ওয়েব ডেস্ক: গোটা চাকরি জীবনে মাত্র ১১টি ছুটি নিয়েছেন। নিরলসভাবে পালন করে গিয়েছেন এক শিক্ষিকার (Teacher) গুরুদায়িত্ব। সময়ের তালে তাল মিলিয়ে বেড়েছে বয়স, সময় এসেছে বিদায় নেওয়ার। কিন্তু দায়িত্ব ছাড়তে পারেননি শিক্ষিকা। ২০১৮ সালে অবসর নিলেও এখনও রোজ আসেন স্কুলে, ক্লাস নেন, আবার ছুটির ঘন্টা বাজলে ফেরেন বাড়ি। তার জন্য অবশ্য এখন আর বেতন ঢোকে না তাঁর অ্যাকাউন্টে। বিনা পারিশ্রমিকে এখনও তিনি বিলিয়ে চলেছেন শিক্ষার আলো। শিক্ষক দিবসে (Teachers’ Day) এই মহান শিক্ষিকার অজানা গল্প রইল আপনাদের জন্য।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, তখন সম্পূর্ণ অন্য ছবি দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলার তমলুকের (Tamluk) খোস্টিকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলেরই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা (Retired Teacher) তৃপ্তি বক্সি (Tripti Baxi)। ২০১৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও শিক্ষিকার সত্ত্বা মুছে যায়নি তাঁর মন থেকে। ছাড়তে পারেননি স্কুলের ক্লাসরুম, অফিস রুম। অবসর নেওয়ার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নিয়ম করে আসেন স্কুলে। তাও আবার বিনা পারিশ্রমকে।
আরও পড়ুন: শাড়ির ভাঁজে সহজ পাঠ, রবিঠাকুর, অ-আ-ক-খ!
জানা গিয়েছে তমলুকের ওই প্রাইমারি স্কুলে মোট চার জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১১৭। প্রি-প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী অবধি পঠন-পাঠন চলে। আর সেখানেই স্কুলের অন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে এখনও পড়ুয়াদের নিরলসভাবে পড়িয়ে চলেছেন তৃপ্তি দেবী। আগে ওই স্কুলের শিক্ষকতা করেছেন, বর্তমানে পেনশন পান। পড়ানোর পরিশ্রমিক না পেয়েও শিশুদের পড়ানোর মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান তিনি। আসলে পুরানো অভ্যাসটা ঠিক ছাড়তে পারেননি।
এখনো নিয়ম করে তৃপ্তি দেবী প্রতিদিন সকাল দশটায় স্কুলে আসেন, যদি কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকে, তাঁকে ফোন করে খোঁজখবর নেন, এর মাঝেই চলে একের পর এক ক্লাস, সবশেষে ছুটির ঘন্টা বাজলে বিকেল চারটায় ফেরেন বাড়ি। ছুটি শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই বললেই চলে। অন্তত তৃপ্তি দেবীর সার্ভিস বুক সেকথাই বলে। গোটা চাকরি জীবনে মেরেকেটে ১১ খানা ছুটি নিয়েছেন। চাকরি ছাড়ার পরেও স্কুল কামাই হয়নি একদিনও।
এরকম একজন আদর্শ শিক্ষিকার সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেন খোস্টিকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিত সামন্তও। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে তিনি সত্যিই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। উনি গোটা সমাজ, শিক্ষক সমাজের কাছে একটা বড় অনুপ্রেরণা।
দেখুন আরও খবর: