Friday, November 14, 2025
HomeScrollFourth Pillar | কী হবে বিহার ভোটের ফলাফল? তেজস্বী না কি নীতীশ?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | কী হবে বিহার ভোটের ফলাফল? তেজস্বী না কি নীতীশ?

এক্সিট পোলের হিসেব কিন্তু বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে বিহারের মাটিতে

বিহার ভোট (Bihar Assembly Election 2025)। গোলমাল শুরু হয়েছিল গোড়া থেকেই। SIR নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল বিহারের রাজনীতির ময়দানে। একদিকে রাহুল তেজস্বীর ভোটার অধিকার যাত্রা, অন্যদিকে নীতীশ কুমারের নতুন নতুন আবদার- সব মিলিয়ে বিজেপির কপালে যে ঘাম দেখা দিয়েছিল তাতে কোনও ভুল নেই। এখন কথা এই, ভোটের হাওয়া ঠান্ডা হয়ে বিজেপির ঘাম জুড়িয়ে দেবে কি? ফের বিহারের মসনদে ফিরবে এনডিএ? বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল কিন্তু সেকথাই বলছে। বলছে, এবারের বিহার ভোটে মাতিয়ে দেবে এনডিএ। সবকিছু ঠিক থাকলে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসনে বসতে চলেছেন এনডিএ শরিক এবং জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষার উপর ঠিক কতটা ভরসা করা যায়? কেন না, এতো বারবারই দেখা গেছে যে, কখনও এক্সিট পোলের হিসেব মিলে যায়, কখনও আবার পুরোটাই গড়মিল। আর বিহারের কথা যদি বলি তাহলে বলতেই হবে যে, এক্সিট পোলের হিসেব কিন্তু বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে বিহারের মাটিতে। ২০১৫, ২০২০ সালে ভোটের পর এক্সিট পোলের ফলাফল ঠিক কতটা মিলেছিল বিহারে?

২০১৫তে এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বিহারে। বলেছিল, লালু-নীতীশের জোট পাবে ১২৩টি আসন। আর তার ঘাড়েই নিশ্বাস ফেলবে এনডিএ। তারা পাবে ১১৪টা আসন। কিন্তু রেজাল্ট বেরোনোর পর দেখা গেল ১৭৮টা আসন পেয়ে মালামাল করেছে লালু-নীতীশ জোট, অন্যদিকে এনডিএ আটকে গিয়েছে মাত্র ৫৮ আসনে। এবার আসি ২০২০-র কথায়। ২০২০ সালে, ১১টা সংস্থার এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিহারে পালাবদল হতে চলেছে। ১২৫টি আসন পেয়ে জিততে চলেছে মহাগঠবন্ধন। ১০৮টি আসন জুটতে পারে এনডিএর। কিন্তু রেজাল্ট হল ঠিক উল্টো। এনডিএর দখলে ১২৫ আসন, আর ১১০ আসন পেল মহাগঠবন্ধন। ২৬-এর বিহার ভোটের পর এক্সিট পোল বলছে, নিশ্চিতভাবে হারতে চলেছে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন। শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস প্রায় মুছে গিয়েছে বিহার ভোটের ময়দানে। ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে মোদি-নীতীশের এনডিএ। কিন্তু হবেই কী এরকম?

এনডিএ ক্ষমতায় ফিরছে বিহারে এমনটাই দাবি করছে এক্সিট পোল। শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যের ২৪৩টি আসনে ভোট গোনা শুরু হবে। ইতিমধ্যে একটি বাদে বাকি সব এক্সিট পোলের রিপোর্ট কিন্তু বলছে ক্ষমতায় ফিরছেন নীতীশ, ক্ষমতায় ফিরছে এনডিএ। একটি মাত্র সমীক্ষায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা বলা হলেও এগিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু বিদায়ী শাসক এনডিএকেই। কিন্তু, এসব নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না তেজস্বী যাদব। গত এক দশকে বিহারের ভোটে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল যে পুরো উল্টে গিয়েছে সেকথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন তেজস্বী যাদব। তেজস্বী আরও বলেছেন, বাড়তি ভোটের কথা। তার দাবি, এটাই সবথেকে বড় ইস্যু হতে চলেছে ভোটের ফলাফলে।

যুক্তি আছে একথার, কেন না এবার বিহার ভোটে ৭৬ লক্ষ বাড়তি ভোট পড়েছে যার সিংহভাগই মহিলা ভোট। এবারের বিহার ভোটে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোটদানের হার প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। তেজস্বীর দাবি, মহিলাদের জন্য যেসব আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার দল আরজেডি ভোটে নেমেছিল, তার জন্যই ওই ৭৬ লক্ষ বাড়তি ভোট হাওয়া দেবে আরজেডির পালে। কিন্তু বিহারের মহিলা ভোটারদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার কথা কি শুধু আরজেডিই বলেছিল? একমাত্র আরজেডিই কী বলেছিল মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা? তা তো নয়, বিহারের মহিলা ভোটারদের জন্য একের পর এক প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন তো নীতীশও। কী হবে তার?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সারা দুনিয়ায় ভারত কেন একলা? ক্রমশ একলা হয়ে পড়ছে?

আগেকার হিসেব ধরলে একথা পরিস্কার বোঝা যাবে যে, গত তিনদশক ধরে মহিলা ভোটাররাই কিন্তু বিহারের ভবিষ্যত রচনা করে আসছে। নারীশক্তির জয়জয়কার এখানে। ইয়া দেবী সর্বভূতেষু ভোটার রূপেণ সংস্থিতা! এই ভোটদেবীর আশীর্বাদ কিন্তু নীতীশকুমারের উপর ঝরে পড়েছিল। সত্যিটা হল মহিলা ভোটের হাওয়াতেই পাল তুলে দিয়েছিল নীতীশকুমারের সরকার। এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তার একটা বড় কারণ হল বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন নীতীশকুমার। তেজস্বী কিন্তু তার ভোটের ইশতেহারে জানিয়েছেন ক্ষমতায় এলে মদ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করবে তার সরকার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে মদ ব্ল্যাকে বিক্রি হয় এবং সরকার তার প্রাপ্য ট্যাক্স পায় না। কিন্তু বিহারের মহিলা ভোটাররা কি ট্যাক্সের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্তকে মানতে রাজি আছেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও একটু দেরি আছে। তার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি, বিহারে দু-দফায় মোট ভোট পড়েছে ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৫৮টি। ভোটদানের হার ৬৬.৯১ শতাংশ। এর মধ্যে মহিলা ভোটদাতা হলেন ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৯১ জন। অর্থাৎ মোট মহিলা ভোটার যতজন ছিলেন তাদের মধ্যে ৭১ .৬ শতাংশই ভোট দিয়েছেন। সেখানে মোট পুরুষ ভোটদাতা ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৬৬ জন। অর্থাত মোট পুরুষ ভোটারের ৬২.৮ শতাংশ অংশগ্রহণ করেছেন বিহার ভোটে।

বিহার ভোটে মহিলা ভোটারদের এই জয়জয়কারই কিন্তু গত তিন দশকের ট্রেন্ড। সেকথা মাথায় রেখেই রাজ্যে জীবিকা দিদির ভাতা বাড়ানো এবং বীমা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেতার আশা করছে মহাগঠবন্ধন। অন্যদিকে ভোট ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগেই বিহারের প্রায় ১০ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছে নীতীশের সরকার। কীসের উপর ভরসা রাখবেন বিহারের মহিলারা, নগদ নারায়ণ না কি নতুন ভবিষ্যত? পুরুষ ভোটারদের রায়ই বা কোনদিকে? জানা যাবে রাত পোহালেই।

Read More

Latest News