Wednesday, November 5, 2025
HomeScrollAajke | শোভন ফিরলেন, শুভেন্দু কবে ফিরবেন?
Aajke

Aajke | শোভন ফিরলেন, শুভেন্দু কবে ফিরবেন?

যদি সোমেন মিত্র তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, সৌগত রায় আবার দলে ফিরতে পারেন, শুভেন্দু তো কোন ছার!

সপরিবারে, সবান্ধবে আসিবেন- এরকম হিন্টস ছিল। তো উনি সবান্ধবে ফিরলেন। আমি শোভন চট্টোপাধ্যায় ওরফে ‘জল-শোভন’-এর কথাই বলছি। অন্য সব জায়গাতে কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, তৃণমূলে দিদির ইচ্ছেতেই সব। কাজেই কোথাও না জানানো হলেও বলাই যায় যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই সবান্ধবে শোভন বাবুর দলে যোগদান। কিন্তু অসম্ভব ম্যাড়ম্যাড়ে, বক্সি’দার ৩০ সেকেন্ডের একটা বক্তব্য, অরুপ বিশ্বাসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, এবং শোভনবাবু জানান দিলেন তাঁর ধমনী-শিরা আছে, আর সেখানে নাকি তৃণমূল বইছে। ইন ফ্যাক্ট ক’দিন আগেই এনকেডিএ-র মাথাতে বসানো হয়েছে প্রাক্তন মহানাগরিককে। এটাও একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার! তো সেদিনেই জানা গিয়েছিল শোভনের প্রত্যাবর্তনে দলনেত্রীর শিলমোহর দেওয়ার কথা। কাজেই সোমবারের যোগদান পর্বে নতুন কিছু ছিল না। তারপর দলের এখনকার দু’নম্বর নেতার থানে পুজো দিয়েই শোভনের ঘরে ফেরা। সেদিনের দমবন্ধ পরিবেশ কোন ম্যাজিকে আলোয় আলোকময় হয়ে উঠেছে জানা নেই। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম শোভনবাবু দলে ফিরেও দিব্যি শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন, প্রত্যেকেই নিয়ে থাকেন। সে এক লম্বা লিস্ট, বর্তমানে সাংবাদিক প্রবীর ঘোষাল থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে প্রবীণ সৌগত রায়, দল ছেড়েছেন, যথেচ্চ গালাগালি করেছেন, দম বন্ধ হয়ে মর-মর অবস্থার কথা বলেছেন, তারপর ফিরে এসেছেন। সেই বিরাট তালিকায় সামান্য সংযোজন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের, কিন্তু তাঁর এই ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ফিসফাস তো শুরুই হয়ে গিয়েছে, তাহলে কি উনিও? হ্যাঁ, সেটাই বিষয় আজকে, শোভন ফিরলেন, শুভেন্দু কবে ফিরবেন?

শুনেই অবাক হচ্ছেন? শোভন ফিরেছেন, তাই বলে শুভেন্দুও ফিরতে পারেন? হ্যাঁ, সোমেন মিত্র তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, সৌগত রায় আবার দলে ফিরতে পারেন, শুভেন্দু তো কোন ছার। আসলে রাজনীতি এনাদের কাছে একটা কেরিয়ার, একটা পেশা, এনারা পেশাদার সমাজসেবক। এঁদের মধ্যে দু’ধরণের লোকজন আছেন- এক্কেবারে পালটে দেওয়ার প্রতিভা নেই বা বিশাল মাপের সংগঠক নয়, কিন্তু পায়ের তলায় ছোট একটা পকেট আছে, কিছু অনুগামী আছে, কেছু চামচা-বেলচা আছে; দু’নম্বর হল যাকে বলে ‘বিন পেন্দি কা লোটা’, সেই ঘড়া যার পেছনই নেই। দু’দলই দল বদল করে। কিন্তু ফারাক হল, প্রথম দলের লোকজন দল বদল করে একটু সময় নেন, চেষ্টা করে দেখেন, এক্কেবারে না পারলে তবেই আবার ‘রিটার্ন অফ দ্য ড্রাগন’। আর পরের দল হল, ‘এপাং ওপাং ঝপাং’। যাবেন আসবেন, আবার যাবেন আবার আসবেন। ধরুন এই যে শোভনবাবু, দল ছাড়ার সময়ে কী বলেছিলেন কোট আনকোট, “দলের সঙ্গে আমার চিন্তাভাবনা মেলাতে পারছিলাম না। পঞ্চায়েত ভোটে সাধারণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যেমন আমি মানতে পারিনি। দলের ভিতরে সেই নিয়ে আপত্তিও জানাই। এমন আরও বহু ঘটনা রয়েছে। আস্তে আস্তে সেগুলো সামনে আসবে। তবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে এসেছিল। অনেক ভেবে অবশেষে তা-ই নিয়ে ফেললাম।” সেগুলো যে কথার কথাই ছিল, আজ তা পরিস্কার। বৈশাখীদেবী বলেছিলেন মাননীয় শিব প্রসাদ জী’র হাতে রাখি পরিয়েছি, এবার থেকে আমাকে রক্ষা করা তাঁর কর্তব্য বলে তিনি জানিয়েছেন। হ্যাঁ, বলেছিলেন। কিন্তু এবারে কে রক্ষা করবেন? কার হাতে রাখি বাঁধলেন? জানা নেই। কাজেই এসব কথাতে গুরুত্ব দিতে নেই, ওগুলো কথা বলার জন্য বলা, মনের কথে তো অন্য, সেটা সব্বাই জানেও।

আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যর বুকে পাথর

কিন্তু কথা হল শুভেন্দু আবার তৃণমূলে ফিরবেন কী না। আমি তো জ্যোতিষী নই, কিন্তু একটা হিসেব বলে দিতেই পারি। ধরুন ২৬-এর বিধানসভাতে বিজেপি শ’খানেক আসন পেল, তাহলে কিন্তু শুভেন্দু এখনই ফিরবেন না। ধরুন বিজেপি ৫০টার মতো আসন পেল, দিল্লির নেতারা বুঝলেন এনাকে দিয়ে রাঙামুলোও তোলা যাবে না, ঘাসফুল তো কোন ছার। কাজেই তিনি সিগন্যাল পাঠাতে শুরু করবেন, আর সেই হিসেব ঠিকঠাক চললে ২০২৭-এর শুরুর দিকে তাঁর ধমনি-শিরাতে তৃণমূল বইবে। আর যদি বিজেপি ৩০-এর তলায় চলে যায়, তাহলে কিন্তু উনি ফিরতে চাইবেন, আর সেই ফেরা ২০২৭, ২০২৮ কিংবা ২০২৯-এও হতে পারে। কারণ তখন তিনি ‘না ঘর কা, না ঘাট কা’। কোনও চান্সই নেই, তবুও যদি বিজেপি সরকার তৈরি করে, তাহলে উলটো খেলা দেখবো আমরা। এগুলো বলার জন্য সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, দলে দমবন্ধ লাগছিল ২০১৯-এ দিল্লিতে গিয়ে জগৎ প্রকাশ নাড্ডার হাত থেকে পদ্মফুল ঝান্ডা নিয়েছিলেন শোভন চ্যাটার্জী যিনি গতকাল আবার তৃণমূলে ফিরেছেন। আচ্ছা আপনারা কি মনে করেন শুভেন্দু অধিকারীও এভাবেই আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন?

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ধমনী-শিরাতে নাকি তৃণমূল বয়, তো উনি সেসব কোথায় ফেলে রেখে বিজেপিতে গিয়েছিলেন? জানা নেই, জানা নেই ওনার শ্বাসতন্ত্র, রেচনতন্ত্রে কী বয়। শুধু জানা আছে এক পাক্কা সুযোগ সন্ধানীর মতো তিনি প্রথমে ইডি, সিবিআই থেকে পিঠ বাঁচিয়েছেন, তারপর বুঝেছেন এ রাজ্যে আপাতত দিদিরাজ চলবে, তাই দুর্যোগের মধ্যেও উত্তরবঙ্গে গিয়ে লাক ট্রাই করেছিলেন, ফিরেছেন। শুভেন্দু এখনও লড়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ২৬-এর হার এর পরে তাঁকে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা খুঁজতেই হবে। সমাজসেবা, দেশসেবার এই কঠিন কাজ কি মাঝপথে ফেলে রেখে চলে যাওয়া যায়? তাই বলে রাখলাম, তিনিও ফিরবেন। কী ভাবছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরিয়ে নেবেন না? আলবৎ নেবেন। যুদ্ধ চলাকালীন নিশ্চই নেবেন না, অস্ত্র ত্যাগ করে নতজানু হলে উনি যমরাজাকেও দলের কোর কমিটিতে নিয়ে নিতেই পারেন।

Read More

Latest News