Friday, August 29, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | সইফের ঘরে বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম? সত্যিটা কী?

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | সইফের ঘরে বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম? সত্যিটা কী?

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। এইসব গল্পে অনেকবার নাকি শব্দটা ব্যবহার করতেই হবে, কারণ এক এক কাগজে, এক এক চ্যানেলে এক এক বিবরণী। কোনটা যে ঠিক তা ওপরওলাও কি জানেন? বাংলাদেশের এক্কেরে দক্ষিণের ঝালকাঠি জেলার রাজাবেরিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম সাজ্জাদ নাকি এক্কেরে উত্তরে ডাউকি নদী পার করে মেঘালয় দিয়ে ভারতে ঢুকে চলে আসেন নদিয়াতে। এই নাকিতে প্রথমেই সন্দেহ তো থাকবেই, বরিশাল থেকে নদিয়া আসার জন্য অমন ঘুরপথ কেনই বা ধরবে সে? আচ্ছা ধরে নিলাম সে ভারত ভ্রমণে বের হয়েছিল, তারপরে সে কিন্তু বাংলায় আর বেশিদিন থাকেনি, সে চলে গেল মুম্বই। তারপর সে নাকি নানান কাজ করেছে, আর টাকা পাঠিয়েছে ঘরে। শেষমেশ নাকি বড় দাঁও মারার জন্য সইফ আলি খানের ঘরে ঢুকে সইফ আলি খানকে নাকি ছুরিকাহত করে পালিয়ে যায়। তারপর তাকে নাকি ওই বান্দ্রা থেকে খানিক দূরে রাস্তার ধারে এক ঝোপেঝাড়ে শুয়ে থাকা অবস্থাতে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। সে নাকি বলেছে, হাঁ ম্যায়নে ইয়ে কাম কিয়া হ্যায়। কিন্তু গল্পটা এত সরল হলে তো ল্যাটাই চুকে যেত। ২০২৪ থেকে যে লোকটা মুম্বইতে ছিল সে সইফ আলি খানের ঘরে ঢুকে পড়বে না জেনেই? ভাগ্যিস শাহরুখের মন্নতে ঢুকে পড়েনি বা অমিতাভ বচ্চনের জলসাতে। সইফ আলি খান, যিনি বান্দ্রার সবথেকে পশ অঞ্চলে এক হাইরাইজের তিন কি চার কি পাঁচটা ফ্লোর নিয়ে থাকেন, সেই কমপ্লেক্সের প্রহরীরা নাকি ঘুমোচ্ছিল। বেশ, এই শরিফুল নাকি পাইপ বেয়ে উপরে উঠল সেই ১২/১৩/১৪ তলায়, তার আগের কোনও ঘরে যাওয়ার তার ইচ্ছেই হল না। সে তার মানে সইফ আলি খানের ঘরেই ঢুকবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। মানে ওই এলাকায় ওই কমপ্লেক্সে বাকি আর যাঁরা থাকেন তাঁরা তো ভিখিরি নন। তাঁরাও কোটি কোটিপতি।

তো এই ছেলেটি পাইপ বেয়ে তিন/চার/পাঁচ/ ছয় তলায় গেল না, তার মগডালে ওঠার শখ হয়েছিল নাকি? সব্বাই জানে যে চুরির পরে ফেরার রুটটাও ভেবে রাখে অপরাধী, এ সবচেয়ে শক্ত জায়গাটা বেছে নিল বা ওর ইচ্ছেই ছিল ওই সইফ আলি খানের ঘরে চুরি করার। তো সে ঢুকল আর অমনি নাকি এক ন্যানি তাকে দেখে ফেলল, সে তখন নাকি ছুরি বের করে বলল, এক কড়োর দে দো, না হলে… এক কড়োর দে দো শুনেই নাকি ভয় পেয়ে ছোট পুত্র জেহ কাঁদতে কাঁদতে অন্য ঘরে চলে গেল, আর ওই সময়েই সইফ আলি খান নাকি এসে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই পরপর ছুরি মেরে সেই চোর মানে ঝালাকাটি জেলার রাজাবেরিয়া গ্রামের শরিফুল পালাল। ছুরিটা নাকি তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল, এক টুকরো নাকি ঘরেই পড়ে ছিল, এক টুকরো নাকি বিঁধেছিল পিঠে যা নিয়েই নাকি সইফ আলি খান অটোতে চেপে হাসপাতালে চলে গেলেন আর কেবল হ্যান্ডেলটা হাতে নিয়ে সেই শরিফুল এসি ডাক্ট দিয়ে পাইপ বেয়ে নেমে এল। এর মধ্যে সইফ আলি খান নেমেছেন, তাঁর বাড়ির লোকজন নেমেছেন, অটো ডাকা হয়েছে, কিন্তু সেই শরিফুল টুক করে বেরিয়ে গেল, সিকিউরিটি গার্ডেরা কি তখনও ঘুমোচ্ছিলেন? এবং তারপরে লীলাবতী হাসপাতালের বাইরে এসে অটো দাঁড়াতেই, সইফ আলি খান নেমেই ঘোষণা দিলেন আমি সইফ আলি খান, স্ট্রেচার আনো, তারপরে স্ট্রেচারে চেপে শিরদাঁড়াতে ছুরি নিয়ে তিনি হাসপাতালে ঢুকলেন এবং এই পুরো সময়ে তাঁর সঙ্গে অটোতে স্ত্রী নয়, কাজের লোকজন নয়, কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি নয়, ছিলেন কে? ওনার সঙ্গে নাকি ছিলেন সইফ করিনার ৮ বছরের ছেলে তৈমুর আলি খান। গল্প এখানেই শেষ নয়, দুটো আরও তথ্য জানা গেছে। ১) ওই ছুরির ভাঙা হ্যান্ডেলটা বান্দ্রা স্টেশনের পাশে এক লেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল ওই অপরাধী শরিফুল, সেটা খুঁজে পাওয়া গেছে, এই দীর্ঘ সময়ে সে কেন ছুরির হ্যান্ডেলটা হাতে রেখে দিয়েছিল? কেউ জানে না। ২) তার মোবাইলে ওই সিসিটিভি ফুটেজের স্টিল ছবি নাকি সেভ করা ছিল? কেন? ওই ছবিটা সে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার করবে বলে রেখে দিয়েছিল? এই এত্ত নাকির গল্প আছে যার মধ্যে থেকে সত্যিটা বাছা প্রায় অসম্ভব বা অন্য ভাষায় বলতে গেলে মুম্বইতে গল্প বানানোর লোকজন কি কম পড়েছে?

আরও পড়ূন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | বিজেপি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়?

এবার আসুন অন্যদিক থেকেই দেখা যাক গোটা বিষয়টাকে। যদি এসব সত্যিই হয়, তাহলে মুম্বইয়ের বান্দ্রা অঞ্চলের টপমোস্ট পশ এলাকা কতটা সুরক্ষিত। একটি ছেলে মাত্র মাস আট নয় মুম্বইয়ে থেকেই অমন এক পশ এলাকায় হাই সিকিউরিটিওলা বাড়িতে ঢোকার প্ল্যান করল। যাঁরা বলছেন যে কোনও ঘরে ঢুকতে গিয়ে সে সইফ আলি খানের ঘরে ঢুকে পড়েছিল, তাঁদের আবার মনে করিয়ে দিই যে সইফ আলি খান কমপ্লেক্সের সবথেকে উপরের তলায় থাকেন, যদি কেউ ১২/১৩/১৪ তলা পর্যন্ত পাইপ বেয়ে এসি ডাক্ট দিয়ে যায়, তাহলে সে সবচেয়ে উপরের তলা বেছে নিতে পারে না। তবুও যদি যায় তাহলে একাই এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেবে কি? নাকি অনেক সহজ গল্পটা হল কেউ তাকে প্রায় ডেকে এনেছে, তাকে জানানো হয়েছে আসুন, যা চাইছেন তাই পাবেন, কাজেই কেউ মানে সিকিউরিটি গার্ড ইত্যাদিরা তাকে বাধা দেয়নি, এরপরে সে বেরিয়ে গেছে, তখনও কেউ বাধা দেয়নি। সবমিলিয়ে কোনও এক অজানা কারণে এক গট আপ গেম, যার হদিশ গোপন রেখেই এক বলির পাঁঠা খুঁজে নেওয়া হল। আর ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশের এই গপ্পো লোকে খাবে ভালো, ওপার বাংলাতে ভারত-বিদ্বেষী আছে, এপার বাংলা বা ভারতে বাংলাদেশ বিদ্বেষীর সংখ্যা কম নাকি? বিজেপির মহান নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় তো সাতসকালে কেউ চিঁড়ে খেলেই তাকে বাংলাদেশি বলে বুঝে ফেলেন। যেমনটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী লুঙ্গি পরলেই চিনে ফেলেন এক ভয়ঙ্কর দাঙ্গাবাজ বা উগ্রপন্থী হিসেবে। অন্যদিকটা হল এই ঘটনা যাই হয়ে থাকুক, শুরু হয়ে গেছে তার রাজনৈতিকীকরণ, এই ঘটনা এবার খুব শিগগির আমরা শুনতে পাব এ বঙ্গের বিজেপি নেতাদের মুখে, আপাতত নিজেদের মধ্যে শুভেন্দু–সুকান্ত কোন্দল থামলেই এই ঘটনা তাঁদের মুখেই আমরা শুনব। এই ঘটনা হয়ে উঠবে রাজনৈতিক। আগেভাগে বলে রাখলাম, মিলিয়ে নেবেন।

Read More

Latest News