বাংলায় একটা প্রবাদ আছে – ‘সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বেঁড়ে বেটাকে ধর।’ এসআইআর নিয়েও কিন্তু ঠিক এটাই ঘটছে। নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চেপে ধরেছে সবাই। সবাই বলতে তৃণমূল আর বিজেপি, সিপিএম আর কংগ্রেস, বাদ নেই কেউ। কিন্তু কেন? যত দোষ জ্ঞানেশ কুমার ‘নন্দ ঘোষে’র? বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছে, এর মানে বোঝা যায়। কিন্তু বিজেপি? তারা কমিশনকে আক্রমণ করবে কেন? এইতো কিছুদিন আগেই, শুভেন্দু, সুকান্ত, শমীক, সকলেই তো গলা ফাটিয়ে বলছিলেন, ‘এক কোটি বাদ যাবে, তৃণমূলের রক্ষা নেই আর’। হঠাৎ এমন কি হল যে, নির্বাচন কমিশনারকে সরাসরি নিশানা করছে বিজেপি? বলব সে কথা। তার আগে আসুন দেখে নি, তৃণমূল ভার্সেস কমিশন, তার হাল হাকিকত ঠিক কেমন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই আঙুল তুলেছিলেন জ্ঞানেশ কুমারের দিকে। এবার আরও এক অভিযোগ আনল তৃণমূল। তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মন্ডল সরাসরি বলেছেন, জ্ঞানেশ কুমারের হাতে রক্ত লেগে আছে। ঠিকই তো। এসআইআর লাগু হওয়ার ঘোষণা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৪০ জন। এদের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে বিএলও, বাদ নেই কেউ। কেউ আত্মহত্যা করেছেন ভয়ে। কী গো আবার অতিরিক্ত পরিশ্রমের চাপ নিতে না পেরে মারা গিয়েছেন। পশ্চিমবাংলায় এসআইআর মৃত্যু আর ভয়ের আরেক নাম। তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল এসব নিয়েই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সাথে দেখা করেন। তারপরেই প্রতিমা মন্ডল জ্ঞানেশ কুমারকে নিশানা করেন।
কংগ্রেসের ব্যাপারটা তো আমরা বিহার নির্বাচন থেকেই জানি। রাহুল গান্ধী সরাসরিই বলেছিলেন যে, নির্বাচন কমিশন বিজেপি সরকারের হয়ে কাজ করছে। বিহার নির্বাচন ঘিরেই স্লোগান তুলেছিলেন রাহুল, ‘ভোট চোর গাদ্দি ছোড়’। সিপিএম’ও বাদ যায়নি, যতটা পেরেছে নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা করেছে তারা।
আরও পড়ুন: Aajke | এসআইআর-এর ভূত চেপেছে শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে
বাকি ছিল বিজেপি, কমিশনের সাফল্য নিয়ে লাফালাফি জুড়েছিল যারা। বিশেষ করে বিহার ভোটের ফল বেরোনোর পর, বঙ্গ বিজেপির নেতাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল, বাংলা জয় বোধ হয় হয়েই গেল। সেই কবেকার ‘অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ’-র উদাহরণ তুলে, আবার আগডুম বাগডুম বকতে শুরু করেছিল বঙ্গ বিজেপির নেতারা। কিন্তু তারপর? সে কথা বলতে হলে সুকুমার রায়ের পাগলা দাশুর একটা ছড়া একটু বলে নিতে হবে।
‘পাঁড়েজির ছাগলের এক হাত দাড়ি
অপরূপ রূপ তার যাই বলিহারি
উঠানে দাপটি করি নেচেছিল কাল
তারপর কি হইলো জানে শ্যামলাল’
সোজা কথায়, পাঁড়েজির ছাগল শ্যামলালকে গুঁতিয়ে ফেলে দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও তাহলে কি বঙ্গ বিজেপিকে গুঁতিয়ে দিল মোদিজির নির্বাচন কমিশন? তা না হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হঠাৎ এসব বলছেন কেন?
কিন্তু ঠিক কি বলেছেন শমীক? বলেছেন, ‘ঠান্ডা ঘর থেকে জিরো গ্রাউন্ডে নেমে আসুন জ্ঞানেশ কুমার’। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিএলও এবং এসআইআর কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কমিশনের’। এ কথার পিছনে অন্য একটা কারণ আছে। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস ওরফে ববি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট করেন। তাঁর অভিযোগ, ফলতার বিডিও নিজে বিএলও-দের চাপ দিচ্ছেন, যাতে তারা তৃণমূল ভোটারদের নাম লিস্টে তোলেন।
সে যাই হোক, জ্ঞানেশ কুমারকে, দিল্লি থেকে উড়ে এসে, পশ্চিম বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে, এসআইআর-এর কাজ দেখতে হবে, এটা একটু ছেলেমানুষী আবদার হয়ে গেল না? শমীক ডাকলেই জ্ঞানেশ কুমার দিল্লি থেকে সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবেন? আসবেন যে না সে তো একটা বাচ্চা ছেলেও জানে, আর শমীক তো জানেনই। তাহলে কেন এই আস্ফালন? কেন এই হুংকার? সেটা কি এই জন্য যে শমীক বাবুরা বুঝে গিয়েছেন, বাংলায় এসআইআর-এর হাওয়ায় যেসব মৃত্যু হল, যেসব প্রাণ ঝরে গেল, তার দায়িত্ব বঙ্গ বিজেপিকেই নিতে হবে। এই নির্বাচনের কথা তো ছেড়েই দিচ্ছি, আগামী দিনও বিজেপিকে এই জন্য বাংলার মানুষ ক্ষমা করবে না। একথা বুঝতে পেরেই কি বিজেপির রাজ্য সভাপতি এখন নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণের নিশানা করছেন? সোজা বাংলায় ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন? আসুন দেখি, মানুষ এ নিয়ে কি বলছেন।
২৬-এর নির্বাচন নিয়ে শমীক চিন্তিত, সুকান্ত চিন্তিত। খালি নেচে বেড়াচ্ছেন শুভেন্দু। জনসভায় দাঁড়িয়ে বলছেন, কিলবিল করে পালাচ্ছে, কিলবিল করে পালাচ্ছে। সে তো না হয় বুঝলাম। কিন্তু ভোটে জিততে হলে যেটা দরকার সেই সংগঠন, সেই বুথস্তরের সংগঠন, সেটা আপনাদের আছে তো? পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পেরেছেন বিএলএ দিতে? পারেননি। তবু আশা করছেন ভোটে জিতবেন। নিজেদের নিজেরাই মিথ্যে বলছেন। কেনই বা বলবেন না? এই আপনারা, মানে বঙ্গ বিজেপির নেতারা, আপনারাই তো দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুথে বুথে সৈন্য তৈরি বলে মিথ্যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। এত মিথ্যে, তার দাম তো চুকোতেই হবে।
দেখুন ভিডিও:







