কলকাতা: বাজেট অধিবেশনে দ্বিতীয় পর্যায়েও উত্তপ্ত বিধানসভা (WB Assembly)। বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগে অধিবেশন শুরু হতেই তুমুল হইহট্টগোল বাঁধে। স্পিকারের দিকে কাগজ ছোঁড়ার অভিযোগে প্রথম দিনই সাসপেন্ড হলেন ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন। প্রতিবাদে ওয়াকআউট বিজেপি বিধায়কদের (BJP MLAs Protest WB Assembly)। বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াতে দেখা গেল স্পিকারকে। হিরণ সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয় স্পিকারের। মার্শাল ডেকে বার করা হল বিজেপির দুই বিধায়ককে। সোমবার রাজ্য বিধানসভায় ২০২৪-২৫ এর অর্থবর্ষের অতিরিক্ত ব্যায় বরাদ্দের উপর আলোচনায় উত্তেজনা।
স্পিকারের প্রতি অভব্য আচরণের অভিযোগে সাপপেন্ড করা হয়েছে ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন। এদিন মেদিনীপুরের বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বক্তব্য রাখার সময় মাইক বন্ধ করে দিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যার প্রতিবাদে বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা উত্তাল হয়। বিধানসভার মধ্যেই স্লোগান শাউটিং করতে শুরু করে বিরোধী বিজেপি বিধায়কেরা। এই অবস্থায় পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হতে থাকে দেখে প্রথমে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী সদস্যদের সাবধান করেন। তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রথমে মনোজ ওরাও ও পরে শঙ্কর ঘোষকে সতর্ক। তারপরে মার্শাল ডেকে দুই বিধায়ক শংকর ঘোষ এবং মনোজ ওরাওকে বিধানসভা থেকে বের করে দেওযার নির্দেশ এবং আজকের মতো সাসপেন্ড করে।
বিজেপির তরফ থেকে সরাসরি বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন বিধায়কেরা। বিধানসভা থেকে বেরোনোর সময় বিধায়কদের ডেক্সে থাকা কাগজ ছিড়ে দিয়ে ছুড়ে দেওয়ার জন্য এবার বিধানসভার দ্বিতীয় পর্যায়ের বাজেট অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হলো বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মনকে। বিজেপি বিধায়কেরা বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সরাসরি বিধানসভার বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে বিজেপি বিধায়ক হিরন বলেন, ২০১৫ সালে রাইট টু পাবলিক সার্ভিস বলে একটি আইন পাস করা হয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়। এই দফতরের মাধ্যমে প্রত্যেক বছরেই কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সেই কমিশনে তালা ঝুলছে। সেখানে কোন কাজ হয় না গত ১০ বছরে একটি অভিযোগ ও জমা পড়েনি। সরাসরি বিধানসভার ভেতরে এই নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যই আমার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ফের উত্তপ্ত যাদবপুর! ওমপ্রকাশ মিশ্র ঢুকতেই উঠল স্লোগান!
তিনি আরও বলেন এবারই প্রথম নয়, সিএজি দিয়ে বলার কারণে ২০২৩ সালে আমার মাইক বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। এবার দ্বিতীয়বার আমার বাইক বন্ধ করে দেওয়া হল। এদিন তার কাছে প্রশ্ন করা হয় তার কোন বক্তব্য বাতিল করে দেয়া হয়। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে হিরণ বলেন, অধ্যক্ষ বলেছিলেন তোমার এইসব বলে লাভ নেই। আমি সরাসরি তাকে বলি আপনি এসব কথা আমাকে বলতে পারেন না। আমার কিসে লাভ হবে বা হবেনা সেটা আপনি ডিরেকশন দিতে পারেন না। আমি যেমন জনগণের দ্বারা নির্বাচিত আপনিও জনগণের দ্বারাই নির্বাচিত হয়েছেন। কনস্টিটিউশন এর শপথ নিয়েই আপনি অধ্যক্ষ হয়েছেন আর আমি একজন বিধায়ক হয়েছি। আমার অধিকার রয়েছে কথা বলার। আপনি এটা বলতে পারেন না যে এই বিষয়ে আমার লাভ হবে এতে নয়। প্রসঙ্গত এরপরই তিনি বলেন অধ্যক্ষ মাইক বন্ধ করে দেন।
সূত্রের খবর, এদিন বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধে বাজেট অনুমোদনের উপরে নিজের বক্তব্য রাখছিলেন হিরণ। সেই সময় হিরণের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্পিকার বলেন, এসব বলে আপনার কোনও লাভ হবে না। পাল্টা হিরণ বলেন, কিসে লাভ হবে, আর কিসে হবে না তার মধ্যে আপনি কেন আসছেন। একরপরই দুডনে বাকবিতণ্ডায় জ়়িয়ে পড়েন। হিরণ বলেন, এরাজ্যে গণতন্ত্র হত্যা হচ্ছে। গুন্ডা, মার্শাল দিয়ে রাজ্য চালাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ যদিও বিধানসভার অন্তরে অধ্যক্ষ নিজে কি কারণে হিরণের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অধ্যক্ষ বলেন, বিধানসভার মধ্যে মাননীয় বিধায়ক যে ধরনের বক্তব্য রাখছিলেন তা বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, এবং যা খুশি তাই বলছিলেন। সেই কারণেই তার মাইক ডিসকানেক্ট করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে তার বলা বিতর্কিত বক্তব্য গুলি রেকর্ডে যাবেনা। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন রুম বুক ৩৫৫ নম্বর ধারা অনুসারে অধ্যক্ষের সম্পর্কে বলা তার বক্তব্য ডিফামেটারী বা অপমানজনক। সে কারণেই তার বক্তব্য গুলিকে রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিন নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও বিজেপি বিধায়কদের হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন। তার বক্তব্য প্রত্যেকেরই একটা সীমার মধ্যে থাকা উচিত এমন কিছু বলা বা করা উচিত না যা বিধায়ক হিসাবে সম্মানজনক নয়।
দেখুন ভিডিও