Home Scroll Aajke | দুয়ারে সরকার, আগামী দিনে প্রত্যেক সরকার নকল করবে

Aajke | দুয়ারে সরকার, আগামী দিনে প্রত্যেক সরকার নকল করবে

0

বামফ্রন্ট জিতেছে, নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। গতানুগতিক রাজভবন ছেড়ে রাইটার্সের সামনে মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পরে সভাতে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, আমরা রাইটার্স থেকে সরকার চালাব না। মর্মার্থ, মানে যা বলতে চেয়েছিলেন তা হল আমরা মানুষের মধ্যে গিয়ে সরকার চালাব। তো জ্যোতিবাবু বকখালিতে চেয়ারে বসে আছেন, ছবি ছাপা হয়েছিল আজকালে, কে তুলেছিলেন অমিত ধর না কুমার রায় মনে নেই। কিন্তু সেই দিগন্ত বিস্তৃত ছবিতে জ্যোতি বসু একা, সাধারণ মানুষ তো ছেড়েই দিন, দলের লোকেরাও কেউ সেই ছবিতে ছিল না, জ্যোতি বসু ব্রিগেডে জনসমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন মঞ্চের উপর থেকে, বিধানসভার সামনে জল জমেছে চেয়ার শুদ্ধু ওনাকে বয়ে নিয়ে আনা হয়েছে শুকনো জায়গায় যেখান থেকে তিনি ওনার গাড়িতে উঠেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে আমি বুদ্ধ ভট্টাচার্যকে একবারই ওই ভ্যানগাড়িতে চড়তে দেখেছি, পাশে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মাস তিন চার পরে সম্ভবত নির্বাচন ছিল। বামফ্রন্ট সরকারের নীতি ছিল বটে মানুষের কাছে যাওয়ার কিন্তু তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই রাইটার্স থেকেই শাসন চালিয়েছেন, সরকার চালিয়েছেন। আর সেই জায়গায় এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুট করে নয়, একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন এই সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক দিনের চিন্তা ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম সরকার তার যাবতীয় কাঠামো নিয়ে হাজির হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। একবার গিয়ে দেখুন মানুষ কীভাবে সেই দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। নানান কাজকর্ম চলছে একসঙ্গে। অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল-এর এক নজির এই দুয়ারে সরকার। তাই সেটাই বিষয় আজকে, দুয়ারে সরকার, আগামী দিনে প্রত্যেক সরকার নকল করবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এসেই একটা কথা বুঝিয়ে দিয়েছিল, তারা আক্ষরিক অর্থেই রাইটার্স থেকে রাজ্য চালাতে চায় না। রাইটার্সের জড় কাঠামো থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপটাই ছিল ওই বিল্ডিং থেকে বের হওয়া। এক অসম্ভব কাজ হয়ে গেল অনায়াসে, লালবাড়ির লাল ফিতের বাঁধন কথাটার আক্ষরিক অর্থ ভেঙে গেল।

আরও পড়ুন: Aajke | ও শুভেন্দুবাবু, এ বাংলায় বিজেপির আর একটা উইকেট পড়ল

এরপরে তিনি যা করেছেন তাকে বলে এক ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড। তিনি ঘুরতে শুরু করলেন জেলায় জেলায়, তাকিয়ে দেখুন ২০১১-র জুলাই, অগাস্ট সেপ্টেম্বর তার পরের কিছু মাসের দিকে, এই জেলায়, ওই জেলায় তিনি যাচ্ছেন, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন। বুঝতে পারছেন যে এই অসংখ্য আম আদমির কাছে যেতে আরও কার্যকর পদ্ধতি চাই। এবারে তিনি তাঁর এই জেলায় যাওয়ার সঙ্গে জুড়ে দিলেন আমলাদের। আবার খেয়াল করুন, আমলারা বাসে করে যাচ্ছেন, ছোট, মেজ সেজ মাঝারি থেকে বড় থেকে এক্কেবারে মাথায় বসে থাকা আমলারা সেইখানে হাজির যেখানে তিনি চাইছেন। জেলায় বসে জেলার জনপ্রতিনিধি আর আমলাদের বসিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন, কী করতে হবে বলছেন, কেন হচ্ছে না সেই প্রশ্ন করছেন, উপায় বাতলাচ্ছেন। হ্যাঁ, সেটাই ছিল এই দুয়ারে সরকারের প্রথম ধাপ। বেশ কিছু সরকার আছে, মুখ্যমন্ত্রী আছেন যাঁরা তাঁদের বাড়ির সামনে এক নিয়মিত পাবলিক ভিজিটের ব্যবস্থা করেন, খানিকটা দেওয়ানই আম-এর ব্যবস্থা, আসুন আপনি আপনার অভিযোগ জানান। হ্যাঁ, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এইখানেই ঠেকে আছে বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল-এর ধারণা। কিন্তু মমতা প্রশাসন নিয়ে জেলায় জেলায় যাওয়া শুরু করল। কিছুদিন পরেই বুঝলেন লক্ষ কোটি আমজনতার কাছে এভাবে পৌঁছনো যাবে না। এবারে এল দিদিকে বলুন, ফোন করুন, মানুষ ভরসা করে ফোন করলেন এবং দেখলেন পাথর নড়ছে। এবং শেষমেশ দুয়ারে সরকারের ধারণা। সরকার যে যে প্রকল্পগুলো করছে, ঘোষণা করেছে তার যে কোনওটা যদি আপনি না পান চলে আসুন, সবটা নথিবদ্ধ থাকবে। অমুক গ্রামের তমুক বিধবা ভাতা পাননি, তাঁকে চক্কর লাগাতে হত নেতাদের পেছনে এবারে সরকার হাজির তাদের সামনে। এক ডাইরেক্ট পার্টিসিপেশনের ধারণা, মানুষ সরকারের কাজের অঙ্গ হয়ে উঠছে। অন্য রাজ্য থেকে আমলারা ব্যাপারটা দেখতে আসছেন, জানতে চাইছেন হচ্ছেটা কী? ঠিক যেভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ধাপ শুরু হয়েছিল কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এমনকী স্বাস্থ্যসাথীতে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠা মহিলাদের নামে কার্ড করা দিয়ে, এবং ঠিক যেভাবে সেই সব প্রকল্প আজ দেশের প্রতিটা অঙ্গরাজ্যে কার্বন কপি করা হয়েছে, হচ্ছে, ঠিক সেইভাবেই এই দুয়ারে সরকারের কার্বন কপি হবে, করবে দেশের প্রতিটা সরকার, করতেই হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, সরকার মানে কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং অথবা নবান্নের বদলে এই যে দুয়ারে সরকার যেখানে সরকার এসে হাজির হচ্ছে আপনাদের পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে তাতে কি সত্যিই মানুষের সুবিধে হচ্ছে? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।

১৯৭৮-এ সিপিএম সালকিয়া প্লেনাম করেছিল, এক জরুরি বৈঠক, যাতে বলা হয়েছিল তারা তাদের কাজের উদাহরণ দিয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা ভারতে। গোবলয়ে বাম সরকারের কাজের কথা শুনে বুঝে সেখানেও মানুষ গড়ে তুলবে বাম সরকার, শক্তিশালী হবে সিপিএম দল আর তারপরেই সেই জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব। তো আপাতত বাংলাতে শূন্য, ওড়িশাতে শূন্য, বিহারে দুই, উত্তরপ্রদেশে শূন্য, রাজস্থান আর মহারাষ্ট্রে একেই হল বৃদ্ধি। তাদের একটা প্রকল্প একটা কাজও উদাহরণ হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু মমতা সরকারের একটার পর একটা প্রকল্প বাকি রাজ্যের সরকার, এমনকী ইউনিয়ন সরকারও গ্রহণ করছে, কার্বন কপির মতো ছেপে দিচ্ছে। মিলিয়ে নেবেন, আগামী দিনে প্রতিটা রাজ্য এই দুয়ারে সরকার জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করবে। সিপিএম কেবল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কাজে করে দেখাতে পারেনি, তৃণমূল সরকার সেই কাজটা করে দেখিয়েছে, রাইটার্স বা নবান্ন থেকে নয়, মানুষের মধ্যে থেকেই সরকার চালাচ্ছে, এটাই এই সরকারের ভিত্তি।