ওয়েব ডেস্ক: নিজস্ব শক্তি বাড়িয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ডাক দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শনিবার ডানকুনিতে দলের ২৭ তম রাজ্য সম্মেলনে রাজনৈতিক সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, রাজ্যে এই বৃহত্তর ঐক্য গড়াই আমাদের লক্ষ্য। দলের রাজ্য সম্পাদক এ কথা বলেছেন বটে। কিন্তু দলের নিচুতলাতেই প্রশ্ন উঠেছে, আর কবে পার্টির নিজস্ব শক্তি বাড়বে। আজ ১৪ বছর হয়ে গেল দল শাসন ক্ষমতায় নেই। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্য সম্মেলন, পার্টি কংগ্রেস হয়ে গিয়েছে। সেই সব সম্মেলনে পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। কিন্তু দল ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বরং দলের ক্ষয় বেড়েই চলেছে।
রাজ্য সম্পাদক যে খসড়া রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতেও দলের এই ক্ষয়ের কথা উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, অনেক জেলায় সংগঠন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখনও নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু নীচের তলায় কাজ করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। উপদলীয় কাজকর্মও চলছে। বহু এলাকায় বুথভিত্তিক সংগঠন বলে কিছু নেই।
একটা সময় সিপিএমের নীচের তলার নেতা, কর্মীরা নিজ নিজ বুথকে হাতের তালুর মতো চিনতেন। সেসব এখন ইতিহাস। শাসন ক্ষমতায় না থাকলেও সিপিএমে গোষ্ঠীবাজি থেমে নেই। রাজ্য সম্মেলনের আগে কলকাতার কাছের দুই জেলা উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সম্মেলন নিয়ে যে কাণ্ড ঘটে গেল, তা দলের নিজস্ব শক্তি বাড়ানোর পক্ষে কতটা সহায়ক, সেটা দলের নেতারাই বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ৭৪ বছরেও অপার মনোবল! সাইকেলে চড়ে মহাকুম্ভে পাড়ি বৃদ্ধের
২০০৮-০৯ সাল থেকে সিপিএমের সেই যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, আজও তা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নেতৃত্ব সাংগঠনিক রিপোর্টেও স্বীকার করে নিচ্ছেন, মিছিল, মিটিং অন্যান্য কর্মসূচিতে ভিড় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার প্রতিফলন ভোটবাক্সে ঘটছে না। মেহনতী মানুষের কাছে দল পৌঁছাতে পারছে না। তাদের থেকে সিপিএম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার সেলিম রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে বলেন, বিভিন্ন ঘটনা ঘটলে আমরা ছুটে যাচ্ছি, ভালো। কিন্তু আমাদের শুধু প্রতিক্রিয়া জানালে হবে না। কোথায় কী ঘটতে চলেছে, তা আগে থেকে উপলব্ধি করে আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। আমাদের নেটে গিয়ে, হেঁটে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বলতে হবে, আমরা ছিলাম, আছি, থাকব।
দলের সাধারণ নেতা, কর্মীরা বলছেন, এখানেই আমাদের বড় খামতি। আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি না। নেতারা বলছেন, মানুষের কাছে যাও। কিন্তু সেই যাওয়াটা আর হয়ে উঠছে না। সেই কবে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, মানুষই শেষ কথা বলেন। প্রয়াত নেতার কথা আজ আর কেউ মনে রাখেন না।
আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভার ভোট। এই ভোটেও যদি সিপিএম শূন্যের গেরো কাটাতে না পারে, সেটা কিন্তু দলের পক্ষে একটা অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়াবে। প্রশ্ন উঠবে দলের অস্তিত্ব নিয়েই।
দেখুন অন্য খবর