে দুটো কথা।
উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায় ১ এবং ২ মার্চ আরএসএস ‘সমন্বয় বর্গ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমন্বয় বর্গের মানে কী? আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, হাতের কাছে পেলে শান্তিকুঞ্জের এই খোকাবাবুকে জিজ্ঞেস করে নেবেন। আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে বিজেপি-সহ প্রত্যেকটি সহযোগী সংগঠনের জন্য ‘প্রশিক্ষণ শিবির’-এ হাজির ছিল সঙ্ঘ পরিবারের ছাতার তলায় থাকা ৩৬টা সংগঠনের প্রত্যেকটার প্রতিনিধি হাজির ছিলেন প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিজেপির প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন সুনীল বনসল, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ-সহ প্রায় ২০ জন। আবার এঁদের সকলকে ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার জন্য ছিলেন আরএসএসের দুই সহ সরকার্যবাহ রামদত্ত চক্রধর এবং অরুণ কুমার। এই সরকার্যবাহ শব্দটা বাংলা না সংস্কৃত না মারাঠা, আমার জানা নেই।
আরও পড়ুন: Aajke | মমতা যা বললেন, বিজেপি সেটা মেনেই মাঠে নামল
এই বৈঠকেই রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যার আশাপ্রদ বৃদ্ধি না হওয়া নিয়ে মন্তব্য করেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে, আর মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমলেও হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেই হারের হ্রাস নাকি অনেক বেশি। হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার নানা কারণও শুভেন্দু অধিকারী খুঁজে বার করেছেন, তার মধ্যে যেগুলো ওনার মতে অন্যতম সেগুলো হল হিন্দু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে না করা এবং লিভ-ইনের প্রবণতা বৃদ্ধি, অনেক দম্পতির মধ্যে সন্তানের জন্ম দেওয়ার অনিচ্ছা এবং অনেকের একটি মাত্র সন্তান থাকা। কী কাণ্ড ভাবুন, উপস্থিত দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীর উপরে চাপটা ভাবুন, যদিও ওনারা দুজনেই তরুণ বা তরুণী নন। এবং এই কথায় আরএসএস একমত হয়েছে যাঁদের সরসংঘচালক অবিবাহিত হবেন এমনটাই নিয়ম। তাঁদের প্রচারকরা বিবাহ করেন না, করলেও স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন না, উদাহরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি। সেই তাঁরা এক অসম্ভব ভুল আর মিথ্যে তথ্যকে সামনে রেখে তাঁদের অবিবেচক বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন। সত্যিটা কী? সত্যি হল মুসলমানদের গ্রোথ রেট হিন্দুদের তুলনায় অনেক বেশি কমছে এবং তা বছর ১৫-র মধ্যে হিন্দু গ্রোথ রেটকে ছুঁয়ে ফেলবে। এবং এটা একটা গ্লোবাল ফিনোমেনা, সারা পৃথিবীতেই শিক্ষিত, কিছুটা হলেও সচ্ছল পরিবারে জনসংখ্যা কমছে, আর অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশে সন্তান জন্মের হার অনেকটাই কমছে। সেই ধারা মেনেই আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সমাজে বার্থ রেট কমছে, সে হিন্দুই হোক বা মুসলমানই হোক। কিন্তু নিজেদের সংগঠন নয়, ইস্যু বেসড পলিটিকস নয়, জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি নয়, শুভেন্দু অধিকারীর মনে হল আদত সমস্যা হল হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়া, যার জন্যই এ রাজ্যে বিজেপি চেষ্টা করেও কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারছে না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমাদের রাজ্যের বিরোধী অবিবাহিত দলনেতা হিন্দু যুবক যুবতীদের বিবাহ করতে না চাওয়া বা বিবাহের পরে সন্তান জন্ম দিতে না চাওয়ার ফলে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন। আপনাদের কী মনে হয়? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ধরে নিই, হ্যাঁ, কতকিছুই তো আমরা ধরেই নিই, এক হতদরিদ্র মানুষও একদিন সকালে উঠে কোটি কোটি পতি হয়ে গেছে বলে মনে করতেই পারে, তো আমরাও ধরেই নিই যে সত্যিই হিন্দু যুবক যুবতীরা বিয়েতে অনিচ্ছুক, সন্তানের জন্ম দিতে অনিচ্ছুক আর তাই হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে আর সেই কারণে বিজেপি এই বাংলাতে পিছিয়ে পড়ছে, শুভেন্দু অধিকারীর কথা মতো যদি আমরা এই কথা ধরে নিই, মেনে নিই, তাহলেও সমস্যা হল, আজ থেকে লাগাতার প্রচার করে হিন্দু যুবক যুবতীদের বিয়ে দেওয়ার পরেও কমসম করে ১৯ বছর পরে সাবালক হিন্দু ভোটার হয়ে উঠবে, তার আগে তো সম্ভব নয়। হ্যাঁ, বিজেপির উত্থান আপাতত ১৯ বছর পরেই সম্ভব, তার আগে যে সম্ভব নয়, তা তো বিরোধী দলনেতা নিজেই বলে দিচ্ছেন।