Thursday, November 6, 2025
HomeScrollAajke | মমতার হাতে ব্রহ্মাস্ত্র, এস আই আর
Aajke

Aajke | মমতার হাতে ব্রহ্মাস্ত্র, এস আই আর

অসমের এনআরসির মতন এই এসআইআর কিন্তু ব্যুমেরাং হবে

কালিদাস এর গল্পে, সেই গল্পে যেখানে তিনি যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালটাই কাটার চেষ্টা করছিলেন, সেই গল্পে কালিদাসের বদলে অনায়াসে বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) যে কোনও নেতার নাম জুড়ে দিতে পারবেন, আমার কথা শুনলে সেখানে আপাতত বিধানসভা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারির (Suvendu Adhikari) নাম আর রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের (Samik Bhattacharya) নাম অনায়াসে বসিয়ে দিতে পারেন। এমনিতে গত পাঁচ বছর ধরে, এমনকি গতকালও শুভেন্দু অধিকারি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের হুমকি দিয়েছেন, দিয়েই যাচ্ছেন। মানে রাষ্ট্রপতি শাসন হবে, কাট টু উনি মুখ্যমন্ত্রী, এক শর্টকার্ট রাস্তা। গত পাঁচ বছরে ইস্যুর অভাব ছিল? হাতে ইডি আছে, সিবি আই আছে, একটা মামলার হিসেব হয়েছে? আরজিকরে সিবিআই এর তদন্ত যাবতীয় অভিযোগকে নস্যাৎ করে ওই একজন সঞ্জয় রাইকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। যাবতীয় দুর্নীতি মামলার একটারও কিনারাই হয় নি, সে শিক্ষকদের চাকরি দুর্নীতি, কর্পোরেশনের নিয়োগ দুর্নীতি, বালু চুরি, গরু চুরি। একটারও কোনও কিনারা দেখেছেন রাজ্যের মানুষ? মনরেগার টাকা আটকে, রাজ্য থেকে সরকারি সংস্থাগুলোর হেড অফিস সরিয়ে নেবার ঘটনা আজ মানুষের সামনে, মানুষ বুঝতে পারছে, অ্যাট লিস্ট সেগুলো তৃণমূলের প্রচার হয়ে উঠছে। একটা কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য অচল করে দেবার মত অবস্থা তৈরি করতে পেরেছেন শুভেন্দু অধিকারি? সেই ২০২১ এ বিজেপিতে আসা ইস্তক, মুসলমান তাড়াও আর রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি, একটা ক্লাস ফোরের বাচ্চা ছেলেও জানে এর দুটোর কোনওটা করার ক্ষমতা নেই শুভেন্দু বাবুর বা মোদি শাহের। কিন্তু এসবের মধ্যেই হঠাৎ এসআইআর এসআইআর বলে ক্ষেপে উঠে বঙ্গ বিজেপি নতুন অস্ত্র তুলে দিল মমতার হাতে, সেটাই বিষয় আজকে, মমতার হাতে ব্রহ্মাস্ত্র, এস আই আর।

অনেকেই আলোচনায় এটা বলেন এবং খুব ভুল বলেন না যে ২০১৪ তে বিজেপির উথ্বান না হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে থাকতে পারতেন না, বামপন্থীরা ক্রমশ তাঁদের ফিরে আসার রাস্তা পেয়ে যেতেন। কিন্তু হঠাৎ করে এক প্রবল শত্রুকে পেয়েই মমতা তাঁর চিরকালীন প্রতিবাদী মেজাজ আর ইমেজটাকে আরও ঝকঝকে করে তুলতে পেরেছেন। এদিকে আবোদা বামেরা ভেবেছিলেন বিজেপিকে খানিক শক্তি শালী করলেই তাঁদের রাস্তা খুলে যাবে, হয়নি, ঘটনাটা পুরোপুরি তাঁদের বিরুদ্ধে গেছে। বিজেপির চরম মুসলমান বিরোধিতা, বিজেপির বিরুদ্ধে যারা জিততে পারে সেই তৃণমূলের খাতায় জড় হয়েছে, যাঁরা বিজেপি বিরোধী মনে করেন বিজেপিকে ক্ষমতাতে আসতে দেওয়া যায় না তাঁদের ভোটও চাঁদ বণিকের মনসা পুজোর মত অনিচ্ছায় হলেও গেছে ঐ মমতার দিকেই, বাকি টা ক্ষমতায় এসেই মমতা বুঝে গিয়েছিলেন যে এক বড় ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি গ্রুপ তৈরি করতে হবে আর সেটা তৈরি করতে গিয়েই তিনি এক অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটিয়েছেন, সেই বিশাল কর্মকান্ডের মধ্যে রেখেছেন মহিলাদের। কন্যাশ্রী মহিলাদের, লক্ষ্মীর ভান্ডার মহিলাদের, স্বাস্থসাথীর কার্ড মহিলাদের নামে, সব মিলিয়ে এক ধরণের মহিলা জাগরণ। আর বিজেপির ঐ তীব্র হিন্দুত্ব কে লড়াই দেবার জন্য উনি বাংলার রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন কে নিয়ে এক হিন্দু কিন্তু সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের হাতিয়ারে শান দিলেন। রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে কতটা দূরে থাকতে হয়? ধর্ম অনুষ্ঠান মন্দিরে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী? এসব কূটতর্ককে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি দুর্গা কার্নিভাল করলেন, রেড রোডে ইদের নামাজেও গেলেন, বড় দিনে চার্চে গেলেন, জগন্নাথ মন্দির তৈরি করালেন, এখন মহাকাল মন্দির তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলার মানুষের কাছে হিন্দুত্বের এই রূপটা অনেক গ্রহণযোগ্য তা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু, হ্যাঁ এখানে কিন্তু আছে, এর পরেও দুর্নীতি, শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য, শিল্পায়নের সেই চেহারা এখনও অধরা, এসব ইস্যু তো ক্রমশ বড় হচ্ছে, আর সেই সময়ে কালিদাসের দল এসআইআর অস্ত্র তুলে দিল মমতার হাতে। মানে ইলেকশন কমিশন এস আই আর করছে, তারা একটা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তারা করুক, তাদের কথা রাজ্য সরকার না শুনলে আইন আছে আদালত আছে। কিন্তু সমস্যা হল এই এস আই আর কে বঙ্গ বিজেপি তাদের কর্মসূচী হিসেবে হাজির করলো, এসআইআর হবেই, তুই কে রে শান্তিগোপাল? এটা না বললে কী হতো? এবং কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা গেল যে অসমের এনআরসির মতন এই এসআইআর কিন্তু ব্যুমেরাং হবে।

আরও পড়ুন: Aajke | শোভন ফিরলেন, শুভেন্দু কবে ফিরবেন?

বিহারের এস আই আর এর ফলাফলও তাই বলছে, রোহিঙ্গা তিন জন আর শদেড়েক মুসলমান বাদে বাকিটা হিন্দু, বহু নেপালি হিন্দুও আছে, যাঁরা হিন্দু রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে, তাঁদেরও নাম কাটা গেছে। এ রাজ্যে এস আই আর হলে সেই একই ভাবে নাম কাটা যাবে মতুয়া, রাজবংশীদের। কিন্তু এখন তো থুতু আকাশের দিকে ছোঁড়া হয়ে গেছে, তা নিচে মাথার ওপরে এসে পড়বেই, আর সেটাই এখন ব্রহ্মাস্ত্র, সমস্ত বাকি ইস্যু কে কবর দিয়ে এই এক এস আই ইস্যুতেই মহানগরের বুকে যে জনপ্লাবন আমরা গতকাল দেখলাম এবারে সেই একই সমাবেশ জেলায় জেলায় দেখতে পাবো। কালিদাসের দল যে দালে বসেছিলেন সেই ডালটাই ঘ্যাচাং করে কেটে ফেলেছেন, এখন সময়ের অপেক্ষা, মমতার হাতে ব্রহ্মাস্ত্র। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম সুখে থাকতে ভুতে কিলোনোর মত হঠাৎ এস আই আর এস আই আর চিৎকার করে বঙ্গ বিজেপির নেতারা কি মমতার হাতেই এক ব্রহ্মাস্ত্র তুলে দিলেন না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ভক্স পপ

মমতার জন্ম এক প্রতিবাদী লগ্নে, প্রত্যেক মানুষের এক বিশেষ গুণ থাকে, মমতার গুণ হল চাপে পড়লেই রুখে দাঁড়ানো আর সেই সময়েই তাঁর ক্ষমতা বোঝা যায়, মানুষ তাঁকে সেই জায়গাতেই দেখতে চায়, প্রশাসক মমতা, পাশের বাড়ির মেয়ে মমতা, এসবের চেয়ে এক প্রতিবাদী মমতা হল সেই দেবীর চেহারা যা এক দশপ্রহরণধারিণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেই প্রতিবাদী মমতাকে এক সলিড প্রতিবাদের অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে কী ভুল করেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা তা বুঝতে পারবেন ২০২৬ এ ইভি এম খোলার পরে।

Read More

Latest News