Monday, September 1, 2025
HomeScrollAajke | মমতা বুঝিয়ে দিলেন ফাঁকা আওয়াজে তাঁকে নড়ানো যাবে না

Aajke | মমতা বুঝিয়ে দিলেন ফাঁকা আওয়াজে তাঁকে নড়ানো যাবে না

মাত্র ক’মাস আগে অনেকেরই মনে হয়েছিল সরকার টলমল করছে। না, আমি সেই ঘুরে দাঁড়ানোর আকঙ্ক্ষায় প্রতি মুহূর্তে এই সরকারের পতন চাওয়া বাম কিংবা চটজলদি মসনদে বসার খোয়াব দেখা শুভেন্দু-সুকান্তের কথা বলছিই না। এই সরকারের সমর্থক কর্মী বা মন্ত্রীদের কথা বলছি, যাঁরা জাহাজ কাত হয়েছে মনে হলেই ইদুরের মতো ছুটোছুটি করতে থাকেন, ফোন করেন ঘনঘন, সাংবাদিকদের কী বুঝছেন বলুন তো। হ্যাঁ, এরকম ফোন আমি ২০২১-এর নির্বাচনের আগে পেয়েছি, এরকম ফোন গত অগাস্ট মাসের ১৪ তারিখের পর থেকে বেশ ক’বার পেয়েছি, কী হচ্ছে বলুন তো? কী হবে বলুন তো। মানে বলতে চাইছি এমনকী তৃণমূল সমর্থক নেতা মন্ত্রীদেরও এক অংশ ভাবতে শুরু করেছিল এভরিথিং ইজ আউট অফ কন্ট্রোল, সব হাতের বাইরে চলে গেছে, এবারে কেবল বসে বসে দেখা। আমরা, হ্যাঁ, ব্যতিক্রমী আমরাই সেদিন বার বার খুব পরিষ্কার করে বলেছিলাম, এই আন্দোলন শুরুতেই নবকুমারের মতো পথ হারাইয়াছে, এই দিগভ্রষ্ট আন্দোলনেই সরকারের একটি কেশ উৎপাটন করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের বলা না বলায় কীই বা এসে যায়, হুমদো হুমদো মিডিয়া রোজ রোজ বহু মিথ্যেকে জুড়ে এক রোমহর্ষক কাহিনি নিয়ে হাজির, জানিস তো, আমি সোমা বলছি গোছের ব্যাপার। সে আন্দোলনে সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও উপাদানই ছিল না কিন্তু হ্যাঁ, যথেষ্ট উপাদান ছিল যা দিয়ে সরকারকে বহু বিষয়ে অন্তত ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়া যেত, কিন্তু রাজনৈতিক অবিমৃষ্যকারিতার জন্য সেসবের দিকেও এগোয়নি এই আন্দোলন। টিভিতে বাংলাদেশ দেখে আমাদের খোকাবাবুর মনে হয়েছিল এক অরাজনৈতিক ছাত্র সমাজকে দিয়ে উপড়ে ফেলে যাবে এই সরকারকে। আর সংগঠিত বামেরা ভাবলে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার আর জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে রেখে শিখণ্ডী সাজিয়ে লড়াইটা জমবে ভালো। দুই শিবিরের ঘটি হারিয়েছে, সেটাই আজ আমাদের বিষয় আজকে, মমতা বুঝিয়ে দিলেন ফাঁকা আওয়াজে তাঁকে নড়ানো যাবে না।

এক অভূতপূর্ব সমাবেশ দেখল কলকাতা, রাজ্যের সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালের ফ্যাকাল্টি, ডাক্তারবাবু আর জুনিয়র ডাক্তার, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০০ জনের এক জমায়েতের সামনে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, ছ’ মাসের মধ্যে ভোলবদল, একটা একটা ঘোষণা করছেন আর আক্ষরিক অর্থে উল্লাস শুনতে পাচ্ছিলাম আমরা, সেই সাংবাদিকেরা যাঁদের এক অংশও সেদিন প্রায় অবিচুয়ারি লিখে ফেলেছিল।

আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দুর বিরুদ্ধে শুভেন্দু তদন্ত করছেন

অনেকে বলছেন এটা ছিল এক ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক, কেবল মুখ্যমন্ত্রী বললেন অন্যরা শুনলেন, যদি ওনাদেরকেও বলতে দেওয়া হত…। তাঁরা জানেনই না যে এই বৈঠকের কমবেশি ৫০ দিন আগে টিম তৈরি হয়েছিল, ৪০ দিন ধরে সেই টিম বিভিন্ন হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে গেছেন, কথা বলেছেন, সেই ইনপুট নিয়ে সচিব লেবেলে আলোচনা হয়েছে, এবং তারপরে মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়গুলো এনে হাজির করলেন সব্বার সামনে। হ্যাঁ, মেদিনীপুরের জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতির পথে যাননি, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন সাসপেনশন তুলে নেওয়ার, মুখ্যমন্ত্রী জানালেন সাসপেনশন তুলে নেওয়া হচ্ছে। জানালেন বিভিন্ন স্তরে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাইনে বৃদ্ধির কথা। জানালেন মহিলাদের আলাদা হস্টেল তৈরির কথা। খতিয়ান দিলেন গত ১৫ বছরের, স্বাস্থ্য দফতরের উন্নয়নের খতিয়ান এবং শেষে সাবধানী বক্তব্য, অনেকটা হয়েছে, কিন্তু বাকিও আছে অনেকটা আপনাদের সাহায্য চাই। ছিল আরসালানের বিরিয়ানি আর বোতলের জল। খানিক দূরেই যখন এক বিপ্লবী পার্টির সম্মেলনে চিংড়ির মালাইকারি খাওয়ানো হচ্ছে তখন বেশ সতর্ক থেকেই সামান্য আয়োজনে বোঝালেন এভরিথিং ইজ আন্ডার কন্ট্রোল, সব আমার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। হ্যাঁ, এই সভা হয়ে উঠতেই পারত এক জয়োল্লাস, পারেননি আপনারা, নড়াতেও পারেননি। কিন্তু তার বদলে আপনাদের সঙ্গে চাই, আমরা আপনাদের সমস্ত কথা শুনতে রাজি আছি গোছের কথা বলার মধ্যে দিয়ে এক পরিষ্কার মেসেজ, উই আর ইন ফুল কন্ট্রোল, লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন স্ট্রাটেজিতে খেললেন? তাঁর ঘনিষ্ঠ উইকেট নড়বড় করছিল, তিনি যেদিন বুঝেছেন যে এটা স্রেফ একটা আন্দোলন নয়, এর পিছনে বেশ কিছু পাকা মাথা আছে। কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে হাসিনা ভাগাও আন্দোলন হতে সময় লাগেনি, প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের গতিপথ তিনি বুঝেছিলেন, আর সেইজন্যই অন্য পক্ষের ফাউল প্লেগুলো বড় হতে দিচ্ছিলেন, সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে বসে ছিলেন সঠিক বলটা তাঁর দিকে আসবে জানতেন, এল, তিনি বল পাঠিয়ে দিলেন তেকাঠির ভিতরে। শেষ দিনের কথা ভাবুন, উনি নিজে থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন, হাতে একতাড়া কাগজ, কর্মবিরতির নাম করে টাকা কামিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, চুপ করে বসে শুনলেন কিঞ্জল, অনিকেত, দেবাশিস, আসফাকুল্লারা, কিচ্ছু বলার ছিল না। হ্যাঁ, সেদিনেই তিনি পুরোটা তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কোন জাদুবলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছাত্র, সিভিল সোসাইটির এক বিরাট অংশের এতবড় এক আন্দোলন, উই ওয়ান্ট জাস্টিসকে অনায়াসে সামলে নিলেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।

এসব ক্ষেত্রে যা হওয়ার কালও তাই হয়েছে, দুপুরের সভার পরেই বিকেলে জুনিয়ার ডাক্তারদের এক নি-জার্ক রিঅ্যাকশন, কিছুই তো হয়নি, সরকার যা যা বলেছিলেন কিছুই করেননি। আমরা দাবি করেছিলাম বলেই সাসপেনশন উঠে গেছে। আমরা তো মাইনে বৃদ্ধির কথা বলিনি, আসলে আমরা এখনও জাস্টিস চাই। অবশ্য আর কীই বা বলতেন। কিন্তু একটু যদি খেয়াল করেন তাহলে শুনতে পাবেন এক ফাটা রেকর্ডের মতো ঘ্যানঘ্যানে এই কথাগুলো শোনার জন্য এখন আর কেউ বসে নেই, থাকার কথাও নয়।

 

Read More

Latest News