কলকাতা: পঁচিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবন, বহু ভয়াবহ অপরাধের রায় কার্যকর করার অভিজ্ঞতা। নাটা মল্লিক—একটি নাম, যা এখনও বাংলার ফাঁসির ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের এই ফাঁসুড়ে ২০০৯ সালে ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তাঁর নাম বারবার উঠে আসে সংবাদের শিরোনামে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির মতো ঘটনাগুলি তাঁকে বাংলার ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
নাটার জীবন আর পাঁচজনের থেকে আলাদা ছিল। তিনি সরকারি অনুমতিতে প্রাণদণ্ড কার্যকর করতেন। সাধারণ মানুষ তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা জানার আগ্রহে মুগ্ধ। সূর্য সেনের ফাঁসির ঘটনাটি তাঁর জীবনের এক গভীর ক্ষত। নাটা নিজে অনুতপ্ত ছিলেন এই ঘটনার জন্য। এমনকি তাঁর পিতা শিবলাল মল্লিক, যিনি নিজেও একজন ফাঁসুড়ে ছিলেন, সূর্য সেনের ফাঁসি কার্যকরের পর কাজে ফিরতে পারেননি। পরিবারের এই পেশাগত উত্তরাধিকার নাটার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ-কাণ্ডে একক দোষী সঞ্জয়, ‘বিরল রোগ’ থেকেই ঘটিয়েছেন এই কাণ্ড?
ধনঞ্জয়ের ফাঁসির ঘটনাটি নাটা মল্লিকের জীবনে এক গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। হেতাল পারেখ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ধনঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় নাটা ভেঙে পড়েছিলেন। একজন পেশাদার ফাঁসুড়ে, যাঁর কাজই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, কেন এমন ভেঙে পড়লেন? নাটার মতে, ধনঞ্জয় তাঁর ফাঁসি কার্যকরের আগে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি নাটা মল্লিককে এক গভীর মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দেয়।
নাটা মল্লিকের জীবনের শেষ দিনগুলি ছিল কঠিন। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাঁকে চিকিৎসার জন্য অর্থসাহায্য করেনি। তাঁর পুত্র মহাদেব জানিয়েছিলেন, একটি তথ্যচিত্রে কাজ করে নাটার পরিবার বেঁচে ছিল। জোসি জোসেফের তৈরি তথ্যচিত্র ‘ডে ফ্রম আ হ্যাংম্যানস লাইফ’ নাটার শেষ ফাঁসি নিয়ে তৈরি হয়েছিল। এই চলচ্চিত্র তাঁর দ্বিধা, যন্ত্রণার গল্প তুলে ধরেছিল।
আজও বাংলার শেষ ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিককে ঘিরে আলোচনার শেষ নেই। পেটের দায়ে জল্লাদের পেশায় নামা এই মানুষটি শেষ ফাঁসিতে নিজেই হারিয়ে ফেলেছিলেন মনোবল। মায়া-মমতাহীন ‘জল্লাদ’ শব্দটি তাঁর জন্য কি আদৌ প্রযোজ্য? নাটা মল্লিকের জীবন যেন এক গভীর প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থেকে গেছে।
দেখুন আরও খবর: