Wednesday, December 3, 2025
HomeScrollAajke | সিঁদুরে মেঘ দেখা প্রাকটিস করুন তৃণমূল নেতারা
Aajke

Aajke | সিঁদুরে মেঘ দেখা প্রাকটিস করুন তৃণমূল নেতারা

ছোট্ট রাজনৈতিক ঘটনা, নির্বাচনের ফল হঠাৎই 'ইন্ডিকেটর' হয়ে ওঠে

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

হাইকোর্ট ক্লাবের নির্বাচন ছিল, তার সবকটা পদেই ঘোষিতভাবেই বিজেপি সমর্থক প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন। হ্যাঁ, খোদ কলকাতার মধ্যে, তৃণমূলের বাঘা বাঘা আইনজীবী নেতারা আছেন, সময়ে অসময়ে তাঁদের বুলি আমরা শুনি, এঁদের অনেকেই তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন প্রসাদে ধন্য, এই ফল শোনার পরে সকলেই শিবনেত্র হয়ে বসে আছেন। কেউই কিছুই জানেনই না, কেউ কেউ এটা কোনও বিষয়ই নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা দলের মধ্যে একধরণের কমপ্লাসেন্সি, আত্মতুষ্টি কাজ করে, ঐ যে আমরা ২৩৫, ওরা ৩৫, মনে আছে? হ্যাঁ, সেইরকম। রাজনীতিতে আত্মতুষ্টি এক বিষম বিপদ। সফল নেতাদের দেখুন, প্রতিদিন তাঁরা রাস্তায়, প্রতিদিন তাঁরা কিছু না কিছু করছেন বলছেন আর তার সবটাই এই মূহুর্তের জন্য জরুরি। কিন্তু কিছু নেতাদের মধ্যে জন্মায় সেই আত্মতুষ্টি যা তাঁদের পতন ডেকে আনে, এনেছে। সেই আত্মতুষ্টিই দেখা গেল হাইকোর্ট ক্লাবের নির্বাচনে। মাসখানেক আগে থেকে হাইকোর্ট ক্লাবের নির্বাচনে তৃণমূলপন্থীদের অফিশিয়াল ও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দু’টো প্যানেল নিয়ে তরজা শুরু হয়। সোমবার পরাজয়ের পরেও দু’পক্ষের সেই দ্বন্দ্ব অব্যাহত। সূত্রের খবর, ভোটের আগে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, তৃণমূলের লিগাল সেলের সরকারি প্যানেলের সম্পাদক পদ প্রার্থী শেষ মুহূর্তে নিজের প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেন। আজ সেই নির্বাচনই বিষয় আজকে, সিঁদুরে মেঘ দেখা প্রাকটিস করুন তৃণমূল নেতারা।

হ্যাঁ, এমনিতে সিঁদুরে মেঘ মানেই তো আগুন নয়, কিন্তু হতেও তো পারে, সেই খোঁজ নেওয়াটাও বড্ড জরুরি। কারণ এটা কেবল হাইকোর্ট ক্লাবের নির্বাচন নয়, এটা উকিল পাড়ায় চায় পে চর্চার বিষয়, আর মাথায় রাখুন ক’দিন পরেই কিন্তু বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। একবার দেখুন পিং-পং বলের মতো একজন কীভাবে নিজের কাঁধ থেকে দায় ঠেলে দিয়ে অন্যজনের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল লিগাল সেলের প্রাক্তন আহ্বায়ক তরুণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আইনজীবী মহলে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। হারের পরে সরাসরি দলের সাংসদ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন তরুণ। তাঁর বক্তব্য, “আমাকে শুধু দায়সারা ভাবে দু’একজনকে বাছতে বলা হয়েছিল।” অথচ কল্যাণবাবু সরকারি প্যানেলে এমন লোকেদের রাখেন, যাঁদের মধ্যে সিংহভাগেরই ক্লাবের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। দলীয় কর্মীদের দাবিতে আমাদের আলাদা প্যানেল দিতে হয়েছিল। আমি নাম করে বলতে পারি, বর্তমান লিগাল সেলের অনেক সদস্য বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বিজেপির হয়ে প্রচারও করেছেন। কল্যাণের বক্তব্য, “আমি ভোটের কোনও দায়িত্বে ছিলাম না। তবু সকলে মিলে যাতে ভোটটা করা যায়, সেই চেষ্টা করেছিলাম। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং বর্তমানে লিগাল সেলের চেয়ারম্যান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যা বলার বলতে পারবেন।” আইনমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমি চার বছর লিগাল সেলের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার আমলে যতবার ভোট হয়েছে, আমরা জিতেছি। এখন আর আমি দায়িত্বে নেই। ফলে চেয়ারম্যান যা বলার বলতে পারবেন।” যদিও হাইকোর্ট ক্লাবের এই ফলকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ অর্থমন্ত্রী, যিনি আবার লিগাল সেলের চেয়ারম্যান, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সামান্য একটা ক্লাবের ভোট। সেখানে আইনজীবীরা খাওয়াদাওয়া করতে যান। এই ভোটে জিতে বিজেপি যদি আপ্লুত হয়, সেটা তাদের ব্যাপার।” মানে কেউ কিছুই জানেন না। আর চেয়ারম্যান তো বলেই দিয়েছেন, এটা কোনও ব্যাপারই নয়।

আরও পড়ুন: Aajke |পোড়ামুখ দেখাতে আরও কিছুটা সময় পেল বিজেপি, দিল নির্বাচন কমিশন

যাঁদের মনে নেই, তাঁদের মনে করিয়ে দিই, ২০০৯-এ বিষ্ণুপুর পশ্চিমের একটা উপনির্বাচন হয়েছিল, সিপিআইএম নেতার মৃত্যুর পরে। কথা নেই বার্তা নেই সেই রমরমে বাম জামানাতে দুম করে সেখানে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়ে মদন মিত্র জিতে গিয়েছিলেন। বাম নেতাদের পক্ককেশ মাথাদের দু’একজন বলেছিলেন, “ও ফ্লুকে জিতেছে”, “সম্ভবত লোকাল পার্টি তেমন জোর দেয়নি”, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ২০০৯ কিন্তু সূচনা ছিল ২০১১-র। হ্যাঁ, এমন হয়। ছোট্ট রাজনৈতিক ঘটনা, নির্বাচনের ফল হঠাৎই ইন্ডিকেটর হয়ে ওঠে। আমি এখনই এটা বলছি না যে, এই হাইকোর্ট ক্লাব নির্বাচনে তৃণমূলের হার সেই ইন্ডিকেটর। কিন্তু এটা বলবই যে, সম্ভবত তৃণমূল দলের মধ্যে সেই আত্মতুষ্টির জন্ম নিয়েছে, যা এখনই না সামলাতে পারলে বড় আকার নিতেই পারে। আজ আমরা হাইকোর্ট পাড়াতেই লোকজনদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, এই যে হাইকোর্ট ক্লাবে বিজেপি প্যানেলের বিরাট জয়, তা কি কোনও ইঙ্গিত বহন করে?

শেষ করার আগে দুটো কথা – প্রথমটা হল, সেই খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প, আত্মতুষ্টি বিরাট বিরাট বিপদ ডেকে আনতে পারে, এটা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথায় ঢোকা উচিত; দুই, মাত্র ক’বছর আগে হাইকোর্ট পাড়া থেকে আলাদা মিছিল বের হত লইয়ারদের, ‘চলো চলো, ব্রিগেড চলো’। সেই বামপন্থীরা কোথায়? বিকাশবাবুর চেম্বারেও কি সন্নাটা? নাকি এখানেও সেই ফুটকির গল্প? বামের ভোট অনায়াসে ফুটকি লাগিয়ে রামেই গিয়েছে। মানে এখনও রক্তক্ষরণ অব্যাহত? সেটা আরও চিন্তার কারণ হতে পারে তৃণমূলের জন্য।

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News