ওয়েবডেস্ক- ভারত- পাকিস্তানের (India-Pakistan Conflict) মধ্যস্থতা করেছেন নাকি তিনিই? তাঁর কথাতেই দুই দেশ রণংদেহি মূর্তি থেকে সরে এসে যুদ্ধ বিরতি (Ceasefire) ঘোষণা করেছে। বাদ দেননি অবশ্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধকেও। একাধিকবার মধ্যস্থতার হাতি বাড়িয়েছেন তিনি। এই ব্যক্তি আর কেউ নন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump) ।
সব বিষয়েই আগ বাড়িয়ে ‘আমি করেছি’ এই স্বভাবটা তাঁর আজকের নয়। গোটাই বিশ্বই জানে কৃতিত্ব নেওয়ার প্রবণতা তাঁর বরাবরের স্বভাব। এর মধ্যেই সব থেকে বড় ঘটনা এখনও পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল (Nobel Prize) পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর বক্তব্য এই মুহূর্তে জোর আলোচনা বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, আমি খুব আনন্দের সঙ্গে বলছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে মিলে আমি একটি অসাধারণ চুক্তির ব্যবস্থা করেছি, যা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডা প্রজাতন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। এই যুদ্ধটি অন্য যুদ্ধের চেয়েও প্রাণঘাতী ছিল। বহু দশক ধরে চলেছিল। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রতিনিধিরা আগামী সোমবার ওয়াশিংটনে আসছেন এই চুক্তিপত্রে সই করার জন্য। এটা আফ্রিকার জন্য এক মহান দিন, গোটা বিশ্বের কাছে এটি একটি মহান দিন। নোবেল না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপের গলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, , আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ থামানোর জন্যও নোবেল পাব না, সার্বিয়া ও কসোভোর যুদ্ধ থামানোর জন্যও না, এমনকি মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্যও না। যেখানে (নীল নদের ওপর) ইথিওপিয়া একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে হয়েছে। এটি নীল নদে নদে প্রবাহিত জলের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে’। আক্ষেপের সুরে ট্রাম্প বলেন, তাও আমি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাব না। আমি যাই করি, আমাকে কোনও পুরস্কার দেওয়া হবে না। ট্রাম্পের আরও সংযোজন- তাদের উচিত রুয়ান্ডা, কঙ্গো, সার্বিয়ার জন্য আমাকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া… সবচেয়ে বড়টি হল ভারত-পাকিস্তান। আমার এটি ৪-৫ বার পাওয়া উচিত ছিল। আব্রাহাম চুক্তি ভালো হতো। তারা আমাকে দেবে না। তারা কেবল উদারপন্থীদের নোবেল পুরস্কার দেয়।’
তবে এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন পাকিস্তান সরকার (Pakistan Government) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারে জন্য মনোনীত করেছে, ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও দাবি করেন, তিনি বিশ্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সমঝোতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, কিন্তু তাঁর অবদান কখনও স্বীকৃতি পায় না।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চীন, কী নিয়ে আলোচনা?
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাম কাণ্ডের পরেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। কোনওদিনই এই সম্পর্ক সুখের ছিল না, কিন্তু সেখানে আগুনে ঘি ঢালে এই জঙ্গি হামলা। ভারতের বেশ কিছু পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে রাখা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান দিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে ভারত, নিকেশ করা হয় ১০০’ র বেশি জঙ্গিকে। এর পরেই পাকিস্তান সরকার যুদ্ধ বিরতির অনুরোধ জানায়। প্রথমে না মানলেও পরে ভারত পাকিস্তানের সেই যুদ্ধ বিরতিতে সায় দেয়।
তবে এই যুদ্ধ বিরতির কথা প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই এই যুদ্ধ বিরতি হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের এই দাবি খারিজ করে দেন। সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সংঘর্ষ বিরতিতে আমেরিকার কোনও ভূমিকা নেই। এরপরেও ফের নিজের দাবিতে অনড় রইলেন ট্রাম্প।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য যুদ্ধ বিরতিতে ট্রাম্পের মধ্যে হস্তক্ষেপ ও ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রশংসা করেছে পাক সরকার। এক বিবৃতিতে পাক সরকারের তরফে বলা হয়েছে যে, দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যে, যদি ট্রাম্প হস্তক্ষেপ না করতেন। পাক সরকারের আরও দাবি, এই কঠিন আবহে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে কৌশলগত দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের ফলেই এই যুদ্ধ বিরতি সম্ভব হয়েছে। আর এই জন্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে ইসলামাবাদ (Islamabad)।
দেখুন আরও খবর-