ওয়েব ডেস্ক: আকাশে শরৎতের মেঘ জানান দিচ্ছে উমা আসছে বাপের বাড়িতে। আর কিছুদিনের অপেক্ষা, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো বাঙালির দোরগোড়ায়। বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক জমিদার বাড়ি। আর জমিদার বাড়ি দুর্গাপুজো (Durga Puja) মানে রয়েছে ঐতিহাসিক কাহিনী। ২৮১ বছরে ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ফলতার দেব সরকার বাড়ি দুর্গাপুজোয় (Durga Puja Debsarkar Family)। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশেষত্ব। জমিদার বাড়ির আনাচে কানাচে এখনও কান পাতলে শোনা যায় অতীতের ইতিহাসের গল্প।
২৮১ বছর ধরে ফলতার মালা গ্রামে দেব সরকার বাড়িতে পূজিত হয়ে আসছে উমা। এই দেব সরকার বাড়ির ইতিহাস বহু পুরনো কথিত রয়েছে আনুমানিক প্রায় ৩৫০ আগে পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে এই দেব সরকার বংশের উত্থান ঘটে। বিহারীলাল দেব ব্যাবসায়িক সূত্রে ফলতার মালা গ্রামে আসেন। তিনি ছিলেন কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়িক পরিবারের সদস্য। তিনি মালা নিবাসী নাগ বংশের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং মালা গ্রামেই নিজ বসতি নির্মাণ করেন। রাজ প্রাসাদের মতো বড় বাড়িটা ছিল জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত। সামনের অংশ ছিল উন্মুক্ত। এই কারণে শত্রুপক্ষ এই বাড়িতে সহজে আক্রমণ করতে পারতেন ৷
আরও পড়ুন: ৩৫১ বছর আগে এই বাড়িতেই হয় ২৪ পরগনা জেলার প্রথম দুর্গাপুজো!
কলকাতা থেকে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনের লাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ব্যবসা বাণিজ্য।গাঙ্গেয় জমিতে ধানের সুফলের জন্য ফলতায় বিশাল ধানের আড়ত ছিল এবং ধান ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। বিহারীলাল দেব প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা শ্রী শ্রী লক্ষ্মীজনার্দন জিউর মন্দির। পরে ব্যাবসা এবং জমিদারী বৃদ্ধির পর বিহারীলাল দেবের পুত্র কালিকৃষ্ণ দেব ১১৫২ বঙ্গাব্দে প্রথম এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ‘সরকার’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
এই দেব সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোয় রয়েছে বিশেষত্ব প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দোৎসবের দিন প্রাচীন কাঠামোর উপর ‘কাঠামো পুজো’ করা হয়। এখানে প্রতিমা এক চালার উপর হয়। একটি সুপ্রাচীন বেলগাছে দেবীর বোধন হয়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত ১৩১ কিলো চালের নৈবেদ্য হয় এবং বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে দেবসরকার বংশের সমস্ত পরিবার-পরিজন দেশ-বিদেশ থেকে মালা গ্রামে আসেন। এবছরেও নবমীর সন্ধায় থাকছে কিছু বিশেষ চমক ৷একসময় সাতদিন ব্যাপী যাত্রাপালা ও কবিগান হত ৷ মহিলাদের মনোরঞ্জনের আলাদা ব্যবস্থা থাকত ভিতর মহলে। একসময় ইংরেজ সাহেবরা নিমন্ত্রিত থাকতেন এই দুর্গোৎসবে। চারণকবি মুকুন্দ দাস একসময় পালাগান করেছিলেন এই দেব সরকার বাড়িতে। এবছর এই পুজো ২৮১ তম বর্ষে পদার্পণ করল। এই বংশের নবম পুরুষ পর্যন্ত এই ঐতিহ্য বংশ পরম্পরায় বজায় রেখে চলেছে।মল্লিকপুরের চক্রবর্তী পরিবার এই দেবসরকার বংশের কুলোপুরোহিত ছিলেন ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে, বেলসিংহার মৈত্র পরিবার এই পুজোর পৌরহিত্য করেন। বর্তমানে, মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত চিত্রকর ৷ তিনিই বংশপরম্পরায় এখানে মূর্তি নির্মাণ করেন। আর ঢুলিদাররা বংশপরম্পরায় চাঁদপালার অদূরে সন্তোষপুর থেকে আসেন। প্রাচীন যুগ থেকেই গ্রামের সাধারণ মানুষ এই দুর্গোৎসবের আনন্দ আস্বাদন করতেন।
অন্য খবর দেখুন