কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু (RG Kar Medical College) ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শুক্রবার কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের কোয়ার্টার থেকে বছর কুড়ির ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতা মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রী ছিলেন। তাঁর মা ওই হাসপাতালেই চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। ডিসি (নর্থ) গণেশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মৃত ছাত্রীর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রীর বাবা একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মী এবং বর্তমানে মুম্বইতে কর্মরত। ঘটনার সময় ওই ছাত্রী ঘরে একাই ছিলেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি তাঁর মাকে ফোন করেছিলেন। কোনও কারণে মা সেই ফোন ধরতে পারেননি। এরপর মেয়েকে বারবার ফোন করলেও কোনও সাড়া না মেলায় সন্দেহ দানা বাঁধে। দ্রুত কোয়ার্টারে ছুটে গিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়, তবে চিকিৎসকরা জানান, বহু আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: একই দিনে বইমেলা, সরস্বতী পুজো-পরম প্রাপ্তি চুটিয়ে উপভোগ ছাত্র ছাত্রীদের
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক অবস্থার বিষয়ে তদন্ত চলছে। সহপাঠী ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি তিনি চরম মানসিক চাপে ছিলেন। মৃত্যুর পিছনে ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা নাকি শিক্ষাগত চাপ কারণ, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, কারণ সেটিই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট করবে।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে কোনও সরাসরি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি, তবে কোনও ফাউল প্লে রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে মৃতার মোবাইল ফোন, কল রেকর্ড এবং অন্যান্য ডিজিটাল তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও, পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সমস্ত প্রমাণ খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে এই মৃত্যু নিয়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠীরা জানিয়েছেন, কলেজে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন এবং পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। যদিও পুলিশ আত্মহত্যার সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালালেও, অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাইছে না। পুলিশ আশা করছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রহস্যমৃত্যুর আসল কারণ স্পষ্ট হবে।
দেখুন আরও খবর: