ওয়েব ডেস্ক: দেশের গাড়ি ব্যবসার অন্ত্যেষ্টিসংগীত বাজতে চলেছে? ইলন মাস্কের ইলেকট্রেক ভেহিকেল ‘টেসলা’-কে (Tesla Controversy) ভারতে ডেকে নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে এমনই আশঙ্কা দানা বাঁধছে।
চলতি মাসেই মার্কিন সফর চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক হয় মাস্কের সঙ্গে। কী হয়েছে সেই সাক্ষাতে? মোটেই স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে মাস্কের গাড়ি কোম্পানি টেসলা-র এ দেশে কারখানা গড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা ধোঁয়াশা।
এ দেশের সরকারি নীতি অনুযায়ী দামি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে বিপুল কর চাপানো হয়, ১১০ শতাংশ। দেশে ওই ধরনের গাড়ি উৎপাদনে উৎসাহ দিতেই এই কর-কাঠামো, জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু সম্প্রতি সেই নীতিতে কয়েকটি পরিবর্তন এনেছেন মোদিজিরা। অনেক বলছেন, মাস্কের চাপেই আমদানি নীতিতে বদল এনেছে মোদি-শাহ-নির্মলারা। মাস্ক চাইছেন ভারতের ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার দখল করতে। গত বছরের মার্চে গৃহীত ভারত সরকারের নয়া নীতিতে বলা হয়েছে, কোন বিদেশি গাড়ি উৎপাদক কোম্পানি ভারতে এসে গাড়ি উৎপাদন করলে কাস্টমস ডিউটি দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ। তবে কারখানা গড়তে কয়েক বছর সময় নিতে পারে কোম্পানিটি।
আরও পড়ুন: নর্দমা সাফাইয়ে মানুষ নামানো নিষিদ্ধ, তাও কেন মৃত্যু? রাজ্যকে ‘সুপ্রিম প্রশ্ন’
কারখানা পুরোপুরি তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত বিদেশে উৎপন্ন গাড়ি ওই কম শুল্কেই আমদানি করতে পারবে সংস্থাটি। নীতিটি এমন ভাবেই সাজানো হয়েছে, যা মাস্কের পক্ষে যায়। এই বদলের ফলেই টেসলার মতো কয়েকটি গাড়ি উৎপাদক বহুজাতিক কোম্পানির ভারতে আসার পথ চওড়া হয়েছে।
ইলন মাস্কের টেসলা কোম্পানি ভারতে আসবে এহেন কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন। এখানে কারখানা গড়ে উৎপাদন শুরু করলে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে, সরকারি তরফে দাবি এটাই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কতজন টেসলার চাকরি হয়েছে? বিশ্বাস করুন, মাত্র ১৩ জনের। এদের কী কাজ? মূলত বিক্রিবাটা ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা। গাড়ি নেই, তাহলে বেচবে কী? এখানেই দানা বাঁধছে বড় ধোঁয়াশা। দুনিয়া জুড়ে মাস্কের কোম্পানির বানানো গাড়ি বিক্রি ইতিমধ্যেই অনেক কমে গেছে।
মূলত, আমেরিকায় গাড়ি বিক্রিতে টান পড়ায় এই অবস্থা। অনেকটাই দামি এসব রেডি টু রোল গাড়ি আমেরিকার গুদামগুলোতে পড়ে আছে। তেমনই অবস্থা জর্মানিতে টেসলার কারখানায় তৈরি গাড়ির ক্ষেত্রেও। সারা বিশ্বে টেসলার বিক্রি না হওয়া হাজার হাজার গাড়ি বেচবার একটা উর্বর দেশ হলো আমাদের ভারত। কারখানা গড়ব বলে, কারখানার বানাতে কয়েক বছর সময় লাগবে এই যুক্তি দেখিয়ে কম কাস্টমস ডিউটিতে বিদেশে তৈরি টেসলা গাড়ি এদেশে এনে বেচবার ছক কষেছেন মাস্ক। সম্ভবত এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছে ভারত সরকারও। টেসলা জানিয়েও দিয়েছে, আপাতত জার্মানিতে উৎপন্ন গাড়ি ভারতে এনে বিক্রি করবে তারা। সম্ভবত আগামী মাসগুলোতে এমন হাজার হাজার গাড়ি ভারতের বাজারে ঢুকবে। আর এখানেই প্রমাদ গুণছে এ দেশের গাড়ি উৎপাদক বড় বড় সংস্থাগুলি। এর ধাক্কাতেই টাটা মোটরস, মাহিন্দ্রা প্রভৃতির শেয়ার বাজারে দর পড়ছে। এমনিতেই ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে চিনের উন্নতমানের ইলেকট্রিক ভেহিকেলের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
এরপর টেলসার গাড়ি অল্প কাস্টমস ডিউটি খসিয়ে, ভবিষ্যতে কারখানা গড়ার গাজর ঝুলিয়ে ভারতের বাজার দখল করলে দুর্বল হয়ে পড়বে ভারতের গাড়ি শিল্প, যার ধাক্কা পড়তে পারে সামগ্রিক উৎপাদন শিল্পে। টেসলার কারখানা কবে হবে, কেউ জানে না; অন্য দেশে তৈরি, বিক্রি না হওয়া গাড়ি এ দেশের বাজারের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে ফেলতে চলেছে। মোদিজির সাধের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র অন্ত্যেষ্টিসংগীতও কি এই সঙ্গেই গাওয়া শুরু হয়ে গেল? দেশের উৎপাদনও বাড়ল না, শুল্ক কমিয়ে সরকারি কোষাগারেও ধাক্কা, একেই বলে আমও গেল ছালাও গেল?
দেখুন আরও খবর: