মুর্শিদাবাদ: জাতিগত শংসাপত্র জাল করে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই! আর সেই শংসাপত্র জাল প্রমাণিত হওয়ায় এবার পদ খোয়ালেন মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কুসুম সাহা। জঙ্গিপুর মহকুমা শাসকের তরফ থেকে বর্ষশেষের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়।
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক তিনি জানিয়েছেন, ‘মহকুমা শাসক ঘটনার তদন্ত করে জানতে পেরেছে পঞ্চায়েত প্রধান কুসুম সাহা জনৈক ভবেশ সাহার নথি জাল করে তাঁর জাতিগত শংসাপত্রটি পেয়েছেন। গত ৩১ মার্চ ২০২৩ সালে ইস্যু হওয়া কুসুম সাহার ওবিসি শংসাপত্রটি ইতিমধ্যেই বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর পঞ্চায়েত সদস্য পদ এবং প্রধান পদও বাতিল করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: দেশে বাড়ছে স্কুলের সংখ্যা, কিন্তু কমছে পড়ুয়া!
উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুসুমদেবী বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ নম্বর সংসদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাম প্রার্থী হিমাংশু শেখর সাহাকে পরাজিত করেন এবং পরবর্তীকালে তিনিই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হন।
পরাজিত হিমাংশু প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন কুসুমদেবীর পৈতৃক বাড়ি বিহারে এবং তিনি তাঁর জাতিগত ওবিসি শংসাপত্রটি জাল করে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছেন।
হিমাংশুর থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর জঙ্গিপুর মহকুমা শাসকের নির্দেশে একটি তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জানা যায় কুসুমদেবী অবৈধভাবে তাঁর ওবিসি শংসাপত্রটি জাল করেছেন।
এরপর জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসক কুসুম সাহাকে ওবিসি সার্টিফিকেট জাল করার জন্য ‘শোকজ’ করেন এবং তাঁকে ওবিসি শংসাপত্রটি জমা করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই বিষয় নিয়ে হিমাংশু জানান,’ কুসুমদেবীর বাড়ি বিহারে। তাঁর বিয়ে হয়েছে ফরাক্কার বাসিন্দা জনৈক নারায়ণ সাহার সঙ্গে। নারায়ণবাবুর এক দূর সম্পর্কের ভাইপো ভবেশ সাহাকে কুসুমদেবী নিজের ভাই হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জাল ওবিসি শংসাপত্র তৈরি করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়েছেন ।’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায় কুসুমদেবী যে ওবিসি শংসাপত্রটি জমা করে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছিলেন সেখানে ভবেশ সাহার বাবার নাম লেখা রয়েছে কালীপ্রসাদ সাহা। কিন্তু সরকারি পোর্টালে ভবেশ সাহার বাবা হিসেবে জনৈক ক্ষিতিশচন্দ্র সাহার নাম রয়েছে। এই নথি সামনে আসার পর এসডিও কুসুম সাহাকে ‘শোকজ’ করেন। যদিও এসডিও-র নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন কুসুমদেবী।
হাইকোর্টের নির্দেশে কুসুম সাহা এরপর ‘অ্যাপিলেট অথরিটি’ এডিএম -এর কাছে আবেদন করলেও তাঁর আবেদন খারিজ হয় এবং এসডিও-র জাতিগত শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশিকা বজায় থাকে। গত ২৬ ডিসেম্বর কুসুমদেবীর উপস্থিতিতে এসডিও অফিসে ফের এই সংক্রান্ত একটি শুনানি হয়। মঙ্গলবার তাঁর পঞ্চায়েত সদস্যপদ বাতিল করে জেলা প্রশাসন।
গোটা বিষয়টি নিয়ে কুসুম সাহার প্রতিনিধি নারায়ণ সাহা বলেন, ‘এডিএম -এর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যে আমি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। তার মধ্যে কীভাবে আমার সদস্যপদ বাতিল হলো জানা নেই। এই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য আগামীকাল আমি আবার কোর্টের দ্বারস্থ হব এবং জেলাশাসকের কাছেও আবেদন করব।’
দেখুন অন্য খবর