বসিরহাট: স্বাধীনতার পর দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও এখনও জল কষ্টে ভুগছে সুন্দরবনের (Sundarbans) ৯ টা গ্রাম। সরকার বদল হয়েও তাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতি সায় আজও পানীয় জল (Water Crisis) থেকে বঞ্চিত সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার মানুষজন। বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক দুলদুলি গ্রাম (Drinking Water Problem Dulduli Village) পঞ্চায়েতের ঘটনা। দেশ যখন চাঁদে পৌঁছাচ্ছে। ঠিক তখনই পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার মানুষজন। বাড়ে গরম কাল পরলে দুশ্চিন্তা বাড়ে এই সব এলাকার মানুষদের। দুলদুলি গ্রাম (Dulduli Village) পঞ্চায়েতের লেবুখালী গ্রামে গেলে উঠে আসছে সেই রকমই ছবি।
বসিরহাট (Basirhat) থেকে সুন্দরবন যাওয়ার অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার এই লেবুখালি। এখান থেকেই ভান্ডারখালি, হাটগাছা থেকে শুরু করে কালিতলা, হেমনগর ও শামসেরনগর পর্যন্ত একেবারে সুন্দরবনের কাঁটাতার অবধি পৌঁছে যান দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। কিন্তু সেই প্রবেশদ্বারেই এখনও যেন মধ্যযুগীয় ছোঁয়া লেগে রয়েছে। অভাব পরিস্রুত পানীয় জলের। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস বা বাম বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলেও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ভুগছেন পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাবে। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয় না। দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ লেবুখালী, বিধানবাড়ি, তিন নম্বর লেবুখালী ও স্বরূপকাটি সহ একাধিক গ্রামে পানীয় জলের কোনো প্রকল্পই যেন চোখে পড়ে না। বাধ্য হয়েই এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে পুকুরের জল পান করতে হচ্ছে। এমনকি যে সমস্ত কল এলাকায় রয়েছে সেই কলগুলি থেকে উঠছে নোনা জল। একদিকে পুকুরের জল অন্যদিকে কলের নোনা জল খেয়ে প্রায়শই আন্ত্রিকের মতো পেটের সমস্যার পাশাপাশি ঘা, পাঁজরা বা চুলকানির মতো চর্মরোগ তো লেগেই থাকে। এমনটাই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন: নথি না রেখেই বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু, পঞ্চায়েতে অফিসে এ কী কাণ্ড!
গ্রামবাসীরা এও অভিযোগ করেন কয়েক কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে তারপরে তাদেরকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হয়। আবার কখনও পানীয় জল কিনেও খেতে হচ্ছে। কখনো ১৫ টাকা কখনো কুড়ি টাকা বা কখনো ৩০ টাকা দিয়ে সেই পানীয় জল তারা বাড়িতে নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে তাদের কাছে সেই জল কেনা একপ্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই বাধ্য হয়েই তারা পুকুর তার কলের ওই নোনা জল দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে চলেছেন। সরকারি তরফে যে সমস্ত কল গুলি এলাকায় বসানো হয়েছিল সেগুলি একেবারে ভগ্নপ্রায় দশা। বেশিরভাগ নলকূপ থেকে জল ওঠে না। সামনে গ্রীষ্মকাল তাই নতুন করে আবার ভোগান্তির আশা করছেন সুন্দরবনের এই প্রান্তিক এলাকার মানুষজন। কারণ বছরের অন্য সময় নলকূপ থেকে নোনা জল উঠলেও গ্রীষ্মকালে তা একেবারেই জলশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে। একাধিকবার প্রশাসনকে জানালেও প্রশাসনের তরফে নলকূপ বসানোর কোন বন্দোবস্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য পাইপলাইন করা হয়েছে। কিন্তু সেই পাইপ লাইনগুলোর অবস্থা এতটাই বাজে তার মধ্যে দিয়ে যদি জল যাওয়া শুরু করে তাহলে খুব শীঘ্রই তা ভেঙে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিধান মুন্ডা বলেন, “আমরা সরকারি প্রকল্প থেকে গ্রামগুলিতে নতুন করে টিউবওয়েল বসানোর কাজ খুব দ্রুতই শুরু করবো।
অন্যদিকে যে সমস্ত পাইপলাইন গুলি বসানো হয়েছে সেই পাইপ লাইন গুলির পাশে পর্যাপ্ত পাইলিং না থাকায় আমরা ঠিকাদারকে কাজ কর বন্ধ রাখতে বলি। নতুন করে টেন্ডার দিয়ে পুনরায় সেই পানীয় জলের পাইপ লাইনের কাজ শুরু হবে।” বিষয়টাই নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন সুন্দরবনের মানুষজন এখনো পানীয় জল পেলেন না। এই সরকার দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। মানুষ তার জবাব আগামী দিনের ভোট গুলিতে দেবে।” বিষয়টি নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শহীদুল্লাহ গাজী বলেন, “গ্রামবাসীরা যে দাবি করছে তার সঙ্গে আমি কিছুটা হলেও সহমত। এমনিতেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়ে অনেক প্রকল্পের কাজই আটকে রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিঙ্গলগঞ্জের কোনায় কোনায় আমরা ভ্যান মারফত জল পাঠিয়ে দিচ্ছি। যে সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে সেগুলি দ্রুত সমাধান করে সেখানে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে।” এই ছবি শুধুমাত্র হিঙ্গলগঞ্জের পাঁচটি থেকে ছয়টি গ্রামের নয়। সুন্দরবনের মিনাখাঁ, সন্দেশখালি ১ ও ২ নং ব্লক, হাড়োয়া ও হাসনাবাদ ব্লকের একাধিক গ্রামগুলিতে এরকম ধরনের অভিযোগ।
অন্য খবর দেখুন