পশ্চিম মেদিনীপুর: নারী শক্তির আরাধনায় নারীরাই ব্রাত্য। এমনই অদ্ভুত এক প্রথা চলে আসছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির (Narajole Raj Bari) দুর্গাপুজোয় (Durga Puja)। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই পুজো এবছর পা দিচ্ছে ৬১২ তম বছরে। এই রাজবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে বিভিন্ন মনীষীর। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (Narajole Raj Bari Durga Puja) । এই রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা। রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিত হন। এখানে মায়ের সাথে থাকেনা কার্তিক,গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। অষ্টধাতুর প্রতিমা হওয়ায় দেবীর বিসর্জন হয় না। শুধুমাত্র ঘট ডুবিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হয়।
১৬ দিন ধরে করা হয় মায়ের পুজো। কিন্তু নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় রয়েছে অদ্ভুত প্রথা। অঞ্জলি দিতে পারেন না নারীরা। খেতে পারেন না প্রসাদ। আয়োজন থেকে রান্না সবকিছুতে অংশ নিলেও, পুজোর আসরে তাঁদের প্রবেশ নিষেধ। তবে বিজয়ার দিনে সিঁদুর খেলায় শামিল হন তাঁরা।
আরও পড়ুন: বিষ্ণুপুরের ৩৫০ বছরের বনেদি দুর্গাপুজো, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী এই বনেদি বাড়ি
মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে নাড়াজোল রাজবাড়িতে। রাজা নরেন্দ্রলাল খান ও তার পুত্র দেবেন্দ্রলাল খান প্রকৃত দেশপ্রমিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ক্ষুদিরাম বসুর বাবা ছিলেন রাজবাড়ির কর্মচারী। নেতাজি, গান্ধীজি, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর থেকে ইন্দিরা গান্ধী —- অনেক মনীষীর আগমনে মুখর হয়েছিল এই রাজপ্রাসাদ।
ইতিহাস বলছে, বর্ধমান রাজার নায়েব উদয়নাথ ঘোষ মায়ের স্বপ্নাদেশে শুরু করেন এই পূজা। ১০৩০ বঙ্গাব্দে মুঘল আমলে আকবরের নাজিম সাহেব এই রাজবাড়িতে এসেছিলেন। তাকে খাওয়াদাওয়া ও উপঢৌকন দেওয়ার জন্য দিয়েছিলেন ‘খান’ পদবি । সময়ের সাথে ঘোষ পরিবার হয়ে ওঠে ‘খান’ বংশ, আর তাদের হাত ধরেই সূচনা হয় নাড়াজোল রাজবাড়ির। এই রাজবাড়ি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়,আগাছায় ঢাকা পড়ছে রাজবাড়ির সৌন্দর্য্য ও কারুকার্যের নিদর্শন। কিন্তু প্রথা মেনে আজও অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিত হন। তবে কেন নারীরা ব্রাত্য থাকে এই পুজোর, সে কারণ আজও অজানা।