skip to content
Sunday, February 16, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | বিজেপি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়?
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | বিজেপি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়?

ইলিশকে বাঙালি বলে জলের রুপোলি শস্য

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। কলকাতার ডেমোগ্রাফি বদলাচ্ছে, হু হু করে বদলাচ্ছে। মধ্য কলকাতায় গেলে নিজভূমে পরবাসী কথাটা মনে পড়তে বাধ্য। এক্কেবারে বেহালা, সেই আটচালার কাছাকাছি যেখানে বসে সুতানুটি, কলকাতা আর গোবিন্দপুর কিনে নিলেন চার্নক সাহেব, শহর পত্তনের শুরুয়াত হল, সেই বেহালাতেই এক হাউজিং কমপ্লেক্সে দুর্গাপুজোর সময়ে চারদিনই নিরামিষ খাওয়া হয়, দক্ষিণ কলকাতার বিশাল হাইরাইজগুলোর হালও তাই। অবশ্য এতে আপত্তি করার জায়গাও তো নেই, সমাজ রাষ্ট্র চলছে ডারউইনের থিওরি মেনে, সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট, দেড় দুই আড়াই কোটি দিয়ে ফ্ল্যাটবাড়ি দু’ একজন মহানায়ক বা মহানায়িকাকে বাদ দিলে যাঁরা কিনতে পারেন তাঁরা নবরাত্রি, দিওয়ালি, ধোকলা, পনির আর পান পরাগ কালচারের মানুষজন। কিন্তু সমস্যা হল যখন এনারা বাজারে গিয়ে খলশে, পুঁটি, মাগুর ইলিশ, চিংড়ির গন্ধ নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন, বিরক্তির পর এক গাল পানের পিক ফেলেই বলেন এ তো আনহাইজিনিক আছে। আমরা তো শুদ্ধ শাকাহারী, আমরাও তো বাজারে আসি। না স্যর, আপনারা বাজারে আসেন না, যে বাজার সরকার আপনাদের বাজার করে সে নিতান্তই মাছখেকো বাঙালি। রাগ হচ্ছে, হচ্ছে কারণ গুর্জরবাসী এক অর্বাচীন বাঙালির মাছ খাওয়া নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছেন। সে কথায় আসব, তার আগে মাছ নিয়ে কিছু কথা।

মাছ মানেই আমিষ? গুজু মেড়ো খোট্টা উড়ে ইত্যাদি অপশব্দ ব্যবহার না করেও বলা যায়, আমিষ নিরামিষ খাবারের বিভাজন যাঁরা করেছেন, তাঁরা হিন্দু শাস্ত্রপুরাণ তেমনভাবে পড়েননি, এবং কে না জানে মূর্খদের যে কোনও বিষয়ে কথা বলার এক সহজাত প্রবণতা থাকে। আমাদের অসংখ্য পুরাণের অন্যতম বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা আছে, ইলিশ খলিশ্চৈব ভেটকি মদগুর এব চ। রোহিতো মৎস্যরাজেন্দ্র পঞ্চমৎস্য নিরামিষাঃ। মানে ইলিশ, খলশে, ভেটকি, মাগুর এবং রুই মাছ নিরামিষ গোত্রেই পড়ে। অনেকে আবার এই শ্লোকের আরও গূঢ় অর্থ বার করে বলেন, এখানে ইলিশ গোত্রের মাছ, মানে মোহনার মাছ, ভেটকি মানে ভরা সমুদ্রের মাছ, মাগুর মানে জিওল মাছ, খলশে মানে ছোট চুনো মাছ আর রুই মানে কার্প গোত্রের, রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। তার মানে বিরাট মৎস্যসম্ভার আসলে নিরামিষ বলেই জানানো হয়েছে। কী কাণ্ড বলুন তো, এই পুরাণ অনুযায়ী এই বাংলার ৫০-৬০ শতাংশ মানুষ নিরামিষভোজী। আজ্ঞে হ্যাঁ কেবল রামচরিত মানস আর পান পরাগ খেলে হবে?

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | শুভেন্দু সংগঠন? শুভেন্দু নির্বাচন? 

এবারে আসুন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর মিনাদেবী পুরোহিত যে কথা বলেছেন তা নিয়েও দুটো কথা বলা যাক। উনি বলেছেন মাছের বাজারে খোলা মাছ, খুব আনহাইজেনিক, এসব ঢাকতে হবে, মানে সুন্দর কাচের শো কেসে মাছ থাকবে, বরফ ঠান্ডা কাঁচের দেওয়ালের ওপারে বিমর্ষ চোখে মাছেরা থরে থরে শুয়ে, স্পেনার্সে গিয়ে দেখুন। সেসব ইলিশে জৌলুস নেই, সেসব চিংড়ি যেন মর্গে শুয়ে থাকা প্রেমিকা, দেখলে কান্না পায়। এবং দাম, বাজারের থেকে কিছু না হলেও ১৫–২০ শতাংশ বেশি। কেন? কারণ ওই যে, ঠান্ডা ঘরে মাছের বিছানা। কিন্তু হাইজিনিক? তাই নাকি? মিনাদেবী পুরোহিত ওই জয় হনুমান কৃপা গুণসাগরের বাইরে যদি একটু পড়াশুনো করতেন তাহলে জানতে পারতেন যে সেখানেও আরও বেশি আনহাইজিনিক হওয়ার সম্ভাবনা বিরাট, হ্যাঁ, ইউরোপ আমেরিকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে মাছ কেনেন না বহু মানুষ, সকালে মাছ নিয়ে ঠেলায় করে বসে যারা সেখান থেকে কেনেন। হ্যাঁ, তাঁদের ওই নিরামিষ আমিষ বাতিক নেই। এটা ঠিক। আসলে ঝেড়ে কাশুন, আপনি এই মাছেভাতে বাঙালির, কিছু না থাকলেও ১০০ টাকার চুনো মাছেই পেট ভরানো বাঙালিকে আপনাদের বিষাক্ত পাঠ পড়াতে চাইছেন। এ বাংলায় শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।

এ বাংলায় নতুন বউ যখন শ্বশুরবাড়িতে ঢোকে, তখন তাকে বরণ করা হয়, তার বাঁ হাতে দেওয়া হয় একটা জান্ত ল্যাটা মাছ, নতুন বউকে সেই ল্যাটা মাছ ছেড়ে দিতে হবে বাড়ির লাগোয়া পুকুরে, এ আমাদের বাঙালি বিয়ের রীতি। শহরে পুকুর নেই, তাই এক গামলা জলে সেই ল্যাটা মাছ খেলা করে। বাঙালি বিয়ের গায়ে হলুদে পাত্র বাড়ির থেকে আসে হলুদ মাখানো রুই মাছ, সেই মাছ রান্না হয়, মুড়ো থাকে কনের জন্য, গুর্জর ভাঁড় এই সামাজিকতা জানেন না। আমাদের বাড়ির সন্তানদের ঘুমপাড়ানোর ছড়া “আয় আয় চাঁদ মামা টি দিয়ে যা, ধান ভানলে কুঁড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব, চাঁদমামা খোকার কপালে টিপ দিয়ে যা”, কিংবা “খোকা যাবে মাছ ধরতে ক্ষীরনদীর কুলে, ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙে মাছ নিয়ে গেল চিলে।” আমাদের লখিন্দর বেহুলার বিয়ের মেনুতে থাকে ১৫ পদের মাছ, হ্যাঁ ইলিশও ছিল। আমাদের ছেড়ে দিন, ওই গুজরাটেই আছে সিন্ধিরা, তাদের বাড়িতে জামাই এলে ইলিশ মাছ মাস্ট। শেষ করি এক তথ্য দিয়ে, গুজরাটের সামান্য যে মোহনা অঞ্চল আছে সেখানেও ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, গুজরাটে স্ত্রী ইলিশকে বলে মদেন, আর পুরুষ ইলিশের নাম পালওয়া। অমন বিস্বাদ ইলিশ দুনিয়াতে আর কোথাও নেই। প্রকৃতিও তাঁর বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা থেকেই গুর্জরবাসীদের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করেছেন, যে ইলিশকে বাঙালি বলে জলের রুপোলি শস্য। বুদ্ধদেব বসু লিখছেন,

“রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে
জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি রাশি ইলিশের শব
নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।
তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে
ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার
সরস সর্ষের ঝাঁজে। এল বর্ষা, ইলিশ উৎসব।”

এই মাছেভাতে বাঙালির মাছ খাওয়া নিয়ে একটা অসংলগ্ন বাক্য, কোনও পাগলের প্রলাপ, কোনও শয়তানি বয়ান আমরা সহ্য করব না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Bangladesh | মাথায় হাত পড়বে ইউনুসের? আবার বাংলাদেশের অনুদান বাতিল করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র!
00:00
Video thumbnail
Modi-Trump | হোয়াইট হাউসে মোদি-ট্রাম্প বৈঠক, কী সুবিধা পেতে চলেছে ভারত? দেখুন সরাসরি
06:24:45
Video thumbnail
Mohan Bhagwat | RSS | বর্ধমানে RSS প্রধান মোহন ভাগবতের সভা, কেমন চলছে প্রস্তুতি? দেখুন সরাসরি
04:35:50
Video thumbnail
Ghatal Master Plan| Dev | ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিশেষ বৈঠক, উপস্থিত থাকবেন সাংসদ দেব,দেখুন LIVE
02:35:35
Video thumbnail
Mohan Bhagwat | RSS | বর্ধমানে RSS প্রধান মোহন ভগবতের সভা, দেখুন সরাসরি
03:22:03
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সেবাশ্রয় প্রকল্পে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসায় ২ শিশু
01:50
Video thumbnail
Fake Lottery | মমতা, অভিষেকের ছবি দিয়ে লটারির কুপন বিক্রি, আটক এক ফটোকপির দোকানের মালিক
03:38
Video thumbnail
Top News | দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে চার মহিলা মুখ নিয়ে জল্পনা
07:15
Video thumbnail
Weather Update | বুধবার থেকে বৃষ্টি! টানা ২ দিন বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে? কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বুধবার থেকে বৃষ্টি! টানা ২ দিন বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে? কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
01:51