অনেকেই বলেন, বড়রা এই উপদেশ দেন, আমার ঠাকুমা পই পই করে বলতেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। হ্যাঁ, কাজ করার আগে ভাবতে হবে, কিন্তু সেই কবেই ভাবা প্র্যাকটিস করতে বলা মানুষটা মরেই গিয়েছে, মানুষজন ভাবা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। একটু সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবলে বিজেপি এই বাংলাতে একটা আসনও পায়? একটা নয় আরএসএস-এর হাজার একটা ডকুমেন্টসে এনিমি নম্বর একই আছে – মুসলমান আর কমিউনিস্ট; হিটলারের ছিল ইহুদি আর কমিউনিস্ট। এখন এই বাংলার সিপিএম-কে কমিউনিস্ট বললে অনেকের রাগ হবে জানি, তবুও মাথায় রাখবেন চিতা বাঘের চামড়া পরা বেড়ালকেও খুঁচিয়ে মেরে ফেলা হয় ঐ চামড়ার জন্য। সিপিএম কমিউনিস্ট হন আর না হন, নামের আগায় কমিউনিস্ট আছে, মাথার উপরে লাল পতাকা আছে। কাজেই আরএসএস বিজেপি ক্ষমতায় আসলে একটা মারও তলায় পড়বে না। ত্রিপুরার কমরেডরা ভাল বলতে পারবেন, গোটা দলটা ঘরে ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু একটু ভাবলে কি সেই সিপিএম এই বঙ্গে ‘আগে রাম, পরে বাম’-এর মত স্লোগান দিতে পারত? দলের এক বিরাট ভোট ট্রান্সফার করতে পারত বিজেপিকে? না, মানুষ ভাবে না, আর রাজনীতির লোকজন তো নয়ই। চটজলদি লাভের জন্য তাঁরা যা খুশি করতেই পারে। সেই পথ ধরেই যা ছিল ইলেকশন কমিশন এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের রুটিন কাজ, তাকে শুভেন্দু অধিকারী, এই বঙ্গের নেতারা এক দলীয় কর্মসূচি হিসেবে কেবল ঘোষণাই করলেন না, জানিয়ে দিলেন, রাতের মধ্যে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে মুসলিমদের। শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিলেন, দেড় কোটি রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা হবে। হ্যাঁ, না ভেবেই বলেছেন। সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দু অধিকারী ফাঁসবেন সংশোধিত ফাইনাল ভোটার তালিকা বের হবার পরে।
যে কথা বলছিলাম, শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “দেড় কোটি রোহিঙ্গাদের খুঁজে বার করা হবে। আমাদের দেশের অন্ন যেন একজন রোহিঙ্গাও না পায়, তার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।” উনি কেবল না ভেবেই বলেন তাও নয়, একবার বলতে শুরু করলে থামতেও জানেন না। কাজেই রাস্তার এপাশে ওপাশে রোহিঙ্গা দেখছেন, তাঁর অনুপ্ররণায় কিছু আবালের দল তাঁদের কথা শুনেই এপাশে ওপাশে, রোহিঙ্গা দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হল এই এসআইআর, হ্যাঁ সত্যি করেই কিছু গরীব মানুষ, যাঁরা আবার অশিক্ষিতও বটে, কাগজ ঠিক করে রাখতে পারেননি, কিছু সত্যিই ওপার বাংলা থেকে বহুদিন আগে আসা মানুষজন বিপদে পড়বেন। তাঁদের ডিভোটার করা হবে, তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে হ্যারাসমেন্ট হবে। কিন্তু দুটো সত্যি বেরিয়ে আসবেই।
আরও পড়ুন: Aajke | যোগী আদিত্যনাথ বাংলা শিখছেন, কেন?
রোহিঙ্গা দেড় কোটি কেন? দেড়খানাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্বাচনের আগে এই সত্যিটা সাওমনে আসবেই আর তখন কাঁথির খোকাবাবুকে এর জবাব দিতে হবে, তিনি ফাঁপরে পড়বেন। আর অন্যদিকটাও গুরুত্বপূর্ণ, বহু মতুয়া, রাজবংশী, আদিবাসী, প্রিবারের নাম কাটা যাবে। সেই নাম কাটা যাওয়া মানুষেরা চরম বিপদে পড়বেন যা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে যাবে শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। ওনাদের সিএএ আইন অনুযায়ী, প্রথমে জানাতে হবে যে, ওনারা ভারতের নাগরিক নন, ওনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন – তার প্রমাণ দিতে হবে, ওনাদের ধর্মীয় অত্যাচারের মুখেই পালিয়ে আসতে হয়েছিল, সেটারও প্রমাণ দিতে হবে। কোথ্বকে জোগাড় করবেন সেই প্রমাণ? কে দেবে? হ্যাঁ, ‘খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল এঁড়ে গরু কিনে’ – সেরকম এক হাল হবে। আবার ধরুন কিছু লোকের সেসব প্রমাণ আছে, কিন্তু সেসব প্রমাণ দিয়ে আবার নাগরিক হয়ে ওঠার আগে দুটো ঘটনা ঘটে যাবে – (১) উনি এই সময়টাতে ভারতের নাগরিক নন, অতএব ওনার কেনা সম্পত্তি বেআইনি, কাজেই তা বেদখল হতে পারে। ওনার সরকারি চাকরি বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অবৈধ হয়ে যাবে। (২) উনি এই সময়ের মধ্যে ভোটার নন, ভোট দেওয়ার অধিকার হারাবেন। মানে ২০২৬-এ গত পাঁচ থেকে ছয় বছর বা তার বেশি সময় ধরে বিজেপিকে ভোট দিয়ে আসা মতুয়া বা রাজবংশীদের নাম তালিকাতে থাকবে না। কেমন করে সামলাবেন শুভেন্দু বাবু? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই বাংলাতে দেড় কোটি রোহিঙ্গা আছে বলে দাবী করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বলেছিলেন দেড় কোটি অনুপ্রবেশকারীর কথা। এবার এসআইআর হওয়ার পরে যদি দেখা যায়, দেড় পিস রোহিঙ্গাও নেই, তাহলে কি ওনার মুখে চুনকালি পড়বে?
এই ভোটার তালিকার সংশোধন বলুন বা এসআইআর বলুন, তার পিছনে অবশ্যই দেশের সর্বোচ্চ নেতাদের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, যেখানে এই এসআইআর শুরু হল, সেই বিহারে বিজেপিও এটাকে দলীয় কর্মসূচি বানিয়ে ফেলেনি, ইন ফ্যাক্ট কোথাও কোথাও তারাও বিরোধিতাই করেছেন। কিন্তু এই বঙ্গের উলুক ঝুলুক নেতারা হঠাৎ এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায় কেন নিজেদের মাথায় নিতে গেলেন? কেন আগ বাড়িয়ে কথা বলা শুরু করলেন শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্যরা? কারণ তাঁরা ভেবেছিলেন সত্যিই রাজ্যে এক বিরাট সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী আছে, যাদের ভোটে জিতে যাচ্ছে তৃণমূল। সেটা আটকাতে গিয়ে তাঁদের অবস্থা ‘বাঁশ কেন ঝাড়ে’র মতো। নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন। শোনেননি, আমার ঠাকুমা পই পই করে বলতেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’।
দেখুন ভিডিও:







