২০১১ সালের ২ এপ্রিল। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় দিন। ২৮ বছর পর এই দিনেই মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। একইসঙ্গে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের নজিরও গড়ে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু সেই রাতে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজও ধোঁয়াশা। তারমধ্যে সবথেকে বড় প্রশ্ন ধোনিকে যুবরাজের আগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার ছিল? সেই ভারতীয় দলই এই নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। সেইসময় ভারতীয় দলের মনোবিদ ছিলেন প্যাডি আপটন। তাঁর মতে এই সিদ্ধান্ত ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ইশারায় কোচ গ্যারি কার্সটেনকে মহেন্দ্র সিং ধোনি জানিয়েছিলেন তিনি আগে নামবেন। কারণ হিসেবে পরে ধোনি বলেছিলেন যে সেইসময় মুরলিধরনকে সামলানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর বায়োপিকেও দেখিয়েছিলেন যে আগে ব্যাট করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরই ছিল।
কিন্তু এই প্রসঙ্গে ভারতীয় দলের ওপেনার শেহবাগ আবার অন্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে ধোনিকে যুবরাজের আগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল শচীন তেন্ডুলকরের। বিরাট কোহলি আগে আউট হলে ধোনি নামুক আগে যাতে ‘লেফট-রাইট’ কম্বিনেশন অটুট থাকে- এটাই চেয়েছিলেন মাস্টার। শচীন শেহবাগকে দিয়ে ব্যালকনিতে বার্তাও পাঠান। প্রথাগত স্ট্র্যাটেজি বদলের পক্ষে ছিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর। স্পিনারদের ভালো খেলেন মাহি। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতে দুই কোয়ালিটি অফ স্পিনার ছিল শ্রীলঙ্কা দলে। তাই শচীন চেয়েছিলেন আগে নামুক ধোনি। পরবর্তীতে সেটাই হয়েছিল।
তবে এটা যারই মস্তিষ্কপ্রসূত হোক এই ‘গ্যামবেল’ দারুণভাবে ক্লিক করে। বিশ্বকাপে বিগত ৮ ম্যাচে ১৫০ করা মাহি সেই রাতে মায়াবী মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে খেলেন ৯১ রানের অমর ইনিংস। কুলাসেকারাকে মারা ধোনির শেষ ছয়টা যেন পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটের চিরকালীন পোস্টার!
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ১৫০ কিমি সাঁতার ৫২ বছরের মহিলার!
গম্ভীরের সঙ্গে ১০৯ রানের পার্টনারশিপ ম্যাচ জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গম্ভীর স্বয়ং বলেছেন, ‘’ধোনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন যাতে আমার শতরানটা হয়। মাহি আমাকে বলেছিলেন কোনও ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শান্ত হয়ে খেলো প্রয়োজন পড়লে আমি ঝুঁকি নেবো।’’ পরবর্তী সময়ে যদিও দু’জনের সম্পর্কে ভাঙন দেখা যায়।
এই পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে একটা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০১১ বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রতিদিন খিচুড়ি খেতেন মাহি। কেন প্রতিদিন ‘খিচুড়ি ডিশ’ ফাইনালের আগে দলের এক সতীর্থ প্রশ্ন করলে মাহি হেসে বলেন, ‘’আমি রান পাই বা না পাই, দল জিতছে এটা বড় ব্যাপার। আর দল জিতলে ‘খিচুড়ি ডিশ’’ বন্ধ করার প্রশ্নই নেই।”
ফাইনাল জেতার পর আরও এক সাসপেন্স ধোনির মস্তকমুন্ডন নিয়ে। শেষ রাত পর্যন্ত চলে সেলিব্রেশন। ধোনি মস্তকমুন্ডন করলেন কখন? শোনা যায় শেষ রাত এবং ভোরের সন্ধিক্ষণে হোটেল রুমে এসে নিজেই নিজের মস্তকমুন্ডন করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর মস্তকমুন্ডনের কারণ? বিশ্বকাপের আগে রাঁচির দেওরি মন্দিরে গিয়ে ধোনির দেওয়া বচন- ‘বিশ্বকাপ জিতলে মস্তকমুন্ডন করবেন’- সেটার অন্যথা করেননি জার্সি নাম্বার সেভেন!
দেখুন অন্য খবর: