যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন।
তুমি বসে গাড় কালো রাতের কথা লেখো, আমি চাঁদের কথা লিখব
জেলে পুরে দেবে তো? উঁচু দেওয়াল টপকে বাইরে এসে আমি আবার লিখব
তুমি এফ আই আর লিখবে? ‘ধনুকের ছিলার মত তৈরি আছি জানিয়ে দেব।
জানে মেরে ফেললে আমি ভুত হয়ে ফিরে এসেও, লিখব
আমাকে হত্যা করার প্রমাণ, কলমে তারই কথা লিখব
তুমি আদালতের বাইরে বসে হাসির ফোয়ারা ছোটাবে তো?
আমি বাইরের রাস্তায় বসে ন্যায়ের কথা লিখব
যে কানে শুনতে পায়না, সেও শুনতে পাবে, এত জোরে বলব
যে চোখে দেখতে পায়না সেও দেখতে পাবে এতটাই স্পষ্ট করে লিখব
তুমি পদ্মফুলের কালো পাঁকের কথা লিখ, আমি লাল গোলাপের কথা লিখব
তুমি মাটির ওপরে অত্যাচারের ঝড় নামিয়ে আনবে,
আমি আকাশে বিপ্লবের কথা লিখব
সব মনে রাখবো, প্রত্যেকটা কথা মনে রাখব
তোমার লাঠি তোমার গুলি তোমার কারাগারের পেষণ
আর আমার প্রিয় বন্ধুদের লাশ থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত
কষ্ট হবে তবুও সব মনে রাখব
সব মনে রাখবো, প্রত্যেকটা কথা মনে রাখব
তুমি কালি আর কলম দিয়ে মিথ্যের পর মিথ্যে লিখবে জানি
আমরা ঐ টপ টপ করে চুঁইয়ে পড়া রক্ত দিয়েই সত্যি কথাগুলো লিখব
সব মনে রাখবো, প্রত্যেকটা কথা মনে রাখব
আমীর আজিজের কবিতার খানিকটা। এই কবিতা ২০২০, ২২ জানুয়ারি পিঙ্ক ফ্লয়েড গ্রুপের রজার ওয়াটার্স লন্ডনের রাস্তায় পড়ে শুনিয়েছিলেন। মোদি জামানায় এক প্রতিবাদী কবির কবিতা পড়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল সিএএএনে কিভাবে সংখ্যালঘু মানুষ গরীব মানুষদের ওপর অত্যাচার নামিয়ে আনা হচ্ছে, হবে। সেদিন দাঙ্গায় ঘর জ্বলেছিল। ৩৪ জনের লাশ পড়েছিল। সারা রাত জেগে রাতপাহারা, হাতে হাত ধরে মানব বন্ধন, আর একটা ঘরেও আগুন লাগাতে দেবনা এই শপথ, আর একটাও লাশ ফেলতে দেবনা এই হুঁশিয়ারি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে এটাই তো দেখতে চেয়েছিল মানুষ। তিনি রাজঘাট, আর অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে আটকে ছিলেন। আপাতত ভোট নেই অতএব প্রশান্ত কিশোর তাঁকে তখন বলে দেননি, সামনে নির্বাচন থাকলে বলতেন, রাত জাগতেন কেজরিওয়াল। যখন নির্বাচন সত্যিই এল, তখন সেই মানুষগুলো সরে গিয়েছেন, কেজরিওয়াল হেরে গেছেন। গদিতে আরএসএস-এর পুরনো কর্মী রেখা গুপ্তা।
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | মুক্তিকুম্ভ, মৃত্যুকুম্ভ, রচনা ও পরিচালক শীল কথা
ক’দিন আগেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল চিঠি লিখেছিলেন আরএসএস সরসংঘচালককে। সেদিন ঐ দাঙ্গার সময়ে জাস্টিস মুরলিধর, মাঝরাতে বসেছেন আদালতে। দাঙ্গায় আহতদের চিকিৎসার জন্য নিরাপদে তাঁদের পাঠানো হোক হাসপাতালে, নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার সকালে আদালত খুলতেই হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রা, অনুরাগ ঠাকুর, পরবেশ বর্মার নামে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁদের কারো নামে এফআইআর দায়ের হয়নি, তাঁরা এখনও ঘৃণা ছড়িয়ে যাচ্ছিল অনায়াসে। জাস্টিস মুরলিধরকে সেই বুধবার রাতেই বদলি করে দেওয়া হয়েছিল পঞ্জাব হরিয়ানা হাইকোর্টে। কেজরিওয়াল চুপ করে বসেছিলেন। উনি বিকাশ আর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। আজ তাঁর দলটুকু বাঁচানোর জন্য তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
আসুন না বিষয়টাকে আরেকটু অন্যভাবে দেখা যাক। আজ দিল্লিতে বিজেপির এই জয়, তুমুল নাচ আর গেরুয়া আবীরের পিছনের ইতিহাসটা কী? কেজরিওয়ালের পরাজয়ের কারণটা ঠিক কোথায়? পৃথিবীর প্রত্যেক পরাজয় প্রথমে হয় মস্তিষ্কে, প্রথমে সে নিজে নিজের কাছে হেরে যায়, তারপর সেই পরাজয় আসে যা আমরা দেখতে পাই। নেপোলিয়ন থেকে হিটলার, ইতিহাস সেই কথাই বলে। অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন নানান রং আর ঢং-এর সরকারের নানান বজ্জাতি দেখতে দেখতে যখন ক্লান্ত তখন এক মানুষ এসে বলল আমরা আম আদমির পার্টি। আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের রায় নিয়ে সরকার চালাব, ভিভিআইপি, ভিআইপি কালচারের বিরুদ্ধে লড়ব, করাপশনের বিরুদ্ধে লড়ব। পয়লা সুযোগেই সে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার তৈরি করেছিল। সে তো শুরুতেই বলতেই পারত যে, না আমরা হাত মেলাব না। মিলিয়েছিল। তারপর? একটা গোটা পাঁচ বছরের পরে দেখা গেল মানুষ তখনও হাত ছাড়েনি, কিন্তু ততদিনে তিনি মানুষের হাত ছেড়ে দিয়েছেন। দাঙ্গা থামাতে রাস্তায় তিনি নেই, সিএএ-র বিরুদ্ধে শাহীনবাগে জমায়েতে তিনি নেই, তিনি জেএনইউ-তে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের গুন্ডামির বিরুদ্ধে নেই, বুলডোজার চলছে, তিনি সামনে এসে দাঁড়ালেন না, জানালেন হনুমান চালিশা মুখস্ত বলতে পারেন। এবং শেষমেষ জানা গেল তিনি ৮০ কোটি টাকা দিয়ে মূখ্যমন্ত্রী নিবাসের রিনোভেশন করিয়েছেন। তিনি হেরেছেন। তাহলে কি শেষ? না এখনও সময় আছে, ফিনিক্স পাখির মত অগ্নিশুদ্ধ হয়ে ফিরে আসতেই পারেন কেজরিওয়াল যদি মানুষের হাত ধরেন, যদি মানুষের সঙ্গে থেকে তাঁদের লড়াই এর কথা বলেন, যদি সত্যিই আম আদমির নেতা হয়ে উঠতে পারেন, না হলে দিল্লির আপ-বিজেপি বাইনারি ভেঙে আবার কংগ্রেস-বিজেপি বাইনারিতে ঢুকে পড়বে দিল্লির রাজনীতি, আপ নেতাদের হাতে সময় বড্ড কম, রাজধানীর রাজনীতি আর কিছুদিনের মধ্যেই এক অন্যদিকে টার্ন নেবে, নজর রাখুন।